ইরানের দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন দেশটির মধ্যমপন্থী আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাসুদ পেজেশকিয়ান সাবেক পারমাণবিক আলোচক সাইদ জালিলিকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন কোটির বেশি ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মাসুদ পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে জালিলি পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
বার্তাসংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ভোর হতেই মাসুদ পেজেশকিয়ানের সমর্থকরা তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে নেমে আসে এবং উল্লাস শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মাসুদের সমর্থকরা ইরানজুড়ে বিভিন্ন রাস্তায় নেচে উদযাপন করছেন।
বিবিসি জানিয়েছেন, ৬৯ বছর বয়সী মাসুদ একজন হার্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞ। তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চার বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন। তিনি একগুঁয়ে স্বভাবের জন্য পরিচিত, তিনি ইরানের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং দুর্নীতির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন অনেকবার।
সবশেষ ২০২২ সালে পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর বিষয়ে ইরান সরকারের ভূমিকাকে প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাহাবাদে ১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মাসুদ। তার বাবা একজন আজারবাইজানি বা আজেরি এবং মা কুর্দিশ। মাসুদ আজেরি ভাষায় কথা বলেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে ইরানের বিশাল সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর জন্য কাজ করেছেন।
হার্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞ মাসুদ তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সায়েন্সসের প্রধান হিসবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মাসুদ পেজেশকিয়ান তার স্ত্রী ফাতেমা মাজেদি এবং এক কন্যাকে হারান। তবে এরপর আর কখনো বিয়ে করেননি তিনি। একাই তার দুই ছেলে ও আরেক মেয়েকে বড় করেন।
ইরানের রাজনীতে মাসুদের প্রবেশ ঘটে উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে। তিনি সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির প্রশাসনের অধীনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পান।
২০০৬ সালে তাবরিজ থেকে আইনপ্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হন মাসুদ। এরপর তিনি ডেপুটি পার্লামেন্ট স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেন। পশ্চিমাদের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত মাসুদ।
২০১৯ সালে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার জন্য রক্ষীদের ব্যাপক প্রশংসা করেন। সেইসময় মাসুদ বলেছিলেন, এর মাধ্যমে আমেরিকানদের মুখে জোরালো ঘুষি দেওয়া হলো এবং তাদের প্রমাণ দেওয়া হলো যে আমাদের দেশ তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।
২০১১ সালে মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রেসিডেন্টের লড়াইয়ের জন্য নাম লেখান তবে পরবর্তীতে তিনি তার প্রার্থীতা তুলে নেন। তবে শেষমেশ জয়ের মাধ্যমে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি।