Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকআরও বেশি অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী ডাঙ্কি রুটে আমেরিকায়

আরও বেশি অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী ডাঙ্কি রুটে আমেরিকায়

জয় বাংলাদেশ: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শহরগুলোতে অসংখ্য বিলবোর্ডে সয়লাব। এসব বিলবোর্ডে অন্যরকম ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত । সাইনবোর্ডগুলোতে লেখা, ‘চলো আমেরিকা যাই।’

বিলবোর্ডের সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া ইমিগ্রেশন এজেন্টরা যেন শহরগুলোর দ্রুত বর্ধমান অভিবাসন ব্যবসার মূর্ত প্রতীক। এমন চিত্রের সত্যতা মেলে তথ্য-উপাত্তেও। গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী , যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ভারতীয়দের অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে অবৈধ ভারতীয়ের সংখ্যা আনুমানিক ৮ লাখেরও বেশি। ল্যাটিন আমেরিকার বাইরে এই তালিকার শীর্ষ পাঁচে থাকা একমাত্র দেশ ভারত। মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এজেন্টদের দেয়া তথ্য বলছে, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর সীমান্তে যে প্রায় ২০,০০০ অভিবাসীদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে তারা তাদের ৬০ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক। যা গত বছরের তুলনায় ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে কেন এই অবৈধ অভিবাসন সেটি এখনও নিশ্চিত নন এজেন্টরা।

ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে। এসব অভিবাসীরা সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তাদের অধিকাংশই নিজেদের জমি বিক্রি করে এই যাত্রার খরচ বহন করে। মাথাপিছু পরিবারগুলো ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করে। তারা আশা করে আমেরিকায় কাজ করলে তারা তিনগুণ বেশি মজুরি পাবে, তাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ তৈরি হবে এবং বিয়ের বাজারে তাদের ছেলেদের দাম ও কদর বাড়াবে।

ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজ প্রোগ্রামের পরিচালক পাবলো বোস বলেন, কেন ভারতীয় অভিবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তার কারণ বিভিন্ন হতে পারে এবং এটি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অভিবাসীদের থেকে আলাদা। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি সাধারণত সহিংসতা, সরকারী দমন-পীড়ন এবং সংগঠিত অপরাধ থেকে পালাচ্ছে। এই কারণেই গত ২০২৩ সালে মার্কিন দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ সীমান্ত পারাপার বেড়েছিল। আর গেল বছরের ডিসেম্বরে, সিবিপি কর্মকর্তারা অবৈধ অভিবাসীদের সাথে প্রায় ৩৭১,০০০ সাক্ষাৎকার রিপোর্ট করেছেন, যা এরই মধ্যে সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন , কানাডার সীমান্ত থেকে আধা ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত ক্লিন্টন কাউন্টিতে একটি ট্যাক্সি মিনিভ্যানে ভারতীয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের একের পর দল আসছে । সীমান্ত পারি দিয়ে তাদের এই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাহায্য করছে এক দল দালাল। প্রবেশমাত্রই গাড়িগুলো অভিবাসী প্রত্যাশীদের নিউ ইয়র্ক সিটিতে দক্ষিণে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করছে ।

দালালদের একজন ভারতীয় ২০ বছর বয়সী শিবাম জানালেন, যখন আমরা খবর পাই সাথে সাথে গাড়ি রেডি রাখি নিউইয়র্কের অন্য শহরে নিয়ে যাবার জন্য এসব অভিবাসীদের। “মানুষ আসছে, আমরা তাদের সাহায্য করছি।”
আর এজন্য ব্যবসা বেড়ে গেছে আমাদের কমিউনিটির । শিবামের মতে, কানাডার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ প্রবেশ বাড়ছে বেশি যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিরব।

এই সীমান্তে যারা অভিবাসীদের অবৈধ অভিবাসনে সাহায্য করছেন সেসব দালাল জানালেন, কানাডা সীমান্তে দূর্গম বনের ভেতর দিয়ে হেটেঁ আসতে হয় দীর্ঘ সময়। অনেক গাছ এবং ঝোপঝাড় ছিল এবং বৃষ্টি হওয়ার কারণে বনটি কাদা দিয়ে বেশিরভাগ সময় পূর্ণ থাকে যা মৃত্যুর ঝুকিঁ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে, কানাডার মাধ্যমে আসা অভিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক। জুন মাসে, এখানে ভারতীয়দের দ্বারা অবৈধ পারাপারের সংখ্যা সর্বোচ্চে পৌঁছেছে, প্রায় ৩,৬০০ জন সীমান্তের বাইরে পারাপার করতে চেষ্টা করেছে।ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজ প্রোগ্রামের পরিচালক পাবলো বোস আরো বলেন, “কিছু ভারতীয় পরিবারের জন্য (প্রেরণা) অর্থনৈতিক সুযোগ, পরিবারের পুনর্মিলন হওয়া স্পষ্টভাবে লক্ষ্যযোগ্য। কেন এত ভারতীয় কানাডার মাধ্যমে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তার একটি কারণ হলো কানাডার অনুকূল অভিবাসন নীতি। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি পর্যন্ত, কানাডায় যারা ভিসা নিয়ে ছিলেন তারা সেখানে একটি অস্থায়ী কর্ম অনুমতি প্রার্থনা করতে পারতেন। কানাডার কাছে দক্ষ অভিবাসীদের জন্য একটি এক্সপ্রেস এন্ট্রি নীতি রয়েছে যারা সেখানে বসবাস করতে চান।

তাহলে তারা কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে? বোস বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি কর্মসংস্থান এবং শিল্পের সুযোগ রয়েছে একই সাথে অভিবাসীদের বেশিরভাগই জানে যে মার্কিন ডলার কানাডিয়ান ডলারের চেয়ে ২৫ শতাংশ শক্তিশালী।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক দেবেশ কাপুর বলেন, এই অভিবাসীরা ‘খুব দরিদ্র নয়’ এবং অধিকাংশই ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাজ্যগুলো থেকে আসে।

কিন্তু আকর্ষণীয় চাকরির অভাব এবং ধুঁকতে থাকা কৃষিক্ষেত্রের মুখোমুখি হয়ে তারা দেখতে পান, ভারতে তাদের যে সম্পদ রয়েছে তা তাদের জীবন পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট নয় এবং এর ফলে ‘অভিবাসন সংস্কৃতি’ তৈরি হয়।

তাদের এজেন্টদের থেকে নেওয়া সাক্ষাৎকারে জানা যায়, ভিসা শৈথিল্য সুবিধার জন্য অভিবাসীরা নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের উপর দিয়ে আমেরিকা যায়। প্রতিটি জায়গায়, এজেন্টরা অভিবাসীদের তাদের পরবর্তী বিমানের টিকিট সরবরাহ করে। এভাবেই তারা একের পর এক দেশ পার হয়ে ল্যাটিন আমেরিকা বা কানাডার কাছাকাছি চলে আসে। এরপর এজেন্টকে তাদের দেওয়া টাকার অঙ্কের ওপর নির্ভর করে তারা হেঁটে, নাকি যানবাহনে করে মার্কিন সীমান্ত পার হবেন। তাদের শিখিয়ে দেওয়া হয়, কেউ প্রশ্ন করলে তারা বলবে ভারতে তারা নিজেদের নিরাপদ বোধ করছে না। এই পথকে ‘ডাঙ্কি রুট’ বলা হয়। এই পথে আমেরিকা যেতে এক ডজন দেশ পার হওয়া লাগে এবং এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নভেম্বরের যে নিবার্চন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সেখানে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা এরই মধ্যে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments