Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকইরানে নির্বাচন: কে হচ্ছেন নতুন প্রেসিডেন্ট

ইরানে নির্বাচন: কে হচ্ছেন নতুন প্রেসিডেন্ট

আগামী ২৮ জুন ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মে মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো প্রেসিডেন্ট মারা গেলে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে নির্বাচন দিতে হবে পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যেই, ফলে দলগুলো নিজেদের প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য খুবই কম সময় পায়।

সমস্ত প্রভাবশালী রক্ষণশীল দলগুলোর মধ্যে তাই এখন চূড়ান্ত প্রার্থী নিয়ে নানান বাছবিচার চলছে। কিন্তু আগের জাতীয় নির্বাচনে প্রচুর পরিমাণ প্রার্থিতা বাতিল হওয়া এবং প্রশাসন যেভাবে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে অনেক সংস্কারপন্থী দল ও নেতারা এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে কারা আছেন?

অনেক পর্যবেক্ষকই ইরানের নির্বাচন অবাধ বা প্রতিযোগিতামূলক হবে এমনটি মনে করেন না, কারণ প্রার্থীর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত প্রভাব থাকে।

গার্ডিয়ান কাউন্সিল, যা ইরানের রাজনীতিতে একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে, তারা সংসদ, প্রেসিডেন্সি এবং অ্যাসেম্বলি বিশেষজ্ঞদের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা বাছাই করে, এবং এবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত ৮০ জনের মধ্যে ছয়জনের প্রার্থিতা অনুমোদন করেছে।

মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ

মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ, ৬২ বছর বয়স, গত চার বছর ধরে তিনি ইরানের সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তিনবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছেন, দুবার হেরে গেছেন এবং ২০২১ সালে ইব্রাহিম রাইসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তিনি দীর্ঘদিন উচ্চপদস্থ সামরিক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাজধানী তেহরানের মেয়র হিসেবে রেকর্ড ১২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।

আমিরহোসেন গাজিজাদে হাসেমি

আমিরহোসেন গাজিজাদে হাসেমি, ৫৩ বছর বয়স, একজন নাক, কান, গলার সার্জন। তিনি একজন ইরানিয়ান রক্ষণশীল আদর্শের বাজনীতিক, এর আগে চারবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সর্বশেষ তিনি প্রেসিডেন্ট রাইসির ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি এবং প্রায় এক মিলিয়নের কম ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন – তবে সেবার প্রায় চার মিলিয়ন ভোট বাতিল হয়।

সাঈদ জালিলি

সাঈদ জালিলি, ৫৮ বছর বয়স, এক্সপিডিয়েন্সি ডিসার্নমেন্ট কাউন্সিলের সদস্য তিনি। এর আগে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি ছিলেন এবং চার বছরের জন্য ইরানের পারমাণবিক মধ্যস্থতাকারী দলের নেতৃত্ব দেন।

তিনি পূর্বে দুইবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছেন এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনিও ইব্রাহিম রাইসির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়ান।

মাসউদ পেজেশকিয়ান

মাসউদ পেজেশকিয়ান, ৭০ বছর বয়সী একজন হার্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞ। তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চার বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন।

তিনি একগুঁয়ে স্বভাবের জন্য পরিচিত, তিনি ইরানের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং দুর্নীতির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন অনেকবার। সবশেষ ২০২২ সালে পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর বিষয়ে ইরান সরকারের ভূমিকাকে প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।

তিনি এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থী দলের একমাত্র আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। ফলে অনেকেই পেজেশকিয়ানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন পাওয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হিসেবে দেখছেন।

মোস্তফা পুরমোহাম্মদী

মোস্তফা পুরমোহাম্মদী, ৬৫ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ। ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে গার্ডিয়ান কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত একমাত্র ধর্মগুরু।

তিনি ১৯৮৮ সালে রাজনৈতিক বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা তদারকি করার জন্য পরিচিত ‘ডেথ কমিটি’তে তার ভূমিকার জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত, যার সদস্যদের মধ্যে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসিও ছিলেন।

আলিরেজা জাকানি

আলিরেজা জাকানি, ৫৯ বছর বয়স। তিনি গত তিন বছর ধরে তেহরানের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। তিনি বিপ্লবী গার্ডের একটি সহযোগী বাহিনী বাসিজের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং চারবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কোন বড় নামগুলো বাদ গেল?

আগের নির্বাচনগুলোর মতো, দেশটিতে আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কিছু সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার বিষয়টা ইরানের রাজনৈতিক মহলে এখন ভীষণ আলোচিত একটি বিষয়।

মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কলেজ অফ আর্টস, সায়েন্সেস অ্যান্ড এডুকেশনের ডিন, ইরান বিশেষজ্ঞ মেহরজাদ বোরুজেরদি বলেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এবং প্রাক্তন স্পিকার আলী লারিজানির বাদ পড়া সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত।

“আহমাদিনেজাদের আট বছরের প্রেসিডেন্ট পদে থাকার অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও, এবং সর্বোচ্চ নেতার একটি প্রভাবশালী উপদেষ্টা সংস্থা এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলে তার বর্তমান অবস্থান থাকা সত্ত্বেও, তাকে অনুমোদন দেয়া হয়নি।”

যদিও একসময় আহমাদিনেজাদ আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রিয়পাত্র বলে বিবেচিত ছিলেন, কিন্তু তার দ্বিতীয় মেয়াদের শেষের দিকে তিনি সর্বোচ্চ নেতার আস্থা হারান।

বোরুজেরদি বলেন “একইভাবে, আলি লারিজানি, সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রাক্তন মন্ত্রী, সংসদের স্পিকার এবং সেক্রেটারি হিসাবে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ভিত্তি থাকা অন্য আরেকটি এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য, তিনিও অযোগ্য ঘোষিত হন।”

“বারবার তাদের প্রার্থীতা বাতিল হওয়াটা প্রমাণ করে যে তাদের রক্ষণশীলতার ধরন আর সুপ্রিম লিডার এবং গার্ডিয়ান কাউন্সিল পছন্দ করছে না”।

কিন্তু কারণ কী?

অনেক বিশেষজ্ঞই গার্ডিয়ান কাউন্সিলের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে আগের নির্বাচনগুলোর পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন দেখছেন না। কাউন্সিল সাধারণত সংস্কারপন্থী-মধ্যপন্থী শিবির থেকে একটি বা দুটি নাম অনুমোদন করে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নামগুলি রক্ষণশীল শিবির থেকে থাকে।

“মধ্যপন্থী দলগুলো থেকে একমাত্র প্রার্থী হলেন মাসউদ পেজেশকিয়ান, যার প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে হতাশ জনগণকে ভোট দিতে উৎসাহিত করা,” বোরুজেরদি ব্যাখ্যা করেন।

“যদি তিনি এতে সফল হন, তাহলে প্রধান লড়াইটা আশা করা হচ্ছে তার এবং বর্তমান সংসদের স্পিকার ও সরকারের আস্থাভাজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বাকের কালিবাফের মধ্যে হবে।”

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ‘ইরানি বংশোদ্ভূত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ হতে হবে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নীতি ও দেশের সরকারি ধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে।

তবে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত কয়েক দশকে, সরকার গার্ডিয়ান কাউন্সিলকে বারবার ব্যবহার করেছে সেইসব ব্যক্তিদের অযোগ্য ঘোষণা করতে, যাদের সম্ভাব্য কার্যক্রম বা নীতিগুলি সর্বোচ্চ নেতার নীতি থেকে ভিন্ন হতে পারে।

কাউন্সিল, যা ছয়জন ধর্মগুরু এবং ছয়জন আইনজীবী নিয়ে গঠিত, সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে সর্বোচ্চ নেতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ছয়জন ধর্মগুরুকে নিয়োগ করেন।

ছয়জন আইনজীবী নির্বাচনের জন্য, বিচার বিভাগের প্রধান- যিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত – সংসদে নির্বাচিত প্রার্থীদের একটি তালিকা উপস্থাপন করেন তিনি।

যারা ইরানের নির্বাচনকে ‘সাজানো’ বলে বর্ণনা করেন তারা প্রার্থীর এই স্বেচ্ছাচারী অনুমোদন প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করেন।

নারীরা কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?

নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত পাঁচ দিনের মধ্যে, চারজন নারী প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। প্রথমবারের মতো, তাদের মধ্যে দুইজন রক্ষণশীল শিবির থেকে, একজন সংস্কারপন্থী, এবং চতুর্থজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।

যদিও এই চারজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন, কিন্তু সংবিধানে যে বলা আছে প্রেসিডেন্টকে “ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক পুরুষদের” মধ্য থেকে নির্বাচন করতে হবে – সেটা মূলত আরবি শব্দ ‘রিজাল’-এর প্রচলিত অনুবাদের ভিত্তিতে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১৩টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কখনো কোন নারীকে প্রার্থী হতে অনুমোদন দেয়া হয়নি – যা অধিকার কর্মীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের উৎস হয়ে উঠেছে।

অনেক নারীর অধিকারকর্মী যুক্তি দেন যে ‘রিজাল’ আরবিতে ‘পুরুষ’ অর্থে ব্যবহৃত হলেও, ফারসিতে এটি ‘প্রখ্যাত ব্যক্তি’ অর্থেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

তাই অধিকারকর্মীরা যুক্তি দেন যে সংবিধান লেখার সময়কার উদ্দেশ্য ছিল “রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব”, বিশেষভাবে পুরুষ নয়।

তথ্যসূত্র: বিসিবি

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments