নিউ ইয়র্ক স্টেট ডেমোক্রেটিক নির্বাচনকে সামনে রেখে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় শুক্রবার বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক স্টেটের জনপ্রিয় অ্যাসেম্বলি ওমেন জেসিকা গঞ্জালেস রোজাস ও অ্যাসেম্বলি ম্যান স্টিভেন রাগার পক্ষে এনডোর্স করেছে স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক সংগঠন পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস। ওই অনুষ্ঠানে অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা ঘোষণা করেন, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ নিউ ইয়র্ক স্টেটের কুইন্স ডেমোক্রেটিক কাউন্টি কমিটির সদস্য পদে নির্বাচন কমিশনে ব্যালটভুক্ত হয়েছেন। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি রাজনীতিকের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে নতুন ডেমোক্রেটিক রাজনৈতিক সংগঠন ‘পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস’।
অনুষ্ঠানে পিপল আপ -এর প্রেসিডেন্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, অ্যাসেম্বলি ওম্যান জেসিকা ও অ্যাসেম্বলি ম্যান রাগা নিউ ইয়র্ক স্টেট অধিবেশনে জনগণের অধিকার আদায়ে লড়াই করে অসামান্য অবদান রেখেছেন। আমরা তার সাক্ষী। আমরা যোগ্য প্রতিনিধিদেরকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে উৎসাহিত করতে চাই। এতে তারা তাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপকে আরো দৃঢ় করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আজ কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড জনগণের শক্তি ও ক্ষমতাকে খর্ব করে চলেছে। তারা অর্থ ও শক্তিতে এখন সংঘবদ্ধ। সে বিবেচনায় আমরা জনগণেরা একতাবদ্ধ নই। সর্বস্তরের জনগণকে একতাবদ্ধ করতেই রাজনৈতিক সংগঠন পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেসের যাত্রা শুরু। আমরা সবসময় ঐক্যের পক্ষে। একতার শক্তি নিয়েই আমরা আমাদের আন্দোলনকে বেগবান করে চলেছি।
অনুষ্ঠানে জেসিকা গঞ্জালেস রোজাস বলেন, পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস ও আবু জাফর মাহমুদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তাঁর নেতৃত্বে এখানকার সব কমিউনিটির মানুষ আমার লড়াই সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা বলেন, পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রোসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানে যেভাবে কমিউনিটির নেতৃস্থানীয়রা জড় হয়েছেন, এটি এক অভূতপূর্ব ঘটনা। তিনি স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ কুইন্স ডেমোক্রেটিক কাউন্টি কমিটির সদস্য পদে নির্বাচন কমিশনে ব্যালটভুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে জানান, তিনি এই সমাজের একজন যোগ্য নেতৃত্ব। তাঁর ঘোষণায় তাৎক্ষণিকভাবে উচ্ছ¡সিত সমর্থন জানান, অ্যাসেম্বলি ওম্যান জেসিকা গঞ্জালেস রোজাস।
দুই অ্যাসেম্বলি মেম্বারকে এনেডোর্স করার আগে পিপল আপ প্রেসিডেস্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ জনগণের অধিকার আদায়ে দুজনের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরে-
অ্যাসেম্বলি ওমেন জেসিকা গঞ্জালেজ রোজাস: তিনি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং স্ন্যাপ সহায়তার জন্য তহবিল গঠন করেছেন।
-নিউ ইয়র্ক স্টেটের সব স্কুল শিশুদের ৮৬% শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে নাস্তা এবং মধ্যাহ্নভোজন প্রায় সর্বজনীন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
-ইন্স্যুরেন্সবিহীন ও ইন্স্যুরেন্সপ্রাপ্ত মায়েদের জন্য গর্ভপাতের সুবিধার জন্য প্রজনন স্বাধীনতা এবং ইক্যুইটি তহবিলের জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করেছেন।
-পিএফ জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল দেওয়ালি উৎসবকে এনওয়াইসিতে স্কুল ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা। এক্ষেত্রে তার ভূমিকা অনন্য।
-মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কিত আইনে স্বাক্ষরিত বেশ কয়েকটি বিল পাস করেছেন।
-তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেটের স্কুলগুলোতে ঈদ ছুটির বিলের একজন চ্যাম্পিয়ন এবং একজন কো-স্পন্সর।
-এমটিএতে বাসের ফ্রিকোয়োন্সি বাড়ানোর জন্য তহবিল সুরক্ষিত করেছেন।
-তিনি সবার জন্য স্বাস্থ্য কভারেজের স্পন্সর, যাতে অনথিভুক্ত অভিবাসীরা স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন।
-‘ওয়ান ফেয়ার ওয়েজের’ প্রাইমারি স্পন্সর, যা টিপ্স শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরির নীচে মজুরি দেওয়ার রীতি দূর করবে এবং টিপ্স শ্রমিকদের টিপ্সের সাথে কমপক্ষে রাষ্ট্রীয় ন্যূনতম মজুরি প্রদান নিশ্চিত করবে।
অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা:
স্টিভেন রাগা নিউ ইয়র্ক স্টেটের ডিস্ট্রিক্ট ৩০-এর অ্যাসেম্বলি মেম্বর। উডসাইড, এলমহার্স্ট, ম্যাসপেথ, মিডল ভিলেজ, জ্যাকসন হাইটস এবং অ্যাস্টোরিয়া এলাকার এসেম্বলিম্যান হিসেবে কাজ করছেন।
দুই দশকের পাবলিক সার্ভিসের অভিজ্ঞতার সাথে স্টিভেন অলাভজনক সংস্থা উডসাইড অন দ্য মুভ -এর নির্বাহী পরিচালক এবং অ্যাসেম্বলি সদস্যদের জন্য প্রধান স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন।
স্টিভেন কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড-২ এবং কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির এশীয় আমেরিকান বিষয়ক উপদেষ্টা কমিশনের সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
বর্তমানে, তিনি রাষ্ট্রপতি ওবামার অধীনে নিযুক্ত ইউ.এস. ফেডারেল কমিশন অন সিভিল রাইটসের একজন নিউ ইয়র্ক স্টেটের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। স্টিভেন কুনি ইনস্টিটিউট ফর স্টেট অ্যান্ড লোকাল গভর্নেন্স, নিউ আমেরিকান লিডারস, ন্যাশনাল আরবান ফেলোস, উই আর অল নিউ ইয়র্ক-কুইন্স ফেলোশিপ, কর্নেল ল স্কুল, কর্নেল ইউনিভার্সিটি ইমার্জিং মার্কেটস ইনস্টিটিউট এবং কোরো নিউ ইয়র্কের ইমিগ্র্যান্ট সিভিক লিডারশিপ প্রোগ্রামে ফেলোশিপ সম্পন্ন করেছেন।
প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের ধন্যবাদ জ্ঞাপন:
এই আয়োজনে বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সিনিয়র সাংবাদিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, খুব ভালো লাগছে আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব আবু জাফর আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হলেন। আমাদের দুজন নির্বাচিত প্রতিনিধি জেসিকা গোঞ্জালেস রোজাস ও স্টিভেন রাগা আমাদেরকে যেভাবে আপন করে নিয়েছেন তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যে মায়া আমাদের প্রতি দেখিয়েছেন, আমরাও তাদের প্রতি একই ভালোবাসা প্রদর্শন করি। তিনি আবু জাফর মাহমুদের প্রবণতাকে ‘টেনাশিয়াস’ আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি যখনই কোনো কাজে হাত দেন, সাফল্য নিশ্চিত না করে ঘরে ফেরেন না। আমরা তাঁকে স্টেটের প্রতিনিধি হিসেবে দেখছি, আশা করি এই যাত্রা অনেক দূরে পৌঁছবে। সিনেটর বা তারও ওপরে। নাজমূল আহসান বলেন, আমাদের কমিউনিটিকে আমেরিকার মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য এ ধরনের ইভেন্ট প্রয়োজন। পিপল আপ এর এই আয়োজনটি মূল ধারার উচ্চতায় পৌঁছেছে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কাজী আযম, সন্দ্বীপ সোসাইটির সভাপতি ফিরোজ আহমেদ, সন্বীসেপ ইউনাইটেডের প্রেসিডেন্ট এসএম ফেরদৌস, রোহিঙ্গা এডভোকেসি নেতা নাসের আখতার, আলমগীর খান আলম, মিলেনিয়াম টেলিভিশনের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও নূর মোহাম্মদ প্রমুখ।