সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। গত সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্টদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে তারা প্রতি ঘণ্টায় ভোট পড়ার তথ্য জানতে চেয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে কীভাবে ভোটের হার পাওয়া গেছে তা তুলে ধরা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। যদিও এখনো সংশ্লিষ্ট তিনটি কারিগরি টিমের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ইইউ, আইআরআই ও এনডিআই-এর কারিগরি টিমের সদস্যরা ইসির আইন শাখা, জনসংযোগ শাখা ও লাইব্রেরির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে কারিগরি টিমের সদস্যরা দুপুরে ইসির অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে ইইউ ও মার্কিন দুই সংস্থা নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ও ইসির ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপসের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। ভোটের শেষ মুহূর্তে হঠাৎ হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে তার প্রশ্ন ছিল সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ভোট পড়ার অস্বাভাবিক হার নিয়ে তার প্রশ্ন তোলেন। এজন্য তারা প্রতি ঘণ্টায় ভোট পড়ার তথ্য জানতে চান। প্রতি ঘণ্টায় কয়জন ডেটা ইনপুট দিয়েছে, কতজন দিতে পারেনি—এই তথ্যও চেয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারা কপি চেয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভোটের হার নিয়ে খবর দেখে তারা মনে করছেন, ভোটে অনিয়ম হতে পারে। এরপর ইসির সিস্টেম ম্যানেজারকে ডেকে এনে অ্যাপস সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভোটের দিন অনেকেই নির্ধারিত সময়ে ডেটা এন্ট্রি দিতে পারেনি। তিনটি জেলায় মোটেই দিতে পারেনি। পরে তারা প্রতি ঘণ্টায় অ্যাপসে কতজন এন্ট্রি দিয়েছে পুরো স্টেটমেন্ট চেয়েছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেওয়া হবে। কারণ কমিশন মনে করে সবকিছু স্বচ্ছভাবেই করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ইত্তেফাককে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের টেকনিক্যাল টিম এবং এনডিআই ও আইআরআইয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। তারা মূলত নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। আমরা তাদের সব তথ্য দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কারিগরি টিমের সদস্যরা যা জানতে চেয়েছেন তার ডিটেলস দেওয়া হয়েছে। কেননা দুপুর ২টা পর্যন্ত অনেক প্রিজাইডিং অফিসার ডাটা এন্ট্রি করেননি। সেটি তাদের ক্লিয়ার করা হয়েছে। আমাদের তথ্যে তারা যথেষ্ট সন্তুষ্ট।
৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ চলার সময় গণমাধ্যমের কাছে তিন দফা ভোট পড়ার হার জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেদিন প্রথম দুই দফা ইসি সচিব এবং ভোট শেষে সিইসি গণমাধ্যমে ব্রিফিং করেন। সেই হিসাব অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত গড়ে ১৮.৫ শতাংশ, এরপর বেলা ৩টার পর জানানো হয় ২৭.১৫ শতাংশ এবং বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর সংবাদ সম্মেলনে সিইসি প্রথমে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য জানান। কিন্তু তখন সচিব সিইসিকে মৌখিকভাবে জানান, স্যার সংখ্যাটা ৪০ শতাংশ হবে। লিখিত কোনো হিসাব ছাড়াই তখন সিইসি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, সংখ্যাটা ৪০ও হতে পারে, এর কমবেশিও হতে পারে। এরপর থেকেই ভোটের হার নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। শেষ এক ঘণ্টায় ভোট দেখানো হয় ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১ কোটি ৭৬ লাখ ভোটার শেষ এক ঘণ্টায় ভোট দেন। যেখানে মোট ভোটের প্রদত্ত হার দেখানো হয় ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর বিভিন্ন প্রার্থীরাও শেষ ঘণ্টায় ভোট কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। ভোট পড়ার হারসহ ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে চ্যালেঞ্জ করার আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি।