জয় বাংলাদেশ: ডলারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এবং ঈদুল আজহা কারণে চলতি বছরের জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এক মাস না যেতে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কমে গেছে রেমিট্যান্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিমাসের প্রথম কার্যদিবসে আগের মাসের রেমিট্যান্সের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা প্রকাশ করেনি। বিকেলে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের কাছে রেমিট্যান্সের তথ্য জানতে চাইলে বলেন, এখনো প্রতিবেদন কমপ্লিট হয়নি। কাজ চলছে, কমপ্লিট হলে জানানো হবে। পরে বিকেল ৫টার দিকে প্রতিবেদন প্রকাশ না করে সংক্ষিপ্তভাবে শুধু জুলাই মাসে কত ডলার এসেছে তা হোয়াটসঅ্যাপে দেন।
মুখপাত্র জানান, জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। আগের বছর জুলাই মাসে যা ছিল ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস (২০২৩ সালের) জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বর ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে এসেছে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে আছে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
দেশে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে চলতি মাসে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্দোলনে সহিংসতায় বহু হতাহতের প্রতিবাদে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। এখন এটা বাড়তে শুরু করেছে।
রেমিট্যান্স কমে গেলে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির একজন প্রভাবশালী ডেপুটি গভর্নর সম্প্রতি বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন ২০টির মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা অফার করে।
খোলাবাজারে ডলার ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা
রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার খবরে খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১২৫ টাকায় উঠেছে। গতকাল বুধবার মানি চেঞ্জার গুলোর সংগঠন ‘মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ থেকে বলা হয় খুচরা প্রতি ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৯ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না। তবে মানি চেঞ্জারদের এ নির্দেশনা মানেনি কেউ। দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ (বৃহস্পতিবার) খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ১২৫ টাকা ৫০ পয়সা।
গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ পরে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। তবে কয়েকটি গণমাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা দুই শতাধিক বলা হচ্ছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন ইন্টারনেট সেবা দুপুরে সীমিত এবং পরে রাতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রেখে ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড সংযোগ চালু হলেও মোবাইল ডেটার ইন্টারনেট ২৮ জুলাই দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার বিকেল ৩টার পর মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমগুলোতে থ্রি-জি ও ফোর-জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু হয়।