জয় বাংলাদেশ : দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান পরিস্থিতি আরও শক্ত হাতে দমন করে পরিবেশ উন্নত করবেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। অনেকটা শান্ত করে নিয়ে আসতে পেরেছি। অবস্থা আস্তে আস্তে আরও ভালো হবে। যতটুকু ভালো হবে কারফিউও শিথিল হয়ে যাবে,” সোমবার তার কার্যালয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দসহ দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীরা কারখানা খুলে দেয়া এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সুবিধার্থে স্বল্প পরিসরে ইন্টারনেট চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কারখানাগুলো ব্যবসায়ীরা খুলতে পারেন, তবে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় তাদেরকেই নিতে হবে। “কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য। আমরা চমৎকার পরিবেশ করেছিলাম ব্যবসার জন্য। কিন্তু যে যে কাজগুলো করেছি সেগুলো পোড়ানো – এটা কোন ধরনের আন্দোলন আমি জানিনা। সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ। আগুন দিয়ে যে ক্ষতি করেছে সেগুলো ঠিক করতে সময় লাগবে,” বলেন তিনি।
দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্যই তিনি ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন।
“আমি জানি ব্যবসা বানিজ্য সচল রাখতে হবে। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা দরকার। যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কারা করলো?” প্রশ্ন করেন তিনি।
“এবার অতো সহজে ছাড়া হবে না। ধ্বংসযঞ্জে চালিয়ে দেশকে ধ্বংস করবে ? আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই যাতে দেশের ভাবমূর্তি ঠিক থাকে। ভাবমূর্তি ঠিক না থাকলে ব্যবসা লাটে উঠবে,” ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।
কোটা আন্দোলনের সময়ে সারাদেশে সহিংসতার জন্য বিএনপি, এবং জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন “শিবির তো জঙ্গি। শিবির জামাত জঙ্গি। বিএনপির চেহারা বেরিয়ে গেছে। এই জঙ্গিদের দমন করা ও ভালো পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।” প্রধানমন্ত্রী কোটা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত ও সরকার পক্ষে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, আদালতে সরকারই আপিল করেছে এবং তিনি নিজেও জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ছাত্রদের হতাশ না হতে বলেছিলেন। “এটা কি শুধু কোটা আন্দোলনের জন্য? ছাত্ররা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই তো রায় দিয়েছে আদালত। এরপরও আন্দোলন বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের উদ্দেশ্য কী?” কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন সরকারের দৃষ্টিতে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হলো ছাত্ররা এবং সে কারণেই তাদের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হয়। “আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করি একটা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে। শেষ পদক্ষেপ হিসেবে আর্মি নামিয়েছি এবং কারফিউ দিয়েছি। জামাত- বিএনপি-শিবির যে কয়টা ঘটনা, যত খুন খারাবি, তারা এক সাথে করেছে,” বলেন শেখ হাসিনা। তিনি তার নামে ‘দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া বা দেশ ছাড়ার’ যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা উল্লেখ করে বলেন, “শেখ হাসিনা পালায় না। পচাত্তর সালের পর ছয় বছর আসতে পারিনি। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছি, ফিরে এসেছি। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও আমাকে আসতে দিবে না। কিন্তু আমি বলেছিলাম আমি দেশে ফিরবো”। তিনি কোটা আন্দোলনের সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন দীর্ঘদিন ধরে প্ল্যান করেই যারা সহিংসতা করেছে ঢাকায় এসেছে। জেলায় জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে শিবির কর্মীরা ঢাকায় এসেছে।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হলে এর এক পর্যায়ে ১৬ই জুলাই সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়, যা ১৮ ও ১৯শে জুলাই ভয়ানক আকার ধারণ করে। এই দুদিনে সরকারি বেসরকারি নানা স্থাপনায় হামলা হয়েছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ১৯শে জুলাই শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি এবং সেনা মোতায়েন করে শিল্প কল-কারখানাসহ সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সাথে বৃহস্পতিবার থেকেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।