Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদনরসিংদী কারাগারে হামলা : যেভাবে পালিয়ে যান ৮২৬ বন্দী

নরসিংদী কারাগারে হামলা : যেভাবে পালিয়ে যান ৮২৬ বন্দী

জয় বাংলাদেশ নিউজ: নরসিংদী জেলা কারাগারে দুর্বৃত্তরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে অস্ত্রলুটের সময় ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে গেছেন। কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই নারী জঙ্গিকে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। গ্রেপ্তার দুই নারী জঙ্গি হলেন- ইসরাত জাহান মৌ ও খাদিজা পারভিন মেঘলা। এ নিয়ে বুধবার (২৪ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত ২৬১ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা নরসিংদী জেলা দায়রা জজ আদালতের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করছেন বলে জানা গেছে। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

যেভাবে পালান বন্দীরা

নরসিংদী জেলা কারাগারটি শহরের ভেলানগরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। এই ভেলানগর ও জেলখানা মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ করছিলেন।

শুক্রবারও (১৯ জুলাই) সেখানে একই রকমভাবে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছিলেন। তবে সেদিন সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খুব একটা দেখা যায়নি। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ করেই হাজারো জনতা কারাগারের দিকে এগোতে থাকে।

তারা গিয়ে সেখানে প্রথমে ইট-পাটকেল, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। হামলাকারীদের প্রায় সবার হাতে লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এ সময় প্রাথমিকভাবে কারারক্ষীরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কিন্তু এক পর্যায়ে কারারক্ষীরা পিছু হটে। তখন হামলাকারীরা কারাগারের দুই দিকের ফটক অনেকটা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হামলায় চার কারারক্ষী গুরুতর আহত হয়। পরে কারারক্ষীরা নিরুপায় হয়ে জেলখানার ভেতরে ঢুকে নিজেদের রক্ষা করেন। জেল কোড অনুযায়ী, গুলি করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা মূল কারাগারের ভেতরে ঢুকে সেলগুলো শাবল ও লোহার জিনিসপত্র দিয়ে ভেঙে কয়েদিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিছু কারারক্ষীর কাছ থেকে চাবি নিয়েও সেলের তালা খোলা হয়।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কয়েদিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নয় সদস্য ছিল; যাদের মধ্যে দুজন নারী। কোনো কোনো সাধারণ কয়েদি পালিয়ে যেতে না চাইলে তাদের মারধর করে জেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা কারাগারের পোশাক নিয়েই পালিয়ে যায়।

কারারক্ষীরা পিছু হটার পর অস্ত্রভাণ্ডার ভেঙে মোট ৮৫টি অস্ত্র ও কয়েক হাজার গুলি লুট করে হামলাকারীরা। এ সময় কারাগারের ভেতরে কয়েদিদের থাকা খাবারও লুট করা হয়। বন্দীদের কাছে থাকা টাকাও ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

কারাগারের ভেতরে কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের থাকার কোয়ার্টার ও ব্যারাক রয়েছে। সেসব আবাসিক ভবনে অনেকে পরিবার নিয়েও থাকেন। হামলাকারীরা সেসব ভবনেও হামলা চালায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। লুটপাটও চালানো হয়। হামলার সময় পুরো আবাসিক এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের পরিবার আবাসিক এলাকার ভেতরে মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেও হামলার চেষ্টা চালানো হয়।

হামলার বর্ণনা দিয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “আক্রমণের সময় কয়েক হাজার হামলাকারী এসে প্রথমে কারাগারের মূল ফটক ভেঙে ফেলে এবং ভেতরের ফটক আক্রমণ করলে কারারক্ষীরা প্রথমে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে।”

একপর্যায়ে জেল সুপার, জেলারসহ অন্যরা নিজেদের কক্ষ ছেড়ে জেলের ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং তারা বন্দিদের সঙ্গে মিশে যান। এতেই তাদের প্রাণরক্ষা হয় বলে জানান জেল সুপার।

তিনি বলেন, “হামলাকারীরা প্রতিটি সেলে ঢুকে শাবল, চাপাতি, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে তালা ভেঙে কয়েদিদের মুক্ত করে এবং পালাতে উৎসাহ দেয়। এ সময় অস্ত্র ও চাল-ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য লুট হয়।”

এ ঘটনার সময় জেলা পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল জানিয়ে জেল সুপার বলেন, “আমি বিষয়টি পুলিশ সুপারকে অবহিত করি। তখন পুলিশ সুপার জানান, তিনি নিজেও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন। ফলে তিনি আমাদেরকেই কারাগার রক্ষার ব্যবস্থা নিতে বলেন।”

কারাগার যেন ধ্বংসস্তূপ

কারাগারে বন্দীদের থাকার জায়গা, রান্নাঘর, কনডেমড সেল ও অফিস এখন আর আলাদা করে চেনার উপায় নেই। সবখানে পোড়া চিহ্ন, লন্ডভন্ড অবস্থা। দেখে মনে হয়, যুদ্ধক্ষেত্রের কোনো ধ্বংসস্তূপ। গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারে ঢুকে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

কারাগারে গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাদাপোশাকে আছেন। কারাগারের অফিস, রান্নাঘর, বন্দীদের থাকার জায়গা, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের থাকার কনডেমড সেলসহ পুরো এলাকায় আগুনে পোড়ার দাগ। আশপাশের উৎসাহী লোকজন কারাগারের ভেতরে ঢুকে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। কেউ কেউ কারাগারের বাগানের ফুল-ফল ছিঁড়ে বাড়ি নিয়ে গেছেন।

বন্দীদের কারাগার থেকে চলে যাওয়ার সময়কার কথা উল্লেখ করে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বের হয়ে যাওয়ার সময় বন্দীদের অনেকে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এক বন্দী তাকে বলেছেন, তার ২৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি ১০ বছর সাজা খেটেছেন। তিনি এখন সুযোগ পেয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments