Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদপ্রতি এক সিরিজে ১৫ লাখ টাকাও নিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ

প্রতি এক সিরিজে ১৫ লাখ টাকাও নিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ

জয় বাংলাদেশ: খালেদ মাহমুদ আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেই—ভাবতেই কেমন লাগে! বুধবার বিসিবিতে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার খবর জানার পর সবার প্রথম অনুভূতিটা এ রকমই হওয়ার কথা। প্রায় ১২ বছর ধরে বোর্ড পরিচালক থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক ক্ষেত্রেই বিচরণ ছিল জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়কের। সেই মাহমুদ এখন আর বিসিবির পরিচালকই নন!

আরেক সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমানের মতো মাহমুদও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিসিবির পরিচালকের পদ ছেড়েছেন। যদিও ফারুক আহমেদের বোর্ডে তাঁর আর না থাকতে চাওয়ার কারণটা একরকম ‘ওপেন সিক্রেট’ই। সাবেক সভাপতির সঙ্গে শেষ দিকে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হলেও একসময় মাহমুদ ছিলেন নাজমুল হাসানের আস্থাভাজন পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম।

বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের সংস্কারমুখী চিন্তাভাবনায় তাঁর মতো পরিচালকেরা থাকবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। মূলত সেই বার্তা বুঝেই ২০১৩ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে বিসিবির পরিচালক হওয়া মাহমুদের সরে যাওয়া।

গত এক যুগে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসনে নাজমুল হাসানের পর দ্বিতীয় আলোচিত–সমালোচিত ব্যক্তি ছিলেন খালেদ মাহমুদ। সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার অতীত তো ছিলই, সঙ্গে বোর্ড পরিচালক হওয়ার আগেই পেশা হিসেবে কোচিংকে বেছে নেওয়ায় মাঠের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগটা ভালোভাবে ছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাই মাহমুদের বিচরণ ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটের মাঠ থেকে জাতীয় দল হয়ে বিসিবির বোর্ড রুম আর প্রেসিডেন্ট বক্স পর্যন্ত। তাঁর ইচ্ছাই অনেক সময় পরিণত হয়েছে নীতিতে।

নাজমুল হাসানের বোর্ডে ‘স্বার্থের সংঘাত’ কথাটি এসেছেই মাহমুদকে কেন্দ্র করে। বোর্ড পরিচালক হয়েও তিনি ক্লাবের কোচিং করিয়েছেন, এমনকি একই মৌসুমে একাধিক লিগে একাধিক ক্লাবেরও কোচ ছিলেন। কোচিং করিয়েছেন বিপিএলে আর প্রাইভেট একাডেমিতেও।

প্রভাবশালী দলের কোচ হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ার–ম্যাচ রেফারিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ অনেকবারই উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট নামমাত্র হয়ে যাওয়ার পেছনেও তাঁর ভূমিকার কথা শোনা যায়। এসবের কিছুই অজানা ছিল না বিসিবির তৎকালীন সভাপতি নাজমুল হাসানের। সংবাদমাধ্যমেও বিভিন্ন সময়ে এসেছে এসব খবর।

তবু মাহমুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনি। একটা কারণ তো তিনি ছিলেন ক্ষমতাশালীদের ছায়ায় থাকা বোর্ড পরিচালক। তার ওপর তিনি যেসব ক্লাবের কোচ ছিলেন, সেগুলোও ছিল বোর্ডের প্রভাবশালী চক্রসংশ্লিষ্ট।

পরিচালক হিসেবে সর্বশেষ বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান ছিলেন মাহমুদ, সঙ্গে ছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান পদেও। এর বাইরেও বিভিন্ন সময় তাঁকে বিভিন্ন পরিচয়ে আবির্ভূত হতে দেখা গেছে। জাতীয় দলের সঙ্গেও সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন অনেক সময়। দায়িত্বপালন করেছেন প্রধান কোচ, অন্তবর্তীকালীন কোচ, সহকারী কোচ, টিম ম্যানেজার, এমনকি টিম ডিরেক্টর হিসেবেও। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এসবের জন্য কখনো কখনো বিসিবি থেকে মোটা অঙ্কের সম্মানীও নিয়েছেন তিনি, যা সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ লাখ টাকায়ও উঠেছিল।

২০১৮ সালের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে মাহমুদ ছিলেন বাংলাদেশের ‘হেড অব টিম’। তার কয়েক মাস আগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বিসিবির চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় ওই সিরিজে দলে কোনো প্রধান কোচ ছিলেন না, রিচার্ড হালসল ছিলেন সহকারী কোচের দায়িত্বে। কিন্তু পরে ‘হেড অব টিম’ মাহমুদই নেন প্রধান কোচের ভূমিকা। শুধু ওই সিরিজের জন্যই তিনি বিসিবির কাছ থেকে সম্মানী নিয়েছিলেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষে স্টিভ রোডসের বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কা সফরে প্রধান কোচ হিসেবে গিয়েছিলেন মাহমুদ।

ফারুক আহমেদ বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছেন, স্বার্থের সংঘাত হয়, এমন কিছুই হতে দেবেন না বোর্ডে। সেটি হলে বোর্ড পরিচালক পদে থেকে অন্তত ক্লাব ক্রিকেট আর বিপিএলে কোচিং করানোর পথ বন্ধ হয়ে যাবে মাহমুদের। নাজমুল হাসানের সহচর পরিচালক হিসেবে ফারুক আহমেদের বোর্ডে থাকার অস্বস্তির পাশাপাশি কোচিংয়ের পথ খোলা রাখাটাও মাহমুদের পদত্যাগের একটা কারণ হতে পারে।

নাঈমুর ও মাহমুদের পদত্যাগের পর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচিত পরিচালকের এ দুটি পদ ফাঁকাই থাকবে, নাকি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালক নেওয়া হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালক আনারই চিন্তা তাদের।

বিসিবির নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্যে ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম পদত্যাগ করেন নাঈমুর। এনএসসির অনুরোধে এর আগে সরে দাঁড়িয়েছেন এনএসসি মনোনীত পরিচালক জালাল ইউনুসও। এনএসসি মনোনীত আরেক পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম পদত্যাগে রাজী না হওয়ায় এনএসসিই সরিয়ে দেয় তাঁকে। এ দুজনের জায়গা নিয়েই বোর্ডে আসেন বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীন।

নিষ্ক্রিয় থাকলেও সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান ও পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী এখনো বিসিবির পরিচালক পদ ছাড়েননি। তবে নাজমুল হাসান সভাপতির পদ থেকে এবং শফিউল আলম চৌধুরী উইমেন্স উইং প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

মাহমুদ পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরে যাওয়ায় বিসিবির স্থায়ী কমিটিগুলোতেও স্বাভাবিকভাবেই আর থাকবেন না তিনি। তার মানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে খালেদ মাহমুদ আর কোনো ভূমিকাতেই নেই। কী অবিশ্বাস্য! অবশ্য অবিশ্বাস্যই বা কীভাবে বলা? সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই কি কখনো ভেবেছিলেন, তাঁরও একদিন পতন হবে!

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments