Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদগুলশানে সম্পত্তি বিক্রেতা বেড়েছে, ক্রেতা কম’

গুলশানে সম্পত্তি বিক্রেতা বেড়েছে, ক্রেতা কম’

জয় বাংলাদেশ : দুই হাজার ৪৩০ বর্গফুট আয়তনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে সম্পত্তি কেনাবেচার ওয়েবসাইট বিপ্রপার্টিডটকমে। অ্যাপার্টমেন্টটির অবস্থান রাজধানীর গুলশান-১ এলাকায়। ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে একাধিক আলোকচিত্র। বিক্রেতা অ্যাপার্টমেন্টটিকে ‘নান্দনিক’ হিসেবে উল্লেখ করে দাম হাঁকিয়েছেন ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজ্ঞাপন প্রকাশের কয়েকদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আগ্রহীই যোগাযোগ করেননি।

রাজধানীর গুলশান-২ এলাকায় ৪ হাজার ৪৮৩ বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির বিজ্ঞাপন বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা মূল্যের এ সম্পত্তিরও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার খোঁজ পাননি বিক্রেতা। ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, আবাসিক প্লট, দোকানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা বিক্রির এমন ৫০টি বিজ্ঞাপন রয়েছে বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটে। কিন্তু ক্রেতাদের সাড়া মিলছে না তেমন। বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই এমনটা হয়েছে। বেচাকেনা ৪০-৫০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

নতুনের পাশাপাশি পুরনো জিনিসপত্র ও সম্পত্তি বেচাকেনার অনলাইন প্লাটফর্ম বিক্রয় ডটকম। গত ১১ আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গুলশান এলাকার ৯৬টি ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের প্রপার্টি বাজারে বেশ ‘স্ট্রাগল’ করতে হচ্ছে বলে বিক্রয় ডটকমের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আবাসন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন অনেক বিক্রেতা রয়েছেন, যারা ওয়েবসাইটে কিংবা গণমাধ্যমে সম্পত্তির বিজ্ঞাপন দিতে চান না। গোপনে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তারা নিজেদের সম্পদ বিক্রি করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে গুলশানে এ ধরনের বিক্রেতা বেড়ে গেছে। অথচ কয়েক মাস আগেও বিপুল অর্থ ছড়িয়েও অভিজাত এ এলাকায় সম্পত্তি পাওয়া যেত না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গুলশানে ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনার মালিকদের একটি বড় অংশই আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তি। সরকার পতনের পর তাদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাই গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় ক্রেতার চেয়ে এখন বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। কেবল গুলশান নয়; অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারাসহ ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় সম্পত্তির বাজারে মন্দা ভাব বিরাজ করছে বর্তমানে।

ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতা বেড়ে যাওয়ায় বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটে বেচাকেনা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক খান তানজীল আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বেচাকেনা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সম্পত্তির অবস্থান, সুযোগ-সুবিধা, পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের প্লাটফর্মে সম্পত্তি কেনাবেচা অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।’

বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে বরাবরই দেশের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে গুলশান। রাজধানীতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হাতে গোনা দু-একটি এলাকার অন্যতম এটি। কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাজধানীর অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক উন্নত। নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি। বিপুলসংখ্যক ধনীর বসবাস, অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অত্যাধুনিক হাসপাতালের উপস্থিতি গুলশানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশের সবচেয়ে কুলীন এলাকা হিসেবে।

গুলশানে ফ্ল্যাট কিংবা জমির দামও ঢাকার অন্যান্য এলাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কলাবাগান, শান্তিনগর, শ্যামলীর মতো এলাকায় যেখানে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম পড়ে ৭-১০ হাজার টাকা, সেখানে গুলশানে কিনতে হয় ১৫-২০ হাজার কিংবা তারও বেশি টাকায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব এলাকার ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের ব্যয় লন্ডন-দুবাই-নিউইয়র্কের অভিজাত এলাকাগুলোর বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মূল্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের মতো গুলশানে জমির দামও বেশি। এখানে বর্তমানে প্রতি কাঠা জমি ২ থেকে ৩ কোটি টাকা, ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে ‘প্রপার্টি’র বাজারে সবাই ক্রেতার জন্য স্ট্রাগল করছে বলে জানিয়েছেন বিক্রয় ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঈশিতা শারমিন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘প্রপার্টি গ্রাহক এখন তুলনামূলকভাবে কম। সবাই স্ট্রাগল করছেন। তবে প্রপার্টি মার্কেট বছরের শুরু থেকেই স্ট্রাগল করছিল। এখন ভালো সময় হওয়ার কথা থাকলেও ঈদের পরপরই রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মার্কেটে সে রকমভাবে আর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’

বর্তমানে তুলনামূলক ছোট প্রকল্পের ক্ষেত্রে রেসপন্স ভালো পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘যে প্রপার্টিগুলোর দাম তুলনামূলক কম, এমন ডেভেলপারের আহ্বানে সাড়া ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সেকেন্ড হ্যান্ড প্রপার্টির দাম সব সময়ই কিছুটা কম থাকে, সেখানেও আমাদের সাইটে অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে মার্কেট এখন ডাউন। আর প্রপার্টির বর্তমান দাম মধ্যবিত্তদের ক্রয়সীমার মধ্যে নেই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে গুলশান এলাকায় সম্পত্তি কিনেছেন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে তাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। আওয়ামী সুবিধাভোগী ব্যক্তিরাই এখন সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টায় রয়েছেন, যা গুলশান এলাকায় সম্পত্তি বিক্রেতার সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে।

অনেকের ক্ষেত্রে প্রপার্টি এখন যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলীনুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যার ক্রয়ক্ষমতা আছে তিনিও চিন্তা করছেন, এখন প্রপার্টি কিনে আবার কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে কিনা। মানুষের জীবনযাত্রার মানে বড় ধরনের একটা বিপর্যয় এসেছে। সাম্প্রতিক পরিবর্তনে লাইফ স্টাইল বদলে গেছে। সবাই চিন্তা করছে, আগে সারভাইভ করি, তারপর প্রপার্টি।’

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments