কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে, চাপ প্রয়োগ করে, নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হলেও রক্তমাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সুযোগ পেলেই শিক্ষার্থীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
সোমবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্নভাবে যে সকল তথ্য আসছে, সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এবং একই সাথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরকেও বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
‘আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেপ্তার অনেককে চার-পাঁচ দিন বা এরও বেশি সময় পর আদালতে নেওয়া হচ্ছে। আটক করার পর আদালতে নেওয়ার আগে এবং রিমান্ডে থাকা অবস্থায়, এমনকি কারাগারে থাকা অবস্থায় আটকদের ওপর অমানুসিক ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসা বাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সাথেও অশালীন আচরণ ও বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর আগেও এসব অন্যায়, অত্যাচার, আটক, নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করা হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিস্ট ও কর্তৃত্ববাদী ভোটারবিহীন সরকার তা কর্ণপাত করেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারের এসব মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানালেও সরকার তা অব্যাহত রেখেছে এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি করছে।
ছাত্র আন্দোলন সরকারের ক্ষমতার ভীত নড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের বেশিভাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে হয়েছেন। পত্রিকার তথ্যমতে, রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। যেসব ছাত্র-জনতকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে।
অনেককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বারবার বলছেন, প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। তাদের এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বাসা বাড়ির বেলকনি, পড়ার ঘর বা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট সোনামনিরা পর্যন্ত বাদ যায়নি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে, সেটির সর্বশেষ প্রমাণ হলো দেশ-বিদেশের সকল নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে মৃত্যু বলা হচ্ছে। তবে মিথ্যাচার, অপকৌশল ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে প্রকৃত সত্যকে জনগণ থেকে আড়াল করতে পারবে না অবৈধ সরকার। তাই সকল দায় নিয়ে সরকারের উচিত জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পদত্যাগ করা।