জয় বাংলাদেশ : একে তো জীবন যাত্রার চড়া খরচ তার ওপরে হুট করে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। সইতে না পেরে কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল কেনিয়ার জনগণ। দেশটির পার্লামেন্টের সামনে চলছিল এ বিক্ষোভ । পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষমেষ এ বিক্ষোভ মিছিলে গুলি চালালো পুলিশ। এ সময় পার্লামেন্টে কর বৃদ্ধি–সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হচ্ছিল।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে অন্তত ১০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। যদিও প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান, তিনি ভবনের সামনে অন্তত পাঁচটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন। কর বৃদ্ধি–সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির খবরে মঙ্গলবার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। তাঁরা পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ প্রথম কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। এ সময় ভবনের ভেতর থেকে ধোঁয়া উড়তেও দেখা যায়। ডেভিস তাফারি নামের এক বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা পার্লামেন্ট বন্ধ করতে চাই। প্রত্যেক এমপির অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। এরপর গঠন করতে হবে নতুন সরকার।’
এদিকে, উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে কেনিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয় পর্যায়ে উঠেছে। এর মধ্যে সরকার কর বৃদ্ধি করায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগ চান। একই দাবিতে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি ছাড়া দেশটির অন্যান্য বড় ও ছোট শহরেও বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। শ্রমজীবী মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় দুই বছর আগে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন উইলিয়াম রুটো। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পরও দেশটির শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের তেমন উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাওয়া অনুযায়ী বাজেট–ঘাটতি মেটাতে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। নানা সংকটের কারণে কেনিয়ার মানুষের দুর্দশা দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাস মহমারির কারণে অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছিল, তা ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আরও বেড়েছে। টানা দুই বছর ধরে দেশটিতে হয়েছে খরা। এতে ফসলের উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি কেনিয়ার মুদ্রার মান কমতে থাকায় মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়ে দিন দিন জীবনযাত্রার মান তলানিতে ঠেকেছে। জনগণের এমন দুর্দশার মধ্যেই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাওয়া অনুযায়ী আজ কর বৃদ্ধির প্রস্তাব পাস হয়েছে দেশটির পার্লামেন্টে। এরপর প্রেসিডেন্ট বিলে স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হবে। মঙ্গলবার হওয়া কর বৃদ্ধির বিল আইনে পরিণত হলে সরকারের আয় বাড়বে ২৭০ কোটি ডলার। সরকারি হিসাব বলছে, কেনিয়ার সরকারের বার্ষিক আয়ের ৩৭ শতাংশই যায় ঋণের সুদ পরিশোধে।