জয় বাংলাদেশ: শীর্ষস্থানীয় পরাশক্তি এবং তথাকথিত ‘বৈশ্বিক মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যুদ্ধ কবলিত অঞ্চলের মানুষের কাছে নানা আশা-প্রত্যাশার বিষয় থাকে এই নির্বাচন ঘিরে।
দীর্ঘদিন ধরেই গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের তাণ্ডব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সুদানের গৃহযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিহত ও লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওয়াশিংটনের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এসব সংঘাত আরও খারাপ হতে পারে বা শেষ হতে পারে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় গত এক বছর ধরে টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধে ইসরাইলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক মাসে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির জন্য তথাকথিত আলোচনা করেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেনি জো বাইডেনের নেতৃত্বধীন মার্কিন প্রশাসন।
এ অবস্থায় গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের কাছে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বাস্তুচ্যুতদের বেশিরভাগ বলছেন, মার্কিন নির্বাচন তাদের ভাগ্য বদল করবে না। কারণ দেশটির নীতি ইসরায়েলকে আত্মরক্ষার নামে সাহায্য করা।
অনেকে মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে গাজায় রক্তপাত বন্ধ হতে পারে। কেননা তিনি বার বার যুদ্ধ বন্ধের উপর জোর দিয়ে কথা বলেছেন। যদিও রিপাবলিকান এই প্রার্থী কট্টর ইসরায়েলপন্থী হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে, কমলা হ্যারিস ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত তিন সন্তানের মা এলাবেদ আল জাজিরাকে বলছিলেন, আমি এই নির্বাচন এড়িয়ে যাচ্ছি। কারণ কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প কেউই এমন কোনো নীতি গ্রহণ করেননি, যা স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের বোমা বন্ধ করতে সাহায্য করবে।
দেইর আল-বালাহতে বাস্তুচ্যুত সালেহ শোনার বলেন, আমেরিকান নির্বাচন কোনোভাবেই যুদ্ধকে প্রভাবিত করবে না এবং প্রভাব ফেলবে না। এটি আমেরিকান ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে তবে গাজার ফিলিস্তিনিদের নয়। আমেরিকানরা গাজার যুদ্ধে অংশীদার। শিশু, নারী এবং বয়স্কদের নির্মূলে তারা দায় এড়াতে পারে না।
হামাদা নামে আরেক শরণার্থী বলেন, ‘আমরা আল্লাহর কাছে বলি, আশা করি যে এটি (মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল) ফিলিস্তিনিদের পক্ষে হবে। কারণ ফিলিস্তিনিরা ক্লান্ত, তারা ভুগছে। বাইডেন চার বছরে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কিছুই দেননি। তিনি একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আরব আমেরিকানরা ভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা বলছেন। কেউ কেউ হ্যারিসকে সমর্থন করছেন, কেউ ট্রাম্পকে। কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, কমলা ইসরায়েলে অস্ত্রের প্রবাহ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ ট্রাম্পকে ‘যুদ্ধবিরোধী প্রার্থী’ হিসাবে দেখছেন।
এ অবস্থায় আরব আমেরিকানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে কাউকেই বেছে নিচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ট্রাম্প-হ্যারিসের বাইরে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা