Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদবাংলাদেশকে নিয়ে ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদন:বিক্ষোভে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

বাংলাদেশকে নিয়ে ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদন:বিক্ষোভে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

জয় বাংলাদেশ: দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভের পর সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগের গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনার ক্ষেত্রে নির্বিচার বল প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি পাখি শিকারে ব্যবহৃত অস্ত্র, বুলেটসহ নানা রকম প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন।

‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গণমাধ্যম এবং আন্দোলনে যুক্তদের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ এবং পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ৬৫০ জন বাংলাদেশি প্রাণ দিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) ১০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশ করেছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের পতন হয়। এ পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গতকাল জেনেভা থেকে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সন্ধিক্ষণে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংঘাতের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জোর দিচ্ছি।’

অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে জুনের মাঝামাঝি বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বেকারত্বের উচ্চ হার এ আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। এই আন্দোলনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতা আর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে অন্তত ৩২ শিশুসহ কয়েক শ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি বলেছে, বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ আর বিক্ষোভের পর সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগের গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ক্ষেত্রে নির্বিচার বল প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি পাখি শিকারে ব্যবহৃত অস্ত্র, বুলেটসহ নানা রকম প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির লাঠি, ইট বা অপ্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাবার বুলেট এবং পিলেট শটগান, হ্যান্ডগান, রাইফেলসহ আগ্নেয়াস্ত্রের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার এবং মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে।

জাতিসংঘ বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার সহিংসতার মাত্রাকে তীব্রতর করেছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন যানবাহন এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে, যেগুলোতে জাতিসংঘের লোগো ছিল; যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশি দলগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

গণমাধ্যম এবং আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে ৬০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর ৫ থেকে ৬ আগস্ট প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই সময়কাল থেকে পরবর্তীকালে প্রতিশোধমূলক হামলায় নিহতের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। ৭ থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে বেশ কিছু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাঁরা সহিংসতায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিক্ষোভকারী, পথচারী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ও পথচারী আহত হয়েছেন। রোগীদের ভিড়ে হাসপাতালগুলো উপচে পড়েছে। নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যার বিষয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্ভবত প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম। কারণ, কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ এবং চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে তথ্য সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া হাসপাতালগুলোকে নিহত ও আহতদের বিশদ বিবরণ কাউকে না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার পতনের দিন গণভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ অনেক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। শুধু ৫ ও ৬ আগস্ট ২৭ জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও স্থাপনায় হামলা-লুটপাট হয়েছে। এর আগে ৩০ জুলাই সরকার চিঠি পাঠিয়ে ওএইচসিএইচআরকে জানায়, পুলিশের ২৩৫টি স্থাপনা, মেট্রোরেল স্টেশন, এক্সপ্রেসওয়েসহ শত শত সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিক্ষোভ চলার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে তাজা গুলি ব্যবহার করেছে। এ রকম একটি ভিডিওতে রংপুরে আবু সাঈদ নামের একজন ছাত্রকে হত্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। এই ছাত্র এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে ছিলেন। তখন পুলিশকে সরাসরি তাঁর বুকে গুলি করতে দেখা যায়। পুলিশ অন্তত দুবার গুলি চালালে আবু সাঈদ তাঁর বুক চেপে ধরেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক যুবক আহত অন্য যুবককে নিরাপদে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর কিছুক্ষণ পর হেলমেট পরা সাদাপোশাকের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে তাঁদের দিকে গুলি চালাতে দেখা যায় এবং মারাত্মকভাবে আহত ব্যক্তিটিকে পেছনে ফেলে যুবকটি পালাতে বাধ্য হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত শুধু ঢাকায় ২৮৬টি ফৌজদারি মামলা হয়। এসব মামলায় ২ হাজার জনকে শনাক্ত উল্লেখ করে এবং অন্তত সাড়ে ৪ লাখ অশনাক্ত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলাগুলোতে নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়, যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিরোধী দলের নেতা–কর্মী। বাংলাদেশে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) প্রায়ই শত শত ব্যক্তিকে ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা নির্বিচার গ্রেপ্তার কিংবা আটকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। তল্লাশিচৌকি বসিয়ে মানুষের মুঠোফোন দেখে দেখে পুলিশের সহিংসতার প্রমাণ মুছে ফেলা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া বেশির ভাগ মানুষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি, আইনি সুরক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি, এমনকি তাঁরা কোথায় কীভাবে আছেন, সে তথ্যও পরিবারকে জানানো হয়নি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অবিলম্বে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা, দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা
আন্দোলনের এক পর্যায়ে পারস্পরিক যোগাযোগ সীমিত করে দেওয়া হয়। ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এবং ৪ ও ৫ আগস্ট সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রভাব ফেলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকারের ওপর। তৎকালীন সরকার বলেছে, বিক্ষোভকারীদের হামলার কারণে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়। কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পেরেছে, সরকার নিজেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করেছে। তথ্য প্রচারে বাধা দিতে ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমন্বয় বন্ধ করতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে সরকার। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ায় সংবাদপত্রগুলোর অনলাইন সংস্করণ বন্ধ হয়ে যায়।

ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য পাওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।

স্বাধীন চলাচলে বাধা
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (অনুচ্ছেদ ১৩) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে (অনুচ্ছেদ ১২) স্বাধীনভাবে চলাচলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে; যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু দেশজুড়ে কারফিউ জারি করার মানুষের স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। যোগাযোগ সীমিত হয়ে যায়; যা অন্যান্য মৌলিক অধিকারের ওপরও প্রভাব ফেলে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া ব্যাহত হয়।

সুপারিশ
শেষে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রাথমিক বিশ্লেষণে। এতে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমনে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং আর কোনো হতাহত এড়ানো ও যেকোনো মতাদর্শের রাজনৈতিক বিরোধীদের নিপীড়ন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তাদের প্রতি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার সমুন্নত রাখা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উসকানিমূলক যেকোনো কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক মানবাধিকারের প্রক্রিয়া মেনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারকে বলপ্রয়োগ সীমিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া, যেকোনো বিক্ষোভ ও জনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) মোতায়েন থেকে বিরত থাকা এবং এই বাহিনীগুলোর কার্যক্রম, কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ, জবাবদিহি ইত্যাদি বিষয়ে সমন্বিত পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ যেকোনো প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারের অন্যান্য বাহিনীকে নির্দেশনা দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের ঘটনা তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। নির্বিচার আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাম্প্রতিক সব ঘটনায় মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সমন্বিত তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে; যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার কিংবা অন্য সহিংস বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়। আন্দোলনে নির্বিচার বলপ্রয়োগকারী বা নির্দেশদাতার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ও অন্যান্য রেকর্ডসহ সব ধরনের প্রাসঙ্গিক প্রমাণাদির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তথ্য অনুসন্ধান ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে হবে, যাতে সহিংসতার শিকার ব্যক্তির প্রতিকার পেতে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও নিরাপত্তা খাত সংস্কারে কাজে লাগে।

কীভাবে হবে জাতিসংঘের তদন্ত
হত্যাকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে কাজ করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। গত বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফোনালাপে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে তদন্তের বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল বাংলাদেশে আসছে। এ সময় ঢাকায় এসে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজের ধারা, প্রক্রিয়া, শর্তসহ সব বিষয় চূড়ান্ত করবেন। ফলে ঢাকায় যে দলটি আসছে, সেটিই যে জাতিসংঘের মূল তথ্যানুসন্ধানী দল, এটা এখনো বলার সময় আসেনি।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা তিনটি উপায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার চাইলে যেকোনো দেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে তথ্যানুসন্ধান দল পাঠাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের কোনো প্রভাবশালী সদস্য একটি দেশে এ ধরনের তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠাতে চাইলে মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাব আনবেন। প্রস্তাবটি পাসের পর সেই দেশে মিশন পাঠানো হয়ে থাকে। তৃতীয়ত, কোনো দেশ যদি নিজেদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও স্বচ্ছতা পুরোপুরি নিশ্চিতের স্বার্থে জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চায়, সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘ অনুরোধকারী দেশে তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠায়।

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments