Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeসম্পাদকীয়আমেরিকায় বাংলাদেশের সেনাপ্রধান : ইন্দোপ্যাসিফিক সম্পর্কে নতুন আলোড়ন

আমেরিকায় বাংলাদেশের সেনাপ্রধান : ইন্দোপ্যাসিফিক সম্পর্কে নতুন আলোড়ন

আবু জাফর মাহমুদ :  বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামানকে আমেরিকা নিমন্ত্রণ করে এনেছে। এগারো দিনের এই সফরে তিনি কানাডায়ও যাবেন। যে সময় কানাডা এবং ভারতের সম্পর্কে উত্তেজনার গতিতে হাওয়া লেগেছে।

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংগরাজ্য রাজ্য পাঞ্জাব স্বাধীন রাষ্ট্র করার আন্দোলনের একজন স্বনামধন্য নেতাকে কানাডায় হত্যা করার পর এই দু-দেশের মধ্যে ইতিপূর্বে বিতর্ক ছড়িয়েছিল।কানাডা তাদের নাগরিক হত্যায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং(র)কে দায়ী করেছে।

ইন্দো-প্যাসিফিকে পরাশক্তি আমেরিকার শক্তিধর অবস্থান নেয়ার ষ্ট্র‍্যাটেজিক সিদ্ধান্তে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ রাশিয়া মনিটর করা সহজতর হবে।

বৃটেনের প্রত্যক্ষ উপনিবেশ ভারতবর্ষকে দুভাগে বিভক্ত করে সম্পর্কের নতুন রূপান্তর ঘটানোর সময় থেকে ভারত ততকালীন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের সাথে ঘনিষ্ঠতা নেয়। পাকিস্তান চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক গড়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। পরবর্তীতে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের পতনের প্রক্রিয়ায় অনেক স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান হবার ফলে সমাজতান্ত্রিক আদর্শিক ইউনিয়নের কার্যকারিতা গুরুত্ব হারায় ব্যাপকহারে।

রাশিয়া তাই পরাশক্তির মর্যাদাশুণ্য এক দারিদ্রপীড়িত রাষ্ট্রের পরিচয়ে নেমে আসে।দীর্ঘদিনের লেনদেন এবং কৌশলগত বিবেচনায় ভারত রাশিয়ার সাথে মিত্রতা অব্যাহত রেখেছে ঠিকই প্রকাশ্যে আমেরিকার মিত্র পাকিস্তানের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে শরণাপন্ন হয় আমেরিকার দুয়ারে।

একক এই পরাশক্তির আস্থা লাভের লক্ষ্যে তলে তলে ইজরায়েল বলয়ের মধ্যস্থতা কাজে লাগায় ব্যাপকভিত্তিতে।এতে ভারতের সুবিধা প্রাপ্তি প্রচুর বৃদ্ধি পায় আমেরিকার সুনজর পেতে। এসময়  ভারত একই সময়ে আমেরিকার কর্পোরেট গ্রুপগুলোর মধ্যে সম্পর্কে জড়ায় এবং নিজদেশে বেড়ে ওঠা কর্পোরেটগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়ে ফায়দা নেয়ার পথ অগ্রসর করে।

সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের অভ্যন্তরে কম্যুনিস্ট পার্টি যেভাবে পুজিবাদী ধারার বিরোধিতার দোহাই দিয়ে জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধি করে।নিষ্ঠুর দমনের তান্ডব চালিয়ে স্বৈরাচারী দু:শাসন অব্যাহত রাখায় বঞ্চিত ও বিক্ষুদ্ধ জনতা কম্যুনিস্ট শাসন নীতি উপড়ে ফেলে দেয়।ভারতেও পাঞ্জাব, কাস্মীর, সিকিম, উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭রাজ্য, হায়দরাবাদ সহ অনেক অঞ্চল সহ জাতি গোষ্ঠীর ক্ষোভ ধূমায়িত হয়ে আসছে ভারতে।প্রতিবেশী বাংলাদেশকে নিজেদের রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করার অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিরক্ষা পলিসি ভারতের।

বাংলাদেশ ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কৌশলগত সামরিক-রাজনৈতিক,অর্থনৈতিকও  বাণিজ্যিক আধিপত্য বজায় রাখার নেটওয়ার্ক সহ নিজেদের সৈন্যশক্তি নিয়ে এবছরের ৫ই আগষ্ট বাংলাদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ গুটিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য করতে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয় পাকিস্তান ও ভারত। আমেরিকা নিজের স্বার্থগত লক্ষ্যের সামনে ভারতের বিজেপি সরকারের ব্যর্থ প্রতিরক্ষার খেসারত দেবার জন্যে নিজের দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়।

বাংলাদেশী প্রতিক্রিয়ার পথে ভারতের ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের নীতিগত পরাজয়ে ন্যায়ের পক্ষে তার বিশ্ব মুরুব্বীর মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখে। মিত্রদেশ ভারতের পক্ষে জড়ানো থেকে বিরত থাকে।ভারত সরকার এবং তাদের প্রতিরক্ষাবিষয়ক নিয়ন্ত্রকদেরকে সতর্ক করে আসছে।বরঞ্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার পথে সহায়তা দিয়েছে।

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার বিবেচনায় আমেরিকার এই ভূমিকার প্রশংসা করেছে অঞ্চলের সব দেশ ও শক্তি।ভারতও আমেরিকার অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখেনা।

প্রতিরক্ষা এবং কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে বাংলাদেশের বিষয়ে আমেরিকার নয়া ষ্ট্র‍্যাটেজিক অবস্থানের গতি প্রকৃতি অগ্রাধিকারের কাতারে বিবেচিত। ৫ই নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। যাতে ভবিষ্যৎ পথের আলামত উঠবে ফুটে। জেনারেল ওয়াকার উজ্জামানের এই সময়েই আমেরিকার নিমন্ত্রণ এবং উষ্ণ হ্যান্ডশেক বাংলাদেশের গুরুত্বকে নিকট-অতীতের সম্পূর্ণ বিপরীতে তুলে ধরছে এই বিশ্ব পরাশক্তি।তারই হাত ধরে সমৃদ্ধি ও মর্যাদার উচ্চ শিখরেই প্রত্যয়দীপ্ত দৃঢ়তায় ছুটে চলেছে বাংলাদেশ।

•⁠  ⁠স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments