Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকচীন সফর থেকে কী চান পুতিন

চীন সফর থেকে কী চান পুতিন

পঞ্চমবারের মতো দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দেশ হিসেবে চীন সফরে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

পুতিন এবং শি’র এ পর্যন্ত ৪০ বারের বেশি সাক্ষাৎ হয়েছে। একে অপরকে পুরনো বন্ধু বলে অভিহিত করে থাকেন।

গত বছরের মার্চে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর শি জিনপিংয়ের প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য ছিল রাশিয়াই। সর্বশেষ গত অক্টোবরে বেল্ট অ্যান্ড রোড সামিটে অংশ নিতে বেইজিং এসেছিলেন পুতিন।

এবারের সফরে পুতিন কী চান, চীন কি তার সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে

সফর শুরুর আগে বার্তাসংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক ‘নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছেছে’। চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি থেকে জানা গেছে, পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় সাক্ষাতে পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শি জিনপিং।

পুতিনের উদ্দেশে শি বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে রাশিয়া আরো বড় সাফল্য ও অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

রয়টার্স জানাচ্ছে, পুতিনের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে আছেন নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসোভ, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং বর্তমানে সিকিউরিটি কাউন্সিল (নিরাপত্তা পরিষদ) সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। তার সঙ্গে ব্যবসায়ীদেরও বড় একটা প্রতিনিধি দল আছে।

পুতিন কী চান

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীন ও রাশিয়া ‘আনলিমিটেড পার্টনারশিপ’-এর ঘোষণা দেয়। সেই মাসেই ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এখনো সেই যুদ্ধে জড়িয়ে আছে রাশিয়া। দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত।

কয়েকদিন আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে সরিয়ে অর্থনীতিবিদ আন্দ্রে বেলুসোভকে সেই দায়িত্বে বসান। এতেই এই যুদ্ধের সাথে অর্থনীতির সম্পর্কটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চীনের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে রাশিয়াকে। তবে, রাশিয়ায় চীনের সামরিক-বেসামরিক উভয় কাজে ব্যবহার করা যায় এমন দ্রব্য এবং অস্ত্র রপ্তানির সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।

চীনা কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ২৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। এতে সময়ের অনেক আগেই পূরণ হয়েছে দেশ দু’টির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা। প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশের বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের সময় রাশিয়ায় চীনের গাড়ি রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। সাড়ে ৯ লাখ গাড়ি রপ্তানি হয়েছে গত বছর। আগের বছরের তুলনায় ৪৮১ শতাংশ বেড়েছে এই খাতের বাণিজ্য।

আজকের সংবাদ সম্মেলনও পুতিন বলেন, ‘চাইনিজ গাড়ি নির্মাতাদের আমাদের দেশের বাজারে স্বাগত জানাই।’

অন্যদিকে, রাশিয়া স্বল্প মূল্যে চীনের কাছে খনিজ জ্বালানি বিক্রি করছে। রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম এখন এশিয়ান দেশটির সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী।

সিনহুয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, গত পাঁচ বছরে দুই দেশের বাণিজ্যের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক সহায়তাটাই রাশিয়ার প্রত্যাশার কেন্দ্রে রয়েছে। তাছাড়া, বিশ্ব রাজনীতিতে পারস্পরিক সমর্থনও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক দুই দেশের সম্পর্কে।

ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির রাশান স্টাডিজের সহযোগী গবেষক ওয়ান কিনসং বিবিসিকে বলেন, দুই দেশের সম্পর্কটা মূলত বাজার চাহিদার ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এই সুযোগটা যতটা না চীনের সহায়তার কারণে হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি হচ্ছে পশ্চিমা চাপের কারণে। এর ফলে, দুই দিকের রাষ্ট্রায়তত প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রণোদনা পাবে।

পশ্চিম দিক থেকে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়ে পড়ার পর রাশিয়ার অর্থনীতি প্রাচ্যমুখী হয়েছে বলে মনে করেন ওয়ান কিনসং।

রুশ কূটনীতির খাতার বন্ধু তালিকায় পশ্চিমের চেয়ে পূর্বদিকের দেশের সংখ্যাই বেশি। শুধু চীনের বাজারই একমাত্র নয়। তুরস্ক ও ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোও রাশিয়ায় ব্যবসা করছে। নিজেদের অগ্রগতির জন্য চাইনিজ কোম্পানিগুলোকে তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে বলে অভিমত কিনসংয়ের।

চীনকে যে কারণে ভারসাম্য রেখে চলতে হবে

তাইওয়ানের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ড. ঝং ঝিদংয়ের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই অর্থনৈতিকভাবে তার এখন চীনকে বেশি করে দরকার।

আবার, নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে রাশিয়ার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে চীন। অন্যদিকে, অর্থনৈতিকভাবে চীনের কাছে পশ্চিমের গুরুত্বও কম নয়। বিশেষ করে ‘হাই-টেক’ খাতে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাণিজ্য বাড়াতে চায় তারা।

এ কারণে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার সঙ্গে সঙ্গে চীন সমানতালে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কে ভারসাম্য রাখতে চায় বলে মনে করেন ড. ঝিদং।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শিয়া মিং বলেন, জ্বালানি ও কাঁচামালে চীন এবং রাশিয়া একে অন্যের পরিপূরক হলে অনেক কিছুর জন্যই চীনকে পশ্চিমের ওপর নির্ভর করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে খাদ্যের কথা বলেন তিনি। দেশটির খাদ্যের ৩০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো পশ্চিমা দেশ থেকে আমদানি করা হয়। চীন বিশ্বায়নের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। তারা পশ্চিমের শিল্পখাতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

মিংয়ের মতে, উপরোক্ত কারণে জিনপিংকে পশ্চিমের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং তিনি পুতিনের সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন না।

বৈঠকে যা আলোচিত হলো

দুই ধাপে বৈঠক করেন নেতৃবৃন্দ। এরপর যৌথ সংবাদ সম্মেলন হাজির হন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। যদিও নিজেদের বক্তব্যই দিয়েছেন কেবল। সাংবাদিকদের জন্য প্রশ্ন করার সুযোগ রাখা হয়নি। অবধারিতভাবেই আলোচনায় অন্যতম প্রসঙ্গ ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ।

পুতিন বলেন, ইউক্রেন সংকট সমাধানে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য চীনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

ইসরায়েল-গাজা সংঘাত নিয়েও কথা হয়েছে বৈঠকে। শি বলেন, একটা রাজনৈতিক সমাধান দরকার। তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট একমত যে এই সংঘাতের একটা সমাধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অনেক সংকটেই দুই দেশের অবস্থান অভিন্ন বলে মন্তব্য করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।

তথ্যসূত্র- বিবিসি

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments