রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে এটিই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সফর।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সফরের পর্দা উন্মোচন সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কাতারের আমিরের এ সফরে ১১টি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক। দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি, উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দু’দেশের মধ্যকার দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বদলি সংক্রান্ত চুক্তি এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তির পাশাপাশি শ্রমশক্তি, বন্দর পরিচালনা, উচ্চ শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্র এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ও কাতারের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, কাতার বঙ্গবন্ধুর সরকারকালীন সময়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রীর বিগত ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে দুইবার কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশে সফর করবেন।
সফরের আলোচ্য বিষয় সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে কাতারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি, বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সফরসূচি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকালে বা সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে কাতারের আমির ঢাকা পৌঁছাবেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিমানবন্দরে কাতারের আমিরকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে স্বাগত জানাবেন। আমিরকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। পরদিন মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন কাতারের আমির। এরপর গণভবনে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। দুপুরে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন আমির। সন্ধ্যায় তিনি বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
কাতারের আমিরের এই সফর বাংলাদেশ এবং কাতারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে জানান তিনি।
কাতারের সঙ্গে বাকিতে তেল কেনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের রেফার্ড পেমেন্টে (এক বছরের বাকিতে) তেল কেনার চুক্তি রয়েছে, কাতারের আমিরের সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাতার চাইলে দেশের কোনো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।