নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের চার্চ এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সবচেয়ে বড় মিলনমেলা ‘ব্রুকলিন মেলা’। এবারও মেলায় সবমিলিয়ে দর্শক উপস্থিত হয়েছিল ২০ হাজারের ওপরে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবারও বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রে-শীপ সোসাইটি তাদের সাংগঠনিক সাফল্য দেখিয়েছে। ১৯ মে, রোববার মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর, পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস এর প্রেসিডেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, এই বর্ণাঢ্য মেলা আমাদের আগামী নেতৃত্বের উজ্জলতা বহন করছে। এটি ব্রুকলিন মেলা হলেও এটি সমগ্র বাংলাদেশি কমিউনিটি তথা দক্ষিণ এশিয়ার মেলা। মেলায় এর বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। গোটা জনগনগোষ্ঠির মধ্যে একতা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। মেলার সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন আয়োজক সংগঠক বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রে-শীপ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম। মেলার মূল মঞ্চে সঞ্চালক ছিলেন আশরাফুল হাসান বুলবুল ও বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রে-শীপ সোসাইটির সেক্রেটারি, সন্দ্বীপ ইউনাইটেড এর প্রেসিডেন্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদকজয়ী শ্যুটার এস এম ফেরদৌস।
ব্রুকলিন মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন থাউজেন্টস শেডস অফ উইমেন এর প্রেসিডেন্ট ডিওর ফল, অ্যামব্যাসেডর জেরি কবেনা আডিনক্রা, থাউজেন্টস শেডস অফ উইমেন এর ইন্টারন্যাশনাল কো অর্ডিনেটর সেরিঙ্গে বারা নাদিয়ে। মেলায় সম্মাণিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক গঞ্জালেস, ৬৬ প্রিসেন্টের কমা-িং অফিসার কেনেন হ্যারাটে, ক্যাপ্টেন ক্রিস্টোফার জোসেফ, কমিউনিটি অ্যাফেয়য়ার্স ৫ বরো’র ডেপুটি কমা-ার রিচার্ড টেইলর, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ৬৬ প্রিসেন্ট এর সার্জেন্ট উইং চ্যাং, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জেমস, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অল বরো সার্জেন্ট আব্দুল লতিফ, নোয়াখালী সমিতির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান, চার্চ ম্যাকডোনাল্ড বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতি রফিক পাটোয়ারি, সেক্রেটারি মোহাম্মদ বাবুল, সাউথ এশিয়ান আছাল এর মোহাম্মদ করিম, সার্জেন্ট তাকি, মাইমুনাটিস হসপিটালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডগলাস জ্যাবলান।
মেলায় স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক প্লাটফরম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস এর স্টলে আসেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির নেতৃত্বাস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। তারা ডেমোক্র্যাট রাজনীতির এই নতুন প্লাটফরমে যুক্ত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথি স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ মেলার উচ্ছসিত ২০ হাজারের বেশি দর্শকের উদ্দেশ্যে বলেন, হাজারো মানুষের এই উত্তাল জনস্রোত, লক্ষ স্বপ্নের জন্ম দিতে পারে। আমি জন্মগতভাবে যোদ্ধা। বিশাল সমাবেশে আমার জাতির মাঝে অন্তত. একটি বার্তা আমি পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে কতটা সতর্ক। সন্তানেরা স্কুলে কাদের সঙ্গে মেলামেলা করছে, আমাদের পরিবার বহুজাতিক সমাজে কাদের সঙ্গে মিশছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকাও আমাদের যুদ্ধ। মানুষ হিসেবে সব মানুষের প্রতিই আমাদের ভালোবাসা আছে। কিন্তু এই যুদ্ধের কথাটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তিনি নতুন সংগঠন পিপল আপ এর পথচলা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এই সংগঠন গড়ে তুলেছি, এর মাধ্যমে দুজন স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বারকে এনডোর্স করেছি। ধাপে ধাপে আমরা নিউইয়র্কের সকল জাতিগোষ্ঠির মাঝে আমাদের স্বকীয়তা নিয়েই মূলধারায় নেতৃত্ব করার আশা রাখি।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বঙ্গোপসাগরের পাড়ে জন্মেছি। আজ আটলান্টিকের পাড়ে এসে আমরা মাথা তুলেছি। আমরা এই নিউইয়র্কের সকল ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের সাক্ষর রেখেছি। নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ বিভাগে, ব্যবসায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ সকল ক্ষেত্রেই আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি এটি আমাদের গর্বের বিষয়।
মেলা মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন, বাউল কালা মিয়া, ত্রিনিয়া হাসান, রানু নেওয়াজ, শাহ মাহবুব, অনিক রাজসহ প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানে মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ এস এম রেজা, কো চেয়ারম্যান আবছার উদ্দিন, আহ্বায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ, প্রধান উপদেষ্টা অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, উপদেষ্টা মনির আহমদ কামাল, কামাল হোসেন মিঠু, প্রধান সমন্বয়ক নূরুল আজিম, সমন্বয়ক আহসান হাবিব, সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দি, সালেহ মানিক, প্রফেসর আজাদ, মোহাম্মদ হাসানসহ মেলার সকল পৃষ্ঠপোষক ও আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শতাধিক গণ্যমাণ্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলায় গোটা চার্চ এভিনিউতে বসেছিল বিভিন্ন পণ্য সামগ্রির ৭০টি স্টল।
ব্রুকলিন মেলায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রবাসের সবচেয়ে বড় সংগঠন সন্দ্বীপ সোসাইটির আয়োজনে মেলায় উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শকদের জন্য সাস্বাদু খাবার, পানীয় ও চা পরিবেশন। তারা মেলার শৃংখলা রক্ষা ও অতিথি আপ্যায়ণের ক্ষেত্রে অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত গড়েছেন।
স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সন্দ্বীপ সোসাইটি ও সন্দ্বীপ ইউনাইটেড এর সকল নেতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা তাদের তৎপরতা দিয়ে প্রমাণ করেছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য সদা প্রস্তুত। তিনি বাংলা সিডিপ্যাপ, অ্যালগ্রা হোম কেয়ারসহ জয় বাংলাদেশ, জেবিটিভি ও দ্য বে ওয়েভ এর সকল কর্র্মী সার্বক্ষণিক মেলায় উপস্থিত থেকে আন্তরিকতার প্রমাণ রেখেছেন, এটি আমার গৌরবের অংশ। তিনি সকল সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে মেলার অংশ হওয়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।