জয় বাংলাদেশ : দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে আরো উষ্কে দেয়ার সরকারি মনোভাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আমেরিকান রাজনৈতিক প্লাটফরম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস (পিপল আপ) এর প্রেসিডেন্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেন, যোকোনো পরিস্থিতি রক্তপাতহীন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা যেকোনো সরকারের আছে। কিন্তু দমন পীড়ন ও লাগাতার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সরকারই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে চলেছে। প্রকাশ্যে বাক স্বাধীনতা ও তথ্য প্রবাহের অধিকার হরণ করার পরও গতকাল দেশব্যাপী সংঘর্ষে আরো শতাধিক হত্যার খবর যুক্ত হয়েছে। ধরেই নেয়া যায়, এই হত্যার সংখ্যা অগণন।
প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের বাছবিচার না করে কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রকাশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে দমনের ঘোষণা দিয়েছেন। তার বক্তব্যটি এমন ছিল যেন বাংলাদেশ কোনো বহিঃশত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ। সরকার প্রধান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনেক দেরীতে হলেও স্পস্ট করছেন, তারা নিজেরা যেন বাংলাদেশের কেউ নন, অন্য কোনো দেশের। তাদের অস্ত্রশক্তি ও বক্তব্য একাত্তরে শাসকদের যে অবস্থান ছিল তার সাথে হুবহু মিলে যায়। তারা ছিল পাকিস্তানী আর এরা বাংলাদেশে জন্ম নেয়া শাসক। আজ যারা রাজপথে নেমে পতাকা হাতে, দেশরক্ষার মহান প্রতিজ্ঞায় নিজের জীবনকে তুচ্ছ করছেন তারাই বাংলাদেশ।
স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক সেনাসদস্য, পুলিশ, বিডিআর আনসার সদস্য যারা আন্দোলনরত ছাত্রজনতার আন্তরিকতা ও দেশপ্রেম বুঝতে পেরে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ও রাস্তায় চলে এসেছেন তাদের এই অবস্থানের প্রতি সারাবিশ্বের কুটনীতিক, রাজনীতিবিদসহ সকল সাধারণ মানুষ সমর্থন রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের সকল সিনেট সদস্য, কংগ্রেস সদস্য, নিউইয়র্ক স্টেট, সিনেট ও অ্যাসেম্বলি সদস্যবৃন্দসহ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত কর্মকর্তারা বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং সরকারের দমন পীড়নের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ক্রমাগত আক্রমণের কারণে সারাদেশের ছাত্র জনতা আরো জোরালো শক্তিতে রাজপথে নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতি কারো কাম্য ছিল না। তিনি বর্তমান সরকার প্রধানের উদ্দেশ্যে রক্তপাতহীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে নিঃশর্তে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তরের পরামর্শ জানান।
তিনি জানান, গণ অভ্যুত্থান ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীর বাংলাদেশিদের মাঝে। এমনকি প্রতিবেশি ভারতেও বিবেকবান নাগরিকরা উদ্বিগ্ন ও ক্ষুদ্ধ। সীমান্তের এপারের যেকোনো ধরণের অস্থিরতা তাদের কাম্য নয়। তাদের জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে আজ রাজপথে রয়েছে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, দেশ রক্ষার তাগিদেই লক্ষ লক্ষ ছাত্রজনতা গুলির সামনে বুক পেতে দিচ্ছে। এর মধ্যে অশিতীপর বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অবুঝ শিশুরা পর্যন্ত রয়েছে। তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। তারা নির্ভীক তারা উদ্দাম ও বাধাহীন। ইতিহাস বলে, এমন গণজাগরণের মধ্য দিয়েই জাতির নতুন দিক নির্দেশনা তৈরি হয়। আমরা যুদ্ধ করে রাষ্ট্রভাষার অধিকার এনেছিলাম, যুদ্ধ করে অর্জন করেছি বাংলাদেশ রাষ্ট্র। এই সময়ে সম্মুখ যুদ্ধ করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জেগে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। সন্তানের প্রাণহানি, ভাইয়ের হত্যা, স্বজনের ওপর নির্বিচারে গুলি কিংবা বন্ধুকে বধ করার এই দৃশ্যগুলো কোনো মানুষ মেনে নিতে পারছে না। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের ক্ষোভ ও বিদ্রোহ। এই অবস্থায় সরকারি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সরার প্রতি আহ্বান সবাই সবার নিজস্ব জায়গা থেকে দেশ রক্ষার শপথে উজ্জীবিত হোন। রাজপথে নেমে আসা দেশপ্রেমিক ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে হত্যার পথ থেকে সরে আসুন। দমন পীড়ন বন্ধ করুন। একটি জীবন হাজারো সম্পদের চেয়েও দামী।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, দেশের সংকট দেশে নিরসন করতে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ আরো স্পষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকারে বাংলাদেশের হয়ে কেউ প্রতিনিধিত্ব করছেন না। পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব ধংস করা হচ্ছে। কারোর চরম প্রতিশোধের লক্ষবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে। তিনি আন্দোলনে নিহত সকল ছাত্রজনতা, পুলিশ সদস্য, সরকারি বাহিনীর সদস্যসহ সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে বলেন, এই অভ্যুত্থানে যারা প্রকৃত অপরাধী ও হত্যাকারী তাদের প্রত্যেককে যদ্ধাপরাধী হিসেবে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশে যে সংকট তৈরি করা হয়েছে, তার একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপও চেয়েছেন আবু জাফর মাহমুদ।