Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeনিউইয়র্ক নিউজরাষ্ট্র জন্মের পরেই রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে দলপ্রধানের ব্যক্তিগত হাতিয়ার

রাষ্ট্র জন্মের পরেই রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে দলপ্রধানের ব্যক্তিগত হাতিয়ার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা ষাট ও সত্তরের দশকের ছাত্র রাজনীতির মহানায়ক সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করেছেন তার আদর্শে দিক্ষিত প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই তার জীবনকে উৎসর্গ করেন জাতির জন্য। তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতার বক্তৃতা শুনে নিজের গন্তব্য নির্ধারণ করেননি। তিনি ছিলেন প্রচলিত ধারার বাইরের মানুষ। তিনি যেখান থেকে বাংলাদেশকে দেখতেন, যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানুষের ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করতেন তা প্রচলিত রাজনৈতিক দলনেতাদের সঙ্গে মিলবে না। রাজনৈতিক নেতারা যে প্রেক্ষিতে দল গড়ে তুলে রাজনৈতিক সুবিধা ও  ক্ষমতা ভোগ করে এগুলোর কোনোকিছুই সিরাজুল আলম খানকে ছুঁতে পারেনি। রাষ্ট্র জন্ম দেয়ার পরক্ষণেই আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলকে দলপ্রধানের ব্যক্তিগত হাতিয়ার বানানোর প্রক্রিয়া। এই সত্য সিরাজুল আলম খান উন্মোচন করে গেছেন।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রধান রূপকার সিরাজুল আলম খানের ৮৩তম জন্মদিন পালন করেছে রাজনীতি গবেষণা ও অনুশীলনের সংগঠক পিপল ইউনাইটেড ফর প্রগ্রেস, পিপল আপ। ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ষাট ও সত্তরের দশকের শীর্ষস্থানীয় ছাত্রনেতার জন্মদিন উপলক্ষে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস-এ বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের কর্পোরেট অফিসে ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিপল আপ এর প্রেসিডেন্ট, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর বীর মুক্তিযোদ্ধা স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. এম ওয়াজেদ, টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সিনিয়র সাংবাদিক মঈনউদ্দিন নাসের, প্রথম আলো সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনওয়ারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোমিন মজুমদার, লেখক সাংবাদিক মাহবুব রহমান, হক কথা’র সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন,  রাজনীতিক ও আইনজ্ঞ এড. শেখ আখতারুল ইসলাম, জাসদ নেতা ও সিরাজুল আলম খানের স্নেহভাজন হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন, রফিকউল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ইউএসএ শাখার সভাপতি রহমতউল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক আদিত্য শাহীন।

স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সত্তরের নির্বাচন আমরা যখন ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করে শায়ত্বশাসন আন্দোলনটাকে ত্বরান্বিত করছি, তখন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ পূর্ব পাকিস্তানীদের রায় আমাদের পক্ষে আসে। তখন সেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার মতো লোকও খুব কম ছিল। এত প্রভাব ছিল মুসলিম লীগের। সেই সময়ও এই ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দই নির্বাচনে জয়লাভের জাগরণ সৃষ্টি করে। আমরা সেই যুবশক্তিকে ভুলে গেছি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাখা হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোতে রাখা হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না। দেশ জন্ম হওয়ার আগে  শ্লোগান ছিল গণতন্ত্রের। গণতন্ত্রের জন্য আমরা এত বেশি যৌক্তিক অবস্থানে ছিলাম, সেই মানুষ আমরা যারা কোনোদিন অস্ত্র দেখিনি সামরিক পোশাক দেখিনি তারাই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছি।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র স্বাধীনের পর বড়রা নের্তৃত্ব করবে। নেতারা নেতৃত্ব করবেন সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ৭০ সনে পাকিস্তানী নেতৃত্ব করবার জন্য বা পার্লমেন্টে যাওয়ার জন্য যাদের আমরা নির্বাচিত করি তাদের দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। সেটি কি বাংলাদেশের ছিল না কি পাকিস্তানের ছিল?

ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা রাষ্ট্র বুঝতাম না। এর আগে রাষ্ট্র গঠন করিনি। রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলাম না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যিনি স্বধীনতা যুদ্ধি দেখেননি যার সাথে এর কোনো সম্পর্কও ছিল না, তিনিই যেহেতু সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা তার নেতৃত্বেই সরকার গঠন করা হয়।
এই সরকারটা মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ সরকার হবার কথা। মহান মুুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, যারা সংগঠক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মাধ্যমে না হয়ে পাকিস্তানী পার্লিমেনেটে দায়িত্ব নেয়ার জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে প্রতিটি মানুসের সাহস, দেশপ্রেম শত্রুকে প্রতিরোধ করার যে ক্ষমতা ও চেতনার যে অভূতপূর্ব যে পরিবর্তন হয়, সেই অভিজ্ঞতা যাতে স্বাধীন দেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কাজে না লাগানো হয়, সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে পাকিস্তানপন্থী জনপ্রতিনিধিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

আর যেসব ছাত্র যুবকরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের স্বপ্ন ও চেতনাকে ধুলিস্যাৎ করা হয়েছে একটি শ্লোগান দিয়ে ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, এখন বুঝতে পারি কেন আমরা পরাজিত হলাম। কেন আজ বাংলাদেশ আমাদের নেই।
তিনি বলেন, আমরা শিখিনি কীভাবে রাষ্ট্র চালাতে হয়। যে রাষ্ট্র জন্ম দিলাম সেখানে শুধু একজন নেতা থাকবে, আর কোনো নেতা থাকবেন না। কাউকে স্বীকার করা হবে না। আর কোনো নেতা গড়ে উঠতে দেয়া হবে না। উপরোন্তু অন্যদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে রক্ষীবাহিনী লেলিয়ে দেয়া হবে। দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ করা তরুণদের গু-া বানিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে বাকিদের হত্যা করার তৎপরতা যখন শুরু হয়েছে তখনই স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই রাষ্ট্র আর আমাদের নেই। আমরা আবার পরাধীন হয়ে গেছি। রাষ্ট্র জন্মের পরেই এই ধারা চলে এসেছে।

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সিরাজুল আলম খান বারবার একথাই বলে গেছেন। আমি কয়েক বছর আগে এই নিউইয়র্কেই দাদা ভাইকে জিজ্ঞেক করেছিলাম। তিনি তখন নিউইয়র্কে এল্মহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সুস্থ হয়ে তার রাজনৈতিক অনুসারী জনাব মহসীনের বাসায় ওঠেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম জন্ম হওয়ার আগেই যখন বাংলাদেশ বিক্রি হয়ে গেল, তখন আপনারা তো ভারতেই ছিলেন, কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলাম না কেন? তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিলেন, আরো অনেকেই তো ফ্যাক্টর ছিলেন। স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তখন ভারতের দিল্লিতে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি তার বইতে লিখেছেন, দেশ বিক্রির সেই চুক্তিনামা নিয়ে তাজউদ্দিন সাহেব সাক্ষর করে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাক্ষর নিতে আসেন। তিনিও তাতে সাক্ষর করেন। কিন্তু পরে যখন তিনি চুক্তিনামা পড়ে দেখেন তখন হতাশ হয়ে যান। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চেয়ার থেকে পড়ে যান। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এই জাতি যতদিন যুদ্ধ বুঝবে না, ততদিন রাজনীতি বুঝবে না। যতদিন এই জাতি যুদ্ধ বুঝবে না ততদিন কুটনীতি বুঝবে না।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সকল কিছুতে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের প্রভুত্ব সম্পর্কে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের তথাকথিত নির্বাচন নিয়ে যখন মার্কিন রাষ্টদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে কেন অংশিদারিত্বমূলক নির্বাচন হচ্ছে না মর্মে জানতে চান, তখন পররাষ্ট্র সচিব ষ্পষ্ট জবাব দেন, ভারতের চাপ আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়গুলো সারা পথিবীতেই ছড়িয়েছে।

আবু জাফর মাহমুদ এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রিশংকু অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামীলীগ এত প্রাচীন, এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। আওয়মী লীগের হাই কমা- থেকে এই সংগঠনকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হলো। তিনটি পক্ষকে পরস্পর মুখোমুখি করে দেয়া হলো। এই রাজনৈতিক দলটিকে বিকলাঙ্গ করে দেয়া হলো। দলের ভেতর থেকে যারা এতটা দিন লুটতরাজে অভ্যস্থ হলো, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মালিক হলো। অবৈধ অস্ত্র আর প্রশাসনিক প্ঠৃপোষকতা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হলো, তারা এখন নিজের দলের ভেতরেই একাধিক পক্ষের মুখোমুখি।
তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত কার? এই দলটিই আমাদের। এই রাজনীতি আমাদের। কারণ এই দেশটি আমাদের।

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো পচে গেছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের পথ হয়ে গেছে অন্যায়ের পথ। তারা অন্যায় করে এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়। দেশে একজন সেনা অফিসার হয়ে গড়ে উঠতে কত অবদান থাকে গোটা জাতির। উচ্চ স্তরের সেনা অফিসারগুলো, উচ্চ স্তরের পুলিশ অফিসারগুলো, আমলাগুলো বেশি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীগুলো, দক্ষ ডিপ্লোম্যাটগুলো সবাই প্রতিবেশির হয়ে আমার দেশটাকে ধংসের কাজে অভিযানে যুক্ত।


তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনীতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করিনা। আমি প্রতিনিধিত্ব করি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের।
সকল বক্তারা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক আদর্শ ও স্মৃতি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ষাট ও সত্তর দশকে স্বাধীনতার স্বপ্নদৃষ্টা যে নেতা, তার রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments