বংশানুক্রমিক ধারায় সন্দ্বীপের
সব মানুষের মূল্যবোধ অভিন্ন
গ্লোবাল পিস অ্যাম্বাসেডর ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেছেন, আমরা সন্দ্বীপবাসী। দ্বীপের মানুষ দ্বীপের সমাজকে বিকশিত করেছে। দ্বীপের বিশেষ বৈশিষ্টময় সামাজিকতা লালন করে চলেছে। পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চল অথবা সমতলভূমির মতো দ্বীপাঞ্চলের পারিবারিক সম্পর্ক ও জীবনাচারে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যটা না বুঝে দ্বীপের সমাজ বিশ্লেষণ করতে গেলে সেখানে ভুলের সম্ভাবনা বেশি। সন্দ্বীপে প্রতিটি পরিবার ধনী মধ্যবিত্ত বা নি¤œবিত্ত হোক একে অন্যে বংশানুক্রমিকভাবে আত্মীয়। বংশানুক্রমিক রক্তের ধারায় প্রতিটি পরিবারের সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে অভিন্নতা পাওয়া যায়। শহর নগর বা অপরাপর এলাকায় পরিবার ও সমাজের সাথে দ্বীপের বাস্তবতা ভিন্ন।
ড. আবু জাফর মাহমুদ ৮ জুলাই ২০২৩, নিউ ইয়র্কের লং আইল্যা-ে বেলমন্ট লেক স্টেট পার্কে সন্দ্বীপ গণ উন্নয়ন পরিষদ ইউএসএ ইনক্ আয়োজিত বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠানের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। সন্দ্বীপের কৃতি সন্তান হিসেবে তিনি বনভোজন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সন্দ্বীপের ছয় শতাধিক নারী পুরুষ শিশুর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারীরা আমার পরিবারের একাংশ মাত্র। আমার চেয়ে বয়োবৃদ্ধ কয়েকজনও এখানে রয়েছেন। দীর্ঘদিন পরে তাদের দেখে আমি খুশী হয়েছি। আমার পথচলার প্রেরণার মূলে সন্দ্বীপের বিভিন্ন বয়সী মানুষ রয়েছেন। এদের মধ্যে যারা সুদুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে বাংলাদেশি সংস্কৃতির সবচেয়ে ভালো দিকগুলো উন্মোচিত করছে, তাদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা। তারাই পারিবারিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পরিবার ও সমাজ গঠন করছে। এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।
বনভোজনের আনুষ্ঠানিকতায় সভাপতিত্ব করেন সন্দ্বীপ গণ উন্নয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট এ কে এম সাইফুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান রিপনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অনেকের মধ্যে ছিলেন বনভোজন কমিটির আহ্বায়ক শাফায়েত হোসেন সাফা, সদস্য সচিব ওয়ালিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, মনিরুল ইসলাম, সমন্বয়ক মাকসুদার রহমান, শফিউল ইসলাম ও যুগ্ম সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন।
পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস ‘পিপল আপ’, জয় বাংলাদেশ ইনক্ ও আবু জাফর মাহমুদ ফাউ-েশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট এ- সিইও ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এখনকার সময়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমার ত্রিশটি বছর পার হয়েছে। এই সময়ে বলতে চাই, রাষ্ট্র যদি ভালো মানুষের কাছে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা সহজ হয়। কিন্তু এমন অবস্থাটি অনেক বছর ধরেই নেই। আমাদের শিক্ষা থেকে শুরু করে জ্ঞান ও চিন্তা যা অর্জন করেছি, তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমাদের দেশের জনগণের। আমরা জাকাত দিয়ে যেমন সম্পদ পবিত্র করি, আমাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা পবিত্র করার জন্য আমার পরিবার, সমাজ, দেশ ও বিশ্ব পরিম-লে সেই জাতাকটি দিতে হবে।
ড. মাহমুদ এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের কাছ থেকেই আমি মানবিক কার্যক্রম শিখেছি। আপনাদের প্রেরণায় আমি এই কাজ ধরে রেখেছি বলে আজ জাতিসংঘ থেকে সম্মাণিত হয়েছি। আল্লাহ আমাকে গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর এবং সম্মানসূচক ডক্টরেট এর মর্যাদা দান করেছেন।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, মা বাবার একমাত্র পুত্র হওয়ার পরও আমি এলাকার মানুষের অনুপ্রেরণাকে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে গ্রহণ করেছি। কোনো অপশক্তিকে পরোয়া করিনি। তিনি সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম তথা গোটা দেশের কল্যাণের জন্য সবাইকে ঐকব্যবদ্ধ ও সমাজবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমিতি যদি একটার জায়গায় দশটাও থাকে, এটির পক্ষে আমি। কারণ, সংগঠন সমাজবদ্ধ থাকার একটি প্রক্রিয়া। এক জাতের পাখি একসঙ্গে ওড়ে। এক মনের মানুষ এক সঙ্গে চলে। তিনি নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে আজকের তরুণ সম্প্রদায়কে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুই তিনবার ম্যাট্রিক ফেল করে নিজের নামের সঙ্গে বিএ পাস লিখে ব্যাংক মালিক হয়ে, বাংলাদেশের অর্থনীতি চালাতে চাওয়ার মতো ঔদ্ধত্ব দেখালে হবে না। সেটি অসম্ভব ব্যাপার। লেখাপড়া করে বড় হতে হবে। সততা ও দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।
আবু জাফর মাহমুদ ধর্মীয় সংস্কৃতির শত্রুদের সম্পর্কে বলেন, ইহুদিরা যেমন খ্রিষ্টানদের চার্চগুলো ধংস করছে, এই প্রভাব মসজিদগুলোতেও পড়তে শুরু করেছে। এসব জায়গাগুলোতে মানুষের ইমানের ওপর চাপ পড়ছে। ইমানদার না থাকলে আমাদের অসুবিধা হয়। আমাদের ক্ষতি হয়। আমাদের বংশধরেরা ভুল বোঝে। তারা ধর্মের ব্যাপারে উন্নাসিক হয়ে যায়। একইভাবে জীবনের সত্য সুন্দর পথটিও আর চিনতে পারে না। তাই ধর্মের সঠিক পথের শত্রুদের চিনতে হবে। দেশপ্রেম ও ইমানী শক্তি নিয়ে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
বনভোজনে ছেলে ও মেয়েদের জন্য ছিল পৃথক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ছিল মধ্যাহ্নভোজের বাইরেও দফায় দফায় রকমারি খাবারের আয়োজন।