জয় বাংলাদেশ: ভারতে ধরা পড়া কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। সে চার্জশিটে ১০জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন। তারা হলেন- রাসেল, রোকন ও সুমন মিয়া।
গত ১৬ জুন অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপনে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের ব্যাপারে জানতে পারে দিল্লি পুলিশ। এসময় অভিযান চালিয়ে রাজধানী নয়াদিল্লিভিত্তিক ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসক ডা. বিজয়া কুমারীসহ (৫০) ওই তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন চক্রের সঙ্গে জড়িতরা বাংলাদেশের ডায়ালাইসিস কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তারা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাততেন।
এ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে সাকেত কোর্টের প্রধান বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট দীপ্তি দেবেশের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দিল্লি পুলিশ। সে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ১০ আসামির মধ্যে সাতজনই কিডনি দাতা। তবে অভিযোগপত্র নিয়ে এখনই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আদালত।
অভিযোগপত্রে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা কিডনি দাতাদের বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করত। তাদের আর্থিক অসচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে এবং ভারতে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ভারতে নিয়ে আসতো।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজন জাল নথি তৈরির সঙ্গে জড়িত। তারা এসব নথির মাধ্যমে কিডনি দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে আত্মীয়ের সম্পর্ক রয়েছে তা উল্লেখ করেদিত। ভারতীয় আইন অনুসারে কিডনি প্রতিস্থাপনে দাতা ও গ্রহীতার আত্মীয়ের সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত ডা. বিজয়া কুমারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি নয়ডাভিত্তিক ‘যথার্থ’ নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের নামে অন্তত ১৫-১৬ জন ব্যক্তির পাচারের উদ্দেশ্যে কিডনি অপসারণ করেছেন।
বিজয়া কুমারী একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কিডনি প্রতিস্থাপন সার্জন। প্রায় ১৫ বছর আগে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলোতে যোগ দেন তিনি। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অ্যাপোলোর পাশাপাশি ‘যথার্থ’ হাসপাতালের ভিজিটিং কনসালট্যান্ট ও সার্জনও ছিলেন বিজয়া কুমারী। ওই হাসপাতালের অতিরিক্ত মেডিকেল সুপারিটেন্ডেন্ট সুনীল বালিয়ান জানিয়েছেন, বিজয়া কুমারী যেসব ব্যক্তির কিডনি অপসারণ করেছেন, তাদের কেউই ওই হাসপাতালের রোগী ছিলেন না।
চক্রটির বাংলাদেশি সদস্যরা সম্ভাব্য অঙ্গদাতাকে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশ থেকে দিল্লিতে নিয়ে যেতেন। অঙ্গদাতাকে দেওয়া হতো ৪-৫ লাখ রুপি। আর অঙ্গগ্রহীতার কাছ থেকে নেওয়া হতো ২৫-৩০ লাখ রুপি। ডাক্তারকে দেওয়া হতো ২-৩ লাখ রুপি।
অঙ্গদাতা ও গ্রহীতা একটি মেডিক্যাল ট্যুরিজম কোম্পানির মাধ্যমে তাদের থাকা, চিকিৎসা ও পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, চক্রের একজন হোতা জাসোলা নামক গ্রামে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। ওই ফ্ল্যাটে পাঁচ-ছয়জন অঙ্গদাতা থাকছিলেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের আগের সমস্ত পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। অঙ্গগ্রহীতারাও ওই ফ্ল্যাটে দাতাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ওই ফ্ল্যাটে গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর সময় পুলিশ চক্রের হোতার কক্ষ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করে। তাতে নয়টি পাসপোর্ট, দুটি ডায়েরি ও একটি রেজিস্টার মিলেছে। এসব পাসপোর্ট কিডনিদাতা ও গ্রহীতার। আর ডায়েরিতে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে অর্থ লেনদেনের হিসাব লেখা ছিল।