প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদকে সম্মান ও ভালোবাসায় বিদায় জানালো বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
শুক্রবার (১০ মে) ঢাকা সেনানিবাসস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্কোয়াড্রন লিডার আসিমের ফিউনারেল প্যারেড ও দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
প্যারেডে স্কোয়াড্রন লিডার আসিমের মরদেহকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ওএসপি, এসজিপি, পিএসসি ও বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি এবং নৌবাহিনী প্রধান এর পক্ষ থেকে ঢাকা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মাসুদ ইকবাল এনপিপি, এনডিসি, পিএসসি আসিমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
এসময় স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর পরিবারের সদস্যগণ, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ফিউনারেল প্যারেড শেষে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদকে মানিকগঞ্জ সদর কবরস্থানে বাদ জুমা তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এর আগে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক-এর প্যারেড গ্রাউন্ডে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় এতে আগুন ধরে যায়। এসময় দ্রুত বিমানটিকে লোকালয় থেকে দূরে সরিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর নিয়ে যায় দুই বৈমানিক। সেসময় দুই বৈমানিক উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খান এবং স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ প্যারাসুটের মাধ্যমে বিমান ত্যাগ করেন এবং বিমানটি নদীতে ডুবে বিধ্বস্ত হয়। অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিমানটিকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন দুই বৈমানিক।
প্যারাসুটের মাধ্যমে নিচে নামলেও স্কোয়াড্রন লিডার আসিমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বিএনএস পতেঙ্গায় নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, বিবিপি, বিইউপি, এনএসডব্লিউসি, এফএডব্লিউসি, পিএসসি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবাররের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ, জিডি(পি) ২০ মার্চ ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন গোপালপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ডা. মো. আমান উল্লাহ এবং মাতার নাম নীলুফা আক্তার খানম। তিনি ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ থেকে বিএসসি (অ্যারো) সম্পন্ন করেন।
স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ১০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি(পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। কমিশনপ্রাপ্তির পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর চাকরীকাল ১২ বছর ৫ মাস ৯ দিন। চাকরীকালীন সময়ে তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। পেশাদারী দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এছাড়াও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বেস্ট ফ্লাইং পাইলট’ খেতাব অর্জন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৩২ বছর ১ মাস ২০ দিন। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।