জয় বাংলাদেশ: চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের অরুণাচল প্রদেশের প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় গুঞ্জনের পর এবার আরেক খবরে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ভারতে। এই অরুণাচল প্রদেশেরই স্পর্শকাতর অঞ্চলের কাছে অত্যাধুনিক সুবিধা-সম্পন্ন হেলিপোর্ট বানাচ্ছে চীন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির ভিডিও প্রতিবেদন বলছে, অরুণাচলের স্পর্শকাতর ‘ফিশটেইলস’ অঞ্চলের কাছে নিয়ন্ত্রণরেখার ২০ কিলোমিটার পূর্বে নির্মিত হচ্ছে নতুন এই হেলিপোর্ট। এই হেলিপোর্ট নির্মিত হলে সীমান্তবর্তী অনুন্নত ও দুর্গম এলাকায় চীন খুব দ্রুত সামরিক উপকরণ ও সেনা পরিবহন করার সক্ষমতা অর্জন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বায়ত্তশাসিত তিব্বতের নিয়িংচি প্রিফেকচারের গংরিগাবু কুই নদীর তীরে অবস্থিত ওই অঞ্চলটি চীনা ভূখণ্ডের মধ্যে রয়েছে। এই স্থানের চীনা মালিকানা নিয়ে ভারত বিতর্ক করে না।
ভূ-স্থানিক গোয়েন্দা বিশ্লেষক ড্যামিয়েন সাইমন এক্স প্ল্যাটফর্মে চীনা হেলিপোর্ট নির্মাণের ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, হেলিপোর্টটি রুক্ষ, ঘন বনাঞ্চলে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারি ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে সামরিক অভিযানের জন্য চ্যালেঞ্জময়। নতুন করে হেলিপোর্ট নির্মাণের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৈন্যদের গতিশীলতা এবং টহল দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণকারী সামরিক সূত্রের বরাতে ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলছে, হেলিপোর্টটি সামরিক ও বেসামরিক উভয় উদ্দেশ্যেই কাজ করবে। দ্রুত সেনা মোতায়েন এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চীনের প্রতিরক্ষা ও আক্রমণাত্মক সক্ষমতা বাড়াবে। এই হেলিপোর্ট তাদের প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা জোরদার করবে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সেনা মোতায়েন করতে সক্ষম হবে চীন।
অরুণাচল প্রদেশের দিবাং উপত্যকায় ফিশটেল ১ এবং অরুণাচল প্রদেশের আনজাও জেলার ফিশটেল ২ নিয়ে গঠিত ‘ফিশটেলস অঞ্চল’টি ভারত ও চীনের মধ্যে বিশেষভাবে সংবেদনশীল বলে মনে করা হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রাক্তন কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রবীণ বক্সী চীনা হেলিপোর্ট সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এটিকে এই অঞ্চলে ভারতের স্বার্থের জন্য ‘হুমকি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানান। আরেক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মা চেলানি সীমান্ত এলাকা বরাবর চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক অবকাঠামো নির্মাণকে ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
হেলিপোর্টের অবকাঠামোতে একটি ৬০০ মিটার রানওয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা হেলিকপ্টার টেক-অফগুলো ঘূর্ণায়মান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি উচ্চ-ক্ষমতার অপারেশন চালানোর জন্য হেলিপোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, সীমান্ত আলোচনায় চিনের সঙ্গে সেনা প্রত্যাহারের ৭৫ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়েছে। যদিও অতীতে আমাদের সম্পর্ক সহজ ছিল না। তিনি বলেন, ২০২০ সালে যা ঘটেছে, তা একাধিক চুক্তির লঙ্ঘন। চীনারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে। জবাবে আমরা আমাদের সেনা মোতায়েন করি। চিনের সঙ্গে সীমান্ত আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ ডিসএনগেজমেন্ট সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমাদের এখনো কিছু কাজ করার আছে।