বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, দেশে এখন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সামনে এই অর্থনৈতিক সংকট আরও বিপজ্জনক হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
রোববার (১৯ মে) বেলা সাড়ে ১২টায় রংপুর সফরে এসে সাকির্ট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, স্বাভাবিকভাবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় সমান রিজার্ভ থাকার কথা। সে হিসাবে আমাদের দেশে এখন রিজার্ব ডলার থাকার কথা ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন। এখন আছে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারও নেই, ১১ বিলিয়ন ডলার আছে কিনা সন্দেহ। এই অবস্থায় প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে টাকার মূল্যায়ন। মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণে দ্রব্য মূল্যর দর বাড়ছে।
বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ আইন করলেও রাইট টু ইনফরমেশন বলতে এখন কোনো কিছু নেই। কোনো খবরা খবর দেওয়া হচ্ছে না। সব গোপন রাখা হচ্ছে। যে তথ্যই চাওয়া হয়, সেটাই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্বার জন্য হুমকি স্বরূপ। সংবিধানের ১৪৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, আমরা বিদেশের সঙ্গে যে চুক্তিই করি না কেন। সেটা প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত যত বিদেশি চুক্তি হয়েছে হাজার হাজার চুক্তি হয়েছে। কোনো চুক্তিই আমাদের সংসদে প্লেস করা হচ্ছে না। সংবিধান মানা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ঠিক না। বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের সম্পদ। এই সম্পদ সরকার ঠিকঠাকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছে কিনা, সেই বিষয়ে জনগণকে জানতে হবে। জনগণ সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে। আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসছে না। আমরা যে পরিমাণ খরচ করছি তার থেকে অনেক কম প্রবেশ করছে। আমরা কি কষ্ট করছি, আগামীতে আরও কি হবে এগুলো সবাইকে জানাতে হবে। সরকার এগুলো গোপন করছে। গোপন করার অর্থ আপনারা জনগণের স্বার্থবিরোধী কিছু করছেন। না জানানো টাও অপরাধ। প্রতিদিন ডলারের দাম বেড়েই চলছে। টাকা দিয়ে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো টিকিট বিক্রি করে তাদের দেশে টাকা নিতে পারছে না ডলারের অভাবে বিনিয়োগ কমবে কেন। এই অবস্থার সৃষ্টি হলো কেন ৪০-৪৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ হঠাৎ জিরো হলো কেন। এই রিজার্ভ কই গেল। ইমপোর্ট করতেই পারছে না সরকার। মিল ফ্যাক্টরিগুলো চলতে পারছে না। মানুষ বেকার হয়ে যাচ্ছে। অসহনীয় পরিবেশ থেকে মানুষ মুক্তি চায়। কিন্তু আমরা মুক্তি দেখতে পারছি না।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ডোনাল্ড লু সফরে এসে বলল আমেরিকান অনেক কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করছে কিন্তু তারা প্রফিট নিয়ে যেতে পারছে না দেশে। এসব কারণে এ দেশে কেউ আর বিনিয়োগ করতে চাইবে না। তা ছাড়া এ সরকার প্রচুর লুটপাট করছে। বিদ্যুৎ-গ্যাসে লুটপাট হয়েছে।বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে। যার কারণে আজকের এই অবস্থা।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের অনেক কথাই বলছেন। আমি ওনাকে শ্রদ্ধা করি। আওয়ামী লীগ বলছে তারা অনেক শক্তিশালী হয়েছে। আসলে এই শক্তি কি দানবীয় শক্তি না শুভ শক্তি। দানবীয় শক্তি যদি হয় তা আমরা পছন্দ করি না। জনগণও পছন্দ করে না। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈশিষ্ট হারিয়েছে। দল হিসেবে তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা হারিয়েছে। এখন তারা কিছু পেশাজীবী আর সরকারি কর্মকর্তা নিয়ে দল। আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের কথা ভাবত। মানুষ আওয়ামী লীগের ছায়াতলে বিশ্রাম নিতে পারত। এখন আর পারে না। হাস্যকর ও অপ্রয়োজনীয় কিছু করছে যার কারণে আওয়ামী লীগ এখন দেশের মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।