সিলেট বাদে সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহের আরও বিস্তৃতি ঘটেছে গতকাল। আরও উত্তপ্ত-অগ্নিবানে ওষ্ঠাগত জনজীবন-প্রাণিকূল। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই অসহ্য দশা। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরে নগর-বন্দর-মফস্বল-গ্রামীণ জনপদে প্রাণ তড়পানো অকল্পনীয় দাবদাহের মধ্যে টানা লোডশেডিংয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সহসা যে এই তাপদাহ থেকে নিস্তার মিলবে এমন আভাস মিলছে না।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, স্মরণকালের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী হবে এবারের হিট ওয়েভ। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রবাহমান থাকতে পারে চলমান অবস্থা। ৩ থেকে ৮ মে’র মধ্যে দেশ-ব্যাপী ব্যাপক কালবৈশাখী ঝড়ের আশংকা করা যাচ্ছে। এই সময়ে বর্ষাকালের মতো একনাগাড়ে ২ থেকে ৩ দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ভারী বৃষ্টির পরেই চলমান তাপপ্রবাহ হ্রাস পাবে। আবহাওয়া অধিদফতর গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছে একটু বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে চেয়ে আছে সারাদেশের মানুষ। শুধু বৃষ্টি হতে পারে সিলেট বিভাগে। বাকি সব বিভাগের অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহ। আগামী ৫ দিনেও এই আবহাওয়ার কোনো পরিবর্তনের আভাস নেই। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে আরও ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল ১৩ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহর বিস্তার ঘটেছে। একদিন আগে ছিল ৬ জেলায়। পুড়ে যাচ্ছে খুলনা বিভাগ। গতকাল দুপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মোংলায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া রাজশাহী ৪১ দশমিক ৩, পাবনার ঈশ্বরদী ৪১ দশমিক ২,দিনাজপুর ৪০ দশমিক ৫,সৈয়দপুর ৪০, খুলনা ৪০ দশমিক ২,সাতক্ষীরা ৪০,যশোর ৪১ দশমিক ২,চূয়াডাঙ্গা ৪১ দশমিক ২,কুমারখালী ৪০ দশমিক ৮,ফরিদপুরে ৪০ দশমিক ৪,গোপালগঞ্জে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট-শ্রীমঙ্গল ছাড়া সকল জেলায় তাপপ্রবাহ কবলিত। তাপমাত্রার পারদ এমন প্রদর্শিত হলেও বাতাসে জলীয়বাস্পের আধিক্যের কারণে গরম অনুভূত হচ্ছে অনেক বেশি। এই অসহ্য গরমের মুক্তি ও তুমুল বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনায় উন্মুক্ত প্রান্তরে সালাতুল ইসতিসকা পড়ছেন মুসলমানরা। কর্কটক্রান্তি রেখার খুব কাছের মহাদেশীয় বায়ু প্রবাহের প্রবেশদ্বার চুয়াডাঙ্গার অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে নলকূপ-পাম্পে পানি উঠছে না। সুপেয় পানির জন্য চলছে হাহাকার। বরেন্দ্র অঞ্চলে অস্বাভাবিক হারে নামছে ভূগর্ভস্থ স্তর, গভীর নলকূপেও মিলছে না পানি। খুলনার পাইকগাছা-কয়রাসহ উপকূলভাগে পানিতে লবনের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়েছে। উত্তপ্ত পানিতে ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত পূর্বাভাস তথ্য বিশ্লেষণ করে জানান,দেশব্যাপী চলমান এই তাপ-প্রবাহ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপরে অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সিলেট বিভাগ ছাড়া অন্য ৭ টি বিভাগের উপর তাপ-প্রবাহ অবস্থান করছে। ৩ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত দেশ-ব্যাপী ব্যাপক কালবৈশাখি ঝড়ের আশংকা করা যাচ্ছে। বর্ষাকালের মতো একনাগাড়ে ২ থেকে ৩ দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট ও মেঘালয় রাজ্যের উপরে অতিভারি বৃষ্টি আশংকা করা যাচ্ছে। ৪০০ মিলিমিটারের বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হতে পারে। পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও কিশোরগঞ্জের সকল হাওর এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। ২ মে’র পূর্বেই সিলেট ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। তাপ-প্রবাহের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাটা দিনে-দিনে বাড়তে থাকার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। এজন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।