জয় বাংলাদেশ : সারা পৃথিবীর সঙ্গে এমনকি দেশেও একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাজপথে আন্দোলনকারী ছাত্রদের হত্যা, করিফউয়ের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার হরণের যে যজ্ঞ চলছে তাতে গভীরে উদ্বগ প্রকাশ করেছেন পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস পিপল আপ এর প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ান কমাণ্ডার স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। তার মতে বাংলাদেশে যা চলছে তা জাতিকে মেধাশূণ্য করার একটি একতরফা যুদ্ধ।
রোববার, নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে ওয়াটারবেরি এভিনিউতে অনুষ্ঠিত পিপল আপ স্ট্রিট ফেয়ারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সে সময়, তিনি বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের অন্যায়-শোষনের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঘটনার প্রতিচ্ছ্ববি বলে উল্লেখ করে বলেন, চাকরির বাজারে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে, নায্যতার প্রশ্নে এখনকার নিম্ন ও মধ্য আয়ের হাজারো শিক্ষার্থী যে রাজপথে নেমেছে, আন্দোলন করছে, এটি মহান মুক্তিযুদ্ধেরই অংশ। এভাবেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে, দেশকে মেধাবীদের দ্বারা পরিচালনা করতে হলে, অবশ্যই কোটা সংস্কার জরুরী । ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা শেষে ঘুষ-অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে চায় না, তাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ দিয়ে দেশ পরিচালনায় যুক্ত করতে হবে।
ওই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন ‘বাকা’। সংগঠনের সভাপতি সারওয়ার চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাবেক সভাপতি আবুল হাশেম হাসনু ও আহবাব চৌধুরী খোকনের তত্বাবধানে সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহ বদরুজ্জামান রুহেল ও আশরাফুল হাসান বুলবুল।
মেলার উদ্বোধনী মঞ্চে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্রংকস বরো প্রেসিডেন্ট ভেনিসা এল গিবসন। তিনি স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক প্লাটফরম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস এর কার্যক্রমের সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি পিপল আপ উত্থাপিত ১৪ দফা এজেণ্ডার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদের জনগণের স্বার্থেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সেবা, আবাসনসহ প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে আমাদের যে পথরেখা তার সঙ্গেই পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস এর শুভযাত্রা ঘটেছে, এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
তিনি বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে আক্রান্ত প্রতিটি মানুষের জন্য সমবেদনা জানিয়ে বলেন, এই সময়ে সবার ঐক্য সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। ঐক্য ছাড়া এ ধরণের পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় না।
তিনি বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশেনের নেতৃবৃন্দের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সংগঠন বরাবরের মতোই বাংলাদেশের জীবন ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরছে। ব্রংকস এর ১৪ লাখ মানুষ যে সাংস্কৃতির বৈচিত্রের ভেতর দিয়ে বসবাস করছে তা এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটি ব্যবসা বানিজ্যের উদ্যোগ থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই চালকের আসনে রয়েছে। বিশেষ করে তারা কর্সংস্থান সৃষ্টি করছেন। তাদের এই অবদান বিশেষ গুরুত্ব রাখছে। আমরা এ জন্য এই কমিউনিটির প্রতিটি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।
ভেনিসা বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ও গর্ব প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান একজন নারী হিসেবে ব্রংকস এর বরো পরিচালনার দায়িত্ব পালন। প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙে এই ব্রংকস এর মানুষের কল্যাণের একটি প্রত্যয় নিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের বিশ্বাস আর আশা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। অনুষ্ঠানে ব্রঙ্কস ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী ডেরেস ক্লার্ক, কাউন্সিল মেম্বার এমান্ডা ফারিয়াস, অ্যাটর্নি প্যারি ডি সিলভা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ দেশে সহিংস পরিস্থির প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট বন্ধ সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলস্বরুপ জানিয়ে তিনি আরো বলেন , বাংলাদেশের বাইরে কোটিরও বেশি প্রবাসী বর্তমানে অবস্থান করছেন তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন, পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন তারা উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এমন ভাবে বাংলাদেশও বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। সবমিলিয়ে, ছাত্রদের কোটা আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, বাংলাদেশের মেধার ক্ষয় আর না হোক। মেধাবী সন্তানরা যদি গড়ে উঠতে না পারে , রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য উপযুক্ত সন্তান যদি গড়ে না উঠে তাহলে এ রাষ্ট্র থাকবে না।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন , এ রাষ্ট্রকে পরাধীন করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনীকে মেরে ফেলা হচ্ছে , আমাদের সন্তানদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এটি ভাল নয়। দেশে একটি শান্তিপূর্ন সমাধান দরকার। এ বিচারের জন্য বাংলাদেশ থেকে যেমন, প্রয়োজনে আন্তজার্তিক ক্রিমিনাল আদালতেও মামলা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্টদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে, শেখ মুজিবকে মেরে ফেলা হয়েছে , জিয়াউর রহমানকে মেরে ফেলা হয়েছে, রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে মেরে ফেলা হয়েছে । কারা মারে, কারা মেরে ফেলতে সহযোগিতা করে ? এরা না থাকলে কার উপকার হয়েছে ? কোন রাষ্ট্রের উপকার হয়েছে ? সেটি পরিস্কার । আমাদের সন্তান ও প্রিয় বাংলাদেশকে মুক্ত করা সময়ের দাবি।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে নিরীহ ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নিউইয়র্কের শিক্ষার্থীরা একাত্ম হওয়ায় স্বাগত জানান তিনি । বলেন , দেশপ্রেম না থাকলে বিদেশের মাটিতে বসে এ আন্দোলনে শরিক হওয়া সম্ভব না। এ কারণে আমাদের দায়িত্ব এসব শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা ।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, কমিউনিটি বোর্ড নাইনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এন মজুমদার, পার্কচেস্টার ব্রঙ্কস রিয়েলিটির সালেহ উদ্দিন, স্টার্লিং ডায়গেনেস্টিক এর মোহাম্মদ আলী, ডিটেকটিভ মাসুদ রহমান, এটর্নী ব্রুশ ফিসার, পেরী ডি সিলভা, কমিউনিটি বোর্ড ১০ এর পক্ষ থেকে বব বিটার, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট আজাদুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ থেকে আগত নাট্য সংগঠন সুবর্ণযাত্রার সভাপতি জাফর সাদেক প্রমুখ।
সংগঠনের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাদী মিন্টু, সহ সভাপতি ও মেলা কমিটির আহবায়ক মাকসুদা আহমেদ, সহ সভাপতি ও মেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ফয়সল আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমডি আলা উদ্দিন, সোহেল আহমদ, শাহ কামাল উদ্দিন,স্কুল শিক্ষা ও সমাজসেবা সম্পাদক ও মেলা কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব সালমা সুমী, প্রচার ও গণসংযোগ সম্পাদক লিয়াকত আলী, আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক আব্দুর রহমান দুলাল, কোষাধ্যক্ষ ও মেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রনি, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও মেলা কমিটির সদস্য সচিব রায়হান জামান রানা,ক্রীড়া ও বিনোদন শাহ ইকবাল রাজু, কার্যকরী সদস্য চৌধুরী মোমিত তানিম।
কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্যে কাউন্সিল অফিস থেকে বিশেষ সাইটেশন প্রদান করা হয় কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট রিয়াজ কামরান, মামুন রহমান, সাংবাদিক ও সংগঠনের সহ সভাপতি সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, কার্যকরী সদস্য জে মোল্লা সানী, সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান সুমনকে।
কমিউনিটির অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেফ খলিলুর রহমান,কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, নাসরিন চৌধুরী, জালালাবাদ একাংশের সভাপতি শাহীন কামালী, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধক্ষ নওশাদ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, কমিউনিটি একটিভিষ্ট জামাল হোসেন, মোতাসিম বিল্লাহ, কবি জুলি রহমান, তুষার,আব্দুর রব কাওসার, জালাল চৌধুরী, মনজুর চৌধুরী জগলুল, কাজী অদুদ আহমেদ, কাজী হাসান, ফারুক কবির, আব্দুল মতিন, ফয়সল শিকদার, রুমানা আহমেদ, ইমরান আলী,মিজানুর রহমান, আব্দুর রব এম আলী, আম্বিয়া অন্তরা প্রমুখ ।
সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী রিজিয়া পারভীন, বাউল কালা মিয়া, দিনাত জাহান মুন্নী, মুফাফির মুক্তা, নীপা জামান, নৃত্য পরিবেশন করেন নিউ ইয়র্কের উদীয়মান নৃত্য শিল্পী মায়া এন্জেলিনা সহ অন্যান্যরা।