জয় বাংলাদেশ : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে আগামী ৪ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। প্রায় ১১ বছর পর মালয়েশিয়ান কোনো প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর হতে যাচ্ছে এটি। তার সফরে রাজনীতি, অর্থনীতি ও শ্রমবাজার ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনি ৪ অক্টোবর ঢাকায় আসবেন। খুব সংক্ষিপ্ত সফর, আড়াই ঘণ্টার মতো তিনি ঢাকায় অবস্থান করবেন।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, আগামী ২ থেকে ৪ অক্টোবর ইসলামাবাদ সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় সফরে প্রথম ইসলামবাদ যাবেন তিনি। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের শরীফের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইসলামাবাদ থেকে ৪ অক্টোবর ঢাকায় আসবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর যৌথ প্রেস কনফারেন্স হবে। এ ছাড়া, আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্ব রয়েছে। বন্ধুত্বের কারণে হয়ত আনোয়ার ইব্রাহিম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসলামাবাদের পাশাপাশি ঢাকা হয়ে দেশে ফিরবেন। ইসলাবাদে তিনদিনের সফর হলেও ঢাকায় তার সফর খুব সংক্ষিপ্ত। তবে সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ আছে। তাই এর গুরুত্ব আছে।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিক বলেন, এটা আনুষ্ঠানিক সফর। কিন্তু এনগেজেমেন্টর মাত্রাটা কম। তিনি পাকিস্তানে যাবেন। একই অঞ্চলে আসছেন, সেজন্য এখান (ঢাকা) থেকে ঘুরে যাবেন। মূলত, আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফরে তিনটা ইস্যু গুরুত্ব পাবে। এর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও লেবার ইস্যু থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।
এ কূটনীতিক বলেন, রাজনৈতিক ইস্যুর মধ্যে বাংলাদেশের সংস্কার ইস্যু গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশের সংস্কারে মালয়েশিয়া পাশে থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এখন সংস্কার আমাদের জন্য বড় বিষয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয় থাকবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে। এখন এক বিলিয়ন বিনিয়োগ আছে। এটাকে পাঁচ বিলিয়নে নেওয়ার সুযোগ আছে।
শ্রমবাজার ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে এ কূটনীতিক বলেন, মালয়েশিয়ার চাওয়া আর আমাদের চাওয়া একই। আমরা চাই কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়াটা যেন স্বচ্ছ হয়, সঠিক নিয়মে হয়। মালয়েশিয়ার কর্মীর প্রয়োজন, আমাদের কর্মী আছে। এই দুইটাকে মিলিয়ে যেন স্বচ্ছ উপায়ে কাজে লাগানো যায় সেটাই আমাদের চাওয়া।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ড. ইউনূসকে দ্রুত অভিনন্দন জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। বন্ধু ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন তিনি।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রথম শীর্ষ নেতা হিসেবে ঢাকা সফরে আসছেন। আনোয়ার ইব্রাহিমের পুরোনো বন্ধু ড. ইউনূস। বন্ধুর আমন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন তিনি। এই সফরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী শ্রমবাজার ইস্যুতে হয়তো কোনো সুখবর দিতে পারেন।
গত বছর (২০২৩) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে বেশ জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালায় শেখ হাসিনা সরকার। ওই বছরের ১০ মে ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে সভা হয়। দুই দেশের সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি এফওসিতে আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফর প্রসঙ্গ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০০০ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক যুগের বেশি সময় পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার দেশটি সফর করেন তিনি।
জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় দায়িত্বরত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, আগামী ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন। তিনি আনুষ্ঠানিক সফরে ঢাকায় যাবেন।
ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।