মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য দখলে নিতে আরাকান আর্মিসহ আরও একটি স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী সংগঠন দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে টানা তিনদিন ধরে আবারও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সীমান্ত দিনে-রাতে দফায় দফায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে। দেখা যাচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকালে টেকনাফ পৌরসভা, সেন্টমার্টিন, সাবরাং, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নসহ ৪০টি গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এখনো রাখাইনের ওপার থেমে থেমে ভেসে আসা বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে এপারের গ্রামের বাড়ি-ঘর।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে থেকে ফের ভেসে আসা একেকটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দে দ্বীপের বাড়িঘর কেঁপে উঠতেছে। জানি না এর শেষ কোথায়। মনে হচ্ছে মিয়ানমারে দুই পক্ষের সংঘাত দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে। তাদের এই বিকট শব্দে ঘুমহীন হয়ে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা রশিদ আহমদ বলেন, টানা কয়েকদিন সীমান্তের এপারে আবারও দফায় দফায় মর্টারশেলের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার তীব্রতা বেশি দেখা যাচ্ছে। একের পর এক বিস্ফোরণে কাঁপছে সীমান্ত। সকাল থেকে হোয়াইক্যং তুলাতুলির ওই দিকে রাখাইনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, সীমান্তে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই বসবাস করছি- সব সময় মনে ভয় নিয়ে থাকতে হচ্ছে। মিয়ানমার ওপার থেকে দিনের পর দিন যে হারে মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে, বাড়িঘরে ভালোমত ঘুমাতে পারছি না। যখন ওখানে ফায়ার হচ্ছে তখন এতোটা বিকট শব্দ হয়, মনে হয় মর্টারশেল আমাদের বাড়ি-ঘরে পড়ছে। তাই কোনোরকম এভাবে সময় পার করছি।
টেকনাফের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, নাফ নদীর ওপাশ থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। আমাদের সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া কোনো রোহিঙ্গা যাতে অনুপ্রেশ করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে যেন না পারে, সেজন্য নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখল করতে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে গত আড়াই মাস ধরে সীমান্তের এপারে একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসতে থাকে। এর আগে আরাকান আর্মিসহ আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বিজিপির ক্যাম্প ও সীমান্ত চৌকিসহ অধিকাংশ অঞ্চল দখল করেছিল।এর মধ্যে নতুন করে আবারও রাখাইনের রাজ্যের আকিয়াব জেলার মংডু ও বলি বাজার শহরসহ সেনা ক্যাম্প দখল করতে হামলা অব্যাহত রেখেছে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী।