Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদছয় বছর ধরেই প্রতি কেজি ইলিশ ১০ ডলারে রপ্তানি হচ্ছে ভারতে, রহস্য...

ছয় বছর ধরেই প্রতি কেজি ইলিশ ১০ ডলারে রপ্তানি হচ্ছে ভারতে, রহস্য কী

জয় বাংলাদেশ : রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতে পাঁচ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এসব চালানের প্রতিটির রপ্তানিমূল্য ছিল প্রতি কেজি ১০ ডলার। বর্তমান বিনিময়মূল্য অনুযায়ী ১ হাজার ২০০ টাকা। শুধু এ বছর নয়, ছয় বছর ধরে ইলিশের যত চালান রপ্তানি হয়েছে, তার ৯৫ শতাংশের রপ্তানিমূল্য ছিল প্রতি কেজি ১০ ডলার। এবার দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেশি থাকায় ১০ ডলারে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি প্রথম শুরু হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর প্রথম চালানে ইলিশের প্রতি কেজি রপ্তানিমূল্য ছিল ৬ ডলার। তখনকার বিনিময়মূল্য হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫০৭ টাকা। এই দরে ইলিশের ১৯টি চালান রপ্তানি হয়। তবে ২০তম চালানে এসে রপ্তানিমূল্য বেড়ে প্রতি কেজি ১০ ডলারে উন্নীত হয়। গাজীপুরের একুয়াটিক রিসোর্সেস লিমিটেড প্রথম এই দরে ইলিশ রপ্তানি করে। এরপর ২০১৯ সালে বাকি সব চালানেরও রপ্তানিমূল্য ছিল প্রতি কেজি ১০ ডলার।

গত বছর পর্যন্ত ১ হাজার ৭২টি চালানে দেশ থেকে ৫৬ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ বা ১ হাজার ১৭টি চালানেরই রপ্তানিমূল্য ছিল প্রতি কেজি ১০ ডলার। এ বছর অনুমতি দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচ লাখ কেজির ১৫৯টি চালানে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। সব কটি চালানেরই রপ্তানিমূল্য ১০ ডলার।

পাঁচ বছর ধরে প্রতি কেজি ১০ ডলারে ইলিশ রপ্তানি করে আসছে চট্টগ্রামের প্যাসিফিক সী ফুডস। এ বছরও প্রতিষ্ঠানটি একই দরে ইলিশ রপ্তানি করেছে। পাঁচ বছর ধরে একই দামে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে প্যাসিফিক সী ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দোদুল কুমার দত্ত বলেন, ‘এখন বাজারে ইলিশের যে দাম, তাতে বড় আকারের ইলিশ ১০ ডলারে রপ্তানি সম্ভব নয়, এটা ঠিক। এ জন্য আমরা ৫০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ রপ্তানি করেছি। রপ্তানির ক্ষেত্রে মাছের আকারে তারতম্য থাকে, ছোট ও মাঝারি আকারের মাছই বেশি থাকে। তাই এই দামে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে।’

এই রপ্তানিকারক জানান, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের এক কেজির কম-বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার রুপিতে (২ হাজার ১৬৭ টাকা বা ১৮ ডলার)। বাংলাদেশে একই আকারের ইলিশ কিনতে হচ্ছে ১

প্রতি কেজি ১০ ডলারে ইলিশ রপ্তানির রহস্য নিয়ে প্রথম আলো স্থলবন্দরকেন্দ্রিক দুজন আমদানি–রপ্তানিকারকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক পণ্য আমদানি–রপ্তানির ক্ষেত্রে ঘোষিত মূল্য বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই। বাস্তবের সঙ্গে মিল না থাকলেও লেনদেনে সমস্যা হয় না। কারণ, দুই পক্ষের ব্যবসায়ীরা একে অপরের খুব পরিচিত। আমদানিমূল্য বা রপ্তানিমূল্য যদি কম–বেশি হয়, সেটি তাঁরা অন্য চালানের সঙ্গে সমন্বয় করে পুষিয়ে নেন। আবার অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলেও বাড়তি অর্থ লেনদেন করা যায়।

উদাহরণ দিয়ে এক রপ্তানিকারক বলেন, ধরা যাক ১০ ডলার দরে ইলিশ রপ্তানি হলো। কিন্তু বাস্তবে ১৫ ডলার দরে রপ্তানি। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে পাঁচ ডলার নিয়ে আসেন রপ্তানিকারকেরা। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। যেমন ভারত ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য বেঁধে দেওয়ার পর টনপ্রতি ৮০০ ডলারে আনুষ্ঠানিকভাবে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তবে বাস্তবে দর ছিল আরও কম। সেটি অন্য আমদানি পণ্যের দরের সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি দরে অর্থাৎ প্রতি কেজি ১৫ ডলার দরে ইলিশ রপ্তানির নজির খুব কম।

২০২১ সালে চারটি চালানে ১৭ হাজার ৬৮০ কেজি ইলিশ এই দামে রপ্তানি করেছিল চট্টগ্রামের পটিয়ার মাসুদ ফিশ প্রসেসিং অ্যান্ড আইস কমপ্লেক্স। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফ হোসেন মাসুদ বলেন, প্রতি কেজি ১৫ ডলারে রপ্তানি হওয়া চালানের সবগুলোই ছিল বড় আকারের ইলিশ। তিনি বলেন, ‘এবার ৫০ টন রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। কলকাতার আমদানিকারক অর্থাৎ ক্রেতাকে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৮ ডলারে ইলিশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। ১০ ডলারে যে ইলিশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি, সেগুলো ৬০০–৭০০ গ্রাম ওজনের। আর দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৮ ডলার ধরে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছি। এখনো সাড়া পাইনি।’

ভারত শুধু বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি করে না। মিয়ানমার থেকেও দেশটি ইলিশ আমদানি করে। তবে বাংলাদেশের ইলিশের তুলনায় মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানিমূল্য আরও কম। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে ২০২২–২৩ অর্থবছরে প্রতি কেজি ৬ ডলার ৭৪ সেন্ট দরে ইলিশ আমদানি করেছে দেশটি। ২০২১–২২ অর্থবছরে মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানিমূল্য ছিল ৬ ডলার ১৭ সেন্ট।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাংলাদেশের ইলিশ কত দরে রপ্তানি করতে হবে, রপ্তানি অনুমতিতে তার কোনো বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়নি। তবু দেশে ইলিশের রপ্তানিমূল্য পরিবর্তন হয়নি। তবে এবার দেশে ইলিশের দাম বেশি থাকায় কম দামে রপ্তানি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments