জয় বাংলাদেশ: যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বহু বছর ধরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে আসছে। ১৮৫৩ সালের পর থেকে হোয়াইট হাউজে থাকা সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই এই দুই দল থেকে এসেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান এ দলের প্রতীকও প্রায় শত বছরের পুরোনো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মানেই হাতি ও গাধার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী। এবারের নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
তবে প্রশ্ন হলো, দলীয় প্রতীক হাতি ও গাধাকে কেন বেছে নেওয়া হলো? এমন তো নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দর প্রতীকের দারুণ অভাব। দুটি প্রধান দলকে বিদঘুটে হাতি আর গাধাকেই কেন বেছে নিতে হলো?
আসল কারণটি হচ্ছে এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি প্রতীকশিল্পী একজনই। থমাস ন্যাস্ট নামের এ শিল্পীর নাম মাথা থেকে এসেছে প্রতীক দুটির ধারনা।
তবে ব্যালটে থাকে না এসব প্রতীক। সেখানে থাকে শুধু প্রার্থীর নাম।
সিএনএন এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন চারজন। ওই নির্বাচনে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন নামের একজনকে প্রার্থী করা হয়। সবাইকে অবাক করে জ্যাকসন সর্বোচ্চ ভোট পেলেও, অন্য প্রার্থীদের কূটকৌশলের কারণে তিনি প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্ব পাননি।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার সমর্থকরা নতুন দল গঠন করে, যার নাম ডেমোক্রেটিক পার্টি।
এরপর ক্ষমতাসীন দল ও সমর্থকরা জ্যাকসনকে নিয়ে সংবাদপত্রে হাসি-তামাসা শুরু করে। কিছু পত্রিকা তাকে ‘জ্যাকঅ্যাস’ বলে সম্বোধন করে কার্টুনে গাধার ব্যঙ্গচিত্রের সঙ্গে তুলনা করে। জ্যাকসন নামটি পছন্দ করেন এবং গাধাকে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন।
তখন কার্টুনশিল্পী থমাস ন্যাস্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মাথায় একটি গাধার (জ্যাকঅ্যাস) শরীরের ওপর বসিয়ে কার্টুন আঁকেন। অবশিষ্ট রাজনৈতিক জীবনে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে এই গাধার ছায়া বহন করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর অন্য ডেমোক্র্যাট নেতাদেরও প্রতীক হয়ে ওঠে গাধা। এই প্রতীক নিয়েই ১৮২৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হারান জ্যাকসন।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আব্রাহাম লিংকন এবং দাসপ্রথাবিরোধী হুইগরা মিলে গড়েন নতুন রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টি। ১৮৭৪ সালে থমাস ন্যাস্ট হাতিকে রিপাবলিকানদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেন।
তিনি তার কার্টুনে দেখান, সিংহের চামড়া পিঠে চাপিয়ে একটি গাধা বনের সব প্রাণীকে ভয় দেখাচ্ছে। সিংহের ছদ্মবেশী সেই গাধাকে দেখে সবাই ভয়ে পালাচ্ছে। কেবল স্থির ও অচঞ্চল একটি হাতি ছাড়া।
হাতির এই নির্ভীক বিষয়টাই তুলে ধরেন কার্টুনশিল্পী। থমাস ন্যাস্টের এমন অর্থবহ কার্টুন দারুণ পছন্দ হয় রিপাবলিকানদের। আর হাতি প্রতীকের সেই আইডিয়া লুফে নেন রিপাবলিকানরা। সেই থেকে হাতি হয়ে ওঠে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রতীক।