কোটা সংস্কারের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সারাদেশে গণপদযাত্রা করবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণপদযাত্রা করে প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।
কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গতকাল শনিবার (১৩ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, কোনো অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা হবে।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেল ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বাংলা ব্লকেড কার্যক্রমে জনদুর্ভোগ হচ্ছে বলে বলছেন। আমরা বলতে চাই, মা যখন সন্তান প্রসব করেন তখন যন্ত্রণা ভোগ করেন। আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ৫ শতাংশ কোটা থাকতে পারে। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পর্যন্ত এই কোটা থাকতে পারে।তৃতীয় প্রজন্মের জন্য কোটার বিরোধী আমরা।
ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের জোয়ার বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেলা- উপজেলায় ছড়িয়ে গেছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা কেন ফিরে যাবে? শিক্ষার্থীরা এত বোকা নয়। আন্দোলনের শুরুতে তাদের কোনো খোঁজ ছিল না। এখন আন্দোলন সফল হওয়ার সময় বিরোধিতা করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যাখ্যান করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ছাত্র ধর্মঘট চলবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আমাদের নামে হওয়া শাহবাগ থানার মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনে বাধাপ্রদানকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর গণআন্দোলনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা ১১ই জুলাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়। চট্টগ্রামে নারী শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধা দেয়, সেইসঙ্গে লাঠিচার্জ করে। অনেক সাংবাদিককেও আহত করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন করে। আমরা ১লা জুলাই থেকে আন্দোলন করছি। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ১০ দিনের আন্দোলনে কোনো শিক্ষার্থী কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। তাহলে শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে কেন হামলা করা হচ্ছে?
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমাদের আন্দোলন থাকবে যতদিন পর্যন্ত আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হয়। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের পেনশন স্কিমের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জন করেছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর। আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেখতে চাই না শিক্ষকরা ক্লাসে বসে আছেন। ক্লাস, পরীক্ষার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন দীর্ঘায়িত করতে হচ্ছে। এর দায় পুরোপুরি সরকারের। তারা যদি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয় আমরা রাস্তায় থাকবো না। অতিদ্রুত সংসদে আইন পাস করুন।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে ১লা জুলাই থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীরা চারদিন আধাবেলা ও একদিন সর্বাত্মক ব্লকেড পালন করেন। গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার অভিযোগ এনে গত শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এদিন এক ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধসহ রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।