Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদরাজাকারের নাতি ইস্যু: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্লোগানে উত্তাল, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজাকারের নাতি ইস্যু: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্লোগানে উত্তাল, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জয় বাংলাদেশ রিপোর্ট: চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রবিবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। হল ছেড়ে বেরিয়ে ছাত্রীরাও ‘আমি কে তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, ‘চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ স্লোগানে দিতে থাকেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে একে একে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও এমন বিক্ষোভ শুরু হয় বলে জানা গেছে।

বিক্ষোভে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বলেছেন, অন্যায্য কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলায় তাদের অপমান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অপমান করার অধিকার কারও নেই। তারা এই অবমাননার প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছেন।

এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা না পেলে, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না? নিজের জীবন বাজি রেখে বিজয় এনে দিয়েছিল বলে সবাই উচ্চপদে আসীন। না হলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে চলতে হতো।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে কোটাব্যবস্থা সংস্কার চেয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ চলাকালেই অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও উত্তাল হয়ে ওঠে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে রবিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি পরে শাখারিবাজার হয়ে তাতিবাজারে যায়। ছাত্রী হলে তালা দিয়ে মেয়েদের আন্দোলনে যেতে নিরুৎসাহিত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ছাত্রীরাও গেটের তালা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দেশের অভিভাবকের কাছে এমন বক্তব্য কখনোই আশা করা যায় না।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ‘তুমি কে, আমি কে— রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের হলে এমন স্লোগান দেয়ার পরিকল্পনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এর প্রেক্ষিতে ৪৯তম ব্যাচের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মো. সাঈফ খান মেসেজ দেন। পরে হলের ১২৪ নম্বর কক্ষ থেকে স্লোগান পুরো হলে ছড়িয়ে পড়ে৷ এ সময় শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পলিটিকাল ব্লক থেকে ৪৮তম ব্যাচের সিনিয়ররা এসে তাদের সবাইকে ডেকে হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যান।

রাত সোয়া ১২টার দিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কখনো সে দেশের ছাত্রজনতাকে রাজাকারের বাচ্চা বলতে পারেন না। তার এমন উক্তির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা এতো রাতেও রাস্তায় নেমেছেন।

এছাড়াও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল করে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য প্রদানকালে মুক্তিযোদ্ধা বাদে সবাইকে রাজাকারের সন্তান ও নাতি বলেছেন। যেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলনে আছেন কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানানো শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ৭ জুলাই থেকে তারা এক দফা দাবির কথা বলছেন। দাবিটি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করা। সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। আজ বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments