Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeঅন্যান্যঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ: প্রেক্ষাপট ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ: প্রেক্ষাপট ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস

[প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে বিশ্বমানচিত্রে পাকিস্তান নামক একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, শাসকগোষ্ঠীর কর্তৃত্ববাদ, পূর্ববঙ্গের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে থাকবে সামরিক নির্দেশ লঙ্ঘন করে ভাষণের রেকর্ডিং এবং প্রচার সম্পর্কে। আরো থাকছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে ভাষণের চলচ্চিত্রটিকে রক্ষা করা হয়েছিল। ভাষণটি কীভাবে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তার বিবরণ।]

পাকিস্তানের শুরু থেকেই সমস্যার পাহাড়, বৈষম্য, অন্তর্কলহ এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব:পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল নানা রকমের প্রতিকূলতা নিয়ে। দেশটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের মতো রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো পায়নি। দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা, আইন শৃঙ্খলা, সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদির ভিত নিজেদেরকেই স্থাপন করতে হয়েছিল। অধিকন্তু, ভারত থেকে আসা বাস্তুহারা মানুষদের পূনর্বাসন ছিল একটি পর্বতময় মানবিক সমস্যা। আবুল মনসুর আহমদের ভাষায় নয়া রাষ্ট্র পাকিস্তান ছিল প্রকৃত অর্থ নয়া। পাকিস্তানকে সবকিছু শুরু করতে হয়েছিল ফ্রম দ্য স্ক্র্যাচ। আবার যেভাবে বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করা হয়েছিল তা নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি করেছিল।

সোহরাওয়ার্দী এবং ফজলুল হক এই ধরনের ভাগ চাননি। মওলানা ভাসানির রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল বাংলা, বিহার, আসাম ও ত্রিপুরা আমার। নেতাজী সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের কার্যক্রম এবং রাজকীয় নৌবাহিনীর বিদ্রোহে ওই সময়ে ব্রিটিশ সিংহাসন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। তাদের তখন পাততাড়ি গুটানোর সময়। সুতরাং ব্রিটিশ অফিসার র‌্যাডক্লিফ সীমান্ত রেখা নির্দিষ্ট করার সময় বাংলা এবং পাঞ্জাবের বুকে ছুরি চালাতে দ্বিধা করেননি। প্রশ্ন জাগে গান্ধী, জিন্নাহ, নেহেরু, প্যাটেল প্রমুখ ঝানু আইনজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদের সামনে র‌্যাডক্লিফ এই নির্মম কাজটি কীভাবে করলেন যার জের প্রায় ৭৭ বছর পরেও অভিবাসী মানুষ টানছে!উত্তর ভারতের সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা নেতারা তা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার কথা নয়। যদিও দেশ ছাড়া মানুষের হাহাকার ও আর্তনাদ নতুন কিছু নয়।

আফ্রিকান আমেরিকানদের লেখায় আমরা তা দেখতে পাই। বারাক ওবামা ছুটে গিয়েছিলেন কেনিয়ায় পিতৃপুরুষের ভিটায়। আড়াই হাজার বছর আগে (৫৮৬ খ্রি. পূ.) স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত ইহুদীদের বিলাপ শুনতে পাই বনি এম. এর কালজয়ী গান ‘বাই দ্য রিভার অব ব্যবিলন’ এ। রাজনীতিবিদদের মধ্যে ক্ষমতা হাতে পাওয়ার একটি তাড়না কাজ করে। তাদের আচরণ অনেকটা গ্রামারিয়ানদের মতো। মানবিক বিষয়গুলোতে কবি সাহিত্যিক, শিল্পীরা অনেক বেশি সংবেদনশীল হন। বৃটিশ ইতিহাসের গবেষক প্রফেসর প্রিয়া সাতিয়া ‘পোয়েটস অব পার্টিশন’ নিবন্ধে ভারতবর্ষ ভাগের পর দেশান্তরে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পূর্বপুরুষের ভিটার জন্য তাঁদের আর্তনাদ তিনি শুনেছেন। তাঁদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রিয়া সাতিয়ার মতে, পোয়েটস অব পার্টিশন, বিশেষ করে উর্দু কবিরা দেশান্তরী বা স্থানচ্যুত মানুষদের নিয়ে অনেক মর্মস্পর্শী কবিতা লিখেছেন। অবিভক্ত ভারতে মুসলমানের সংখ্যা ছিল দশ কোটি। কিন্তু চার কোটি মুসলমানকে ভারতে রেখে পাকিস্তান ছয় কোটি মুসলমানকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। ভারতের অনেক মুসলমান এবং পাকিস্তানের অনেক হিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ ধীরে সুস্থে দেশত্যাগের মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ভারতের কিছু সংখ্যক সাম্প্রদায়িক হিন্দু চার কোটি মুসলমানকে ঠেলে পাকিস্তানে পাঠাতে চেয়েছিলেন। গান্ধী এবং নেহেরুর হস্তক্ষেপে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারেনি। একই সংস্কৃতির মানুষ শুধু ধর্মের ওপর পুঁজি করে পূর্বপুরুষের ভিটে এবং সমাজ ত্যাগ করেছিল। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং ভয়াবহ মাইগ্রেশন শুরু হয়েছিল র‌্যাডক্লিফের সীমান্ত রেখা টানার পর পরই। দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি মানুষ পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে।

অগস্ত্য যাত্রা করেছিলেন। অভিবাসীরা স্থানীয়দের মধ্যে ঘটিবাটি এবং মুহাজির তকমা নিয়ে কঠিন জীবন শুরু
করেন। নতুন মানুষদের আগমনে একটা সামাজিক অস্থিরতাও দেখা দিয়েছিল। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা মোগল
আমলে একই নবাবের অধীনে থাকায় সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন কমবেশি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু
ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের কোনো প্রকার আত্মিক বা আর্থিক বন্ধনই ছিল না।
দেশ ভাগের সময় দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একমাত্র বিবেচনা ছিল মুসলমানিত্ব। যদিও পশ্চিম পাকিস্তানের
মানুষেরা বাঙালিদেরকে কখনো সাচ্চা মুসলমান মনে করেনি। বাঙালির আবহমান কালের সংস্কৃতিকে তারা মনে
করত হিন্দু ধর্মীয় ব্যাপারস্যাপার। তাদের কাছে যা কিছু বাঙালির একান্ত নিজস্ব তা হিন্দুয়ানি ছাড়া অন্য কিছু নয়।

মুসলিম লীগ এলিট শাসকগেষ্ঠীর কর্তৃত্ববাদ: পাকিস্তানের এলিট শাসকগোষ্ঠী এতসব বহুবিধ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শন করতে পারেনি। মানুষের কষ্ট লাঘব, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতি তাদের আন্তরিকতা ছিল না। দুই হাজার কিলোমিটার দূরের বাঙালিদের প্রতি তারা বৈরী মনোভাব পোষণ করতেন। স্বাধীনতার বছর খানেকের মধ্যে প্রথম গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ সাহেবের মৃত্যু হলে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। মুসলিম লীগ যুক্তি দিল মুসলমানদের হেফাজত করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত। তারা ক্রমেই এক দলীয় শাসন তথা কেবল মুসলিম লীগের শাসন স্থায়ী করার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করতে থাকে। শাসকগোষ্ঠীর এবং তাদেও প্রচার মাধ্যমের যুক্তি হলো ইসলামের হেফাজতের জন্যই পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম লীগের বিরোধিতা করা মানে পাকিস্তানের বিরোধিতা করা। আবার মুসলিম লীগকে বিশুদ্ধ রাখার জন্য পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের সদস্য সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের সদস্য হওয়ার জন্য চাঁদার বই পাওয়া যাচ্ছিল না। মওলানা ভাসানি এবং সোহরাওয়ার্দী এই ধরনের অগণতান্ত্রিক আচরণ মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁরা আমজনতার মুসলিম লীগ অর্থাৎ আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু মুসলিম লীগের কর্মীরা তাঁদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করেছিল।
ততদিনে বাঙালি বুঝে গেছে যে, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী দেশের নাগরিকদের মতামতের তোয়াক্কা করে না এবং বাঙালিদেরকে তারা নাগরিকের সম্মান দিতে অনিচ্ছুক। শাসনতন্ত্র রচনার বাস্তব উদ্যোগ নেই। ভারত ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ নিজেদের শাসনতন্ত্র রচনা করেছে। ব্রিটিশদের ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ রদ করে ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ থেকে তারা নিজেদের শাসনতন্ত্র চালু করেছিল এবং ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সমগ্র ভারতবাসীর মতামতকে রাষ্ট্রশাসনে প্রতিফলিত করেছে।

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ অনুযায়ী নতুন শাসনতন্ত্র রচনা না হওয়া পর্যন্ত নতুন দেশ দুটোর শাসনকার্য
পরিচালিত হবে ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ -এর বিধান অনুযায়ী। এটি যেহেতু একটি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা তাই
গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা ও গণপরিষদের ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করা হয়নি। গভর্নর জেনারেল
ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু এক দিকে মুসলিম লীগ দাবি করছে পাকিস্তান হেফাজত করার দায়িত্ব
একমাত্র মুসলিম লীগের। অন্য দলের সুযোগ এতে নাই। অপর দিকে গভর্নর জেনারেল তার ক্ষমতা খর্ব হতে
দেবেন না। বাঙালিরা বুঝে গেল গণতন্ত্র শিকেয় উঠছে। ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত
প্রতিনিধিদের নিয়েই পাকিস্তানের অন্তবর্তীকালীন গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল। তারা শাসনতন্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে ১২ মার্চ ১৯৪৯ শাসনতন্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হবে তার ওপর একটি প্রস্তাব পাশ করেছিলেন। পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন। প্রস্তাবে ইসলামী ধারার পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিষয়টি
অন্তর্ভুক্ত ছিল। অমুসলিম তথা হিন্দু সদস্যরা এতে আপত্তি দিয়ে ছিলেন। দীর্ঘ নয় বছরের যুক্তিতর্ক ও প্রচেষ্টার
পর ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ পাকিস্তানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে শাসনতন্ত্র প্রণীত হয়েছিল।

অন্তবর্তীকালে ক্ষমতার দ্ব›দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল। ১৯৫৩ সালে পাঞ্জাবের লাহোরে আহমদিয়া ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিরাজমান অসহিষ্ণুতা দাঙ্গার রূপ নিয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাজিমুদ্দিন। তিনি জিন্নাহর পরে এবং গুলাম মুহাম্মদের আগে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। নাজিমুদ্দিন ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান এবং গণ পরিষদের অনুমোদক্রমেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলন দমন করতে না পারায় তার বিরুদ্ধে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর একটা ক্ষোভ ছিল। সেই সুযোগ এসে গেল লাহোর দাঙার মাধ্যমে।

মালিক গুলাম মুহাম্মদ গণপরিষদ অনুমোদিত প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনকে ১৯৫৩ সালে পদচ্যূত করেন। পাঞ্জাবে
জারী করেন সামরিক শাসন। দেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে দাঙার ঘটনা ঘটলো এবং
সামরিক শাসনের আবির্ভাব হলো। মূলত তখন থেকেই পাকিস্তানে সামরিক শাসনের পথ তৈরি হতে থাকে। ২৪
অক্টোবর ১৯৫৪ গণপরিষদের একটি সাব-কমিটি গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা খর্ব করে ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ সংশোধন করায় গভর্নর জেনারেল মালিক গুলাম মুহাম্মদ ক্ষুব্ধ হয়ে গণপরিষদ ভেঙে দিয়েছিলেন। এতে তিনি, জেনারেল আইয়ুব খানের সমর্থন নিয়েছিলেন। ক্রমেই আইয়ুবের সামরিক শাসন জারির পথ পাকা হতে থাকে। আইয়ুব খান তাঁর আত্মজীবনী ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ১৯৫৪ সালের ৪ঠা অক্টোবর লন্ডনের হোটেলে [বসে] পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র সম্মন্ধে তাঁর মতামত লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্ন, কেন তিনি শাসনতন্ত্র সম্বন্ধে লিখতে গেলেন? তিনি পাকিস্তান আর্মিও প্রধান সেনাপতি, তিনি শত্রুর আক্রমণের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করবেন। সেইভাবে পাকিস্তান আর্মড ফোর্সকে গড়ে তোলাই হলো তাঁর কাজ।
(আত্মজীবনী: ২০১৬: ২৭৯)।

আবুল মনসুর আহমদের মতে, ’৬২ সালের শাসনতন্ত্র ব্যক্তির দান, গণপ্রতিনিধিদের দ্বারা রচিত নয়। ’৫৬ শাসনতন্ত্রের আইনগত বুনিয়াদ ছিল বটে, কিন্তু ওটা প্রকৃত অর্থে প্রস্তাবিত ’৭০ সালে রচিত শাসনতন্ত্রের মতো গণতান্ত্রিক পন্থায় রচিত হয় নাই।’ প্রথম গণপরিষদে বাংলার প্রতিনিধি ছিলেন ৪৪ জন, পশ্চিম পাকিস্তানের ছিলেন ২৮ জন। তবুও ওই গণপরিষদে পশ্চিম পাকিস্তানিদের মতের বিরুদ্ধে [বাঙালিরা] নিজেদেও সংখ্যাগুরুত্ব খাটায় নাই (আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, মনসুর ২০২১: ৫২৩, ৫২৯)’। বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে লিখলেন, স্বাধীনতার সময় যে মনোভাব পাকিস্তানের জনগনের ছিল স্বাধীনতা পাওয়ার সাথে সাথে আজ যেন তা ঝিমিয়ে গেছে। সরকার তা ব্যবহার না করে চেপে মারার চেষ্টা করছে। চিনের সরকার উন্নয়নের জন্য জনগণকে কাজে লাগাচ্ছে। চিনের জনগণ অনুভব করতে পারলো দেশ ও দেশের সম্পদ তাদের। আর আমাদেও জনগণ বুঝতে আরম্ভ করলো, জাতীয় সম্পদ বিশেষগোষ্ঠীর আর তারা যেন কেউ নন। ফলে দেশের জনগণের মধ্যে ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে (আত্মজীবনী ২০১৬:২৩৪)।

পাকিস্তান মুসলিম লীগের কর্মকাণ্ডে বাঙালিদের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, বাংলা ভাষা ও
সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হলে তাঁদেরকে নতুন পথ খুঁজে নিতে হবে। ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে এগোতে হবে। তাঁরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের তাগিদ অনুভব করেন। তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর মওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা ছিল। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হলো তরুণদের সংগঠিত করতে। পূর্ব পাকিস্তানের তরুণরা ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করে। শেখ মুজিবুর রহমান আহ্বায়ক কমিটিতে ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে মওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত হলো আওয়ামী মুসলিম লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান জেলে অন্তরীণ থাকলেও তিনি হয়েছিলেন যুগ্ম সম্পাদক।

ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের আন্দোলন: বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর
উপর্যুপরি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে উঠেছিল। তারা ভাষার জন্য
লড়াই করার শপথ নিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী তা আমলে না নিয়ে আরো কঠোর হতে থাকে। জিন্নাহ সাহেবের অনুবর্তী হয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক সামরিক, বেসমারিক এবং রাজনৈতিক নেতা বলেছিলেন, উর্দু হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে। সর্বশেষ ১৯৫২ সালে আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন। তিনি পল্টন ময়দানে ঘোষণা দিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তিনি ছিলেন ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান। এটি ধারণা করা হয়তো ভুল হবে না যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি মূলত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তীব্র আন্দোলনে ফেটে পড়েছিল। মওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। আন্দোলন দমন করতে ২০শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারী করা হয়। পরদিন ২১শে ফেব্রুয়ারি আইন অমান্য করে ছাত্ররা মিছিল বের করেছিল। পুলিশ তাতে লাঠি, টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার এবং বরকত নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রজনতাকে দমানো যায়নি। পরদিন ২২ শে ফেব্রুয়ারিতেও রাস্তায় ছাত্র জনতার ঢল নেমেছিল। এটি ঠিক যে, যুক্তিসঙ্গত কারণে ভাষা আন্দোলনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং এ কে ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি। হক সাহেব পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্বপাকিস্তান সরকারের এ্যাডভোকেট জেনারেল পদে চাকরি করায়দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। মওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনকে সংগঠিত করেন। মুসলিম লীগের নেতা ও অনুসারীরা দলে দলে মওলানা সাহেবের আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দিতে থাকেন।

পূর্বপাকিস্তান আইন পরিষদের পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় পূর্ববাংলায় সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। হক সাহেব
সরকারি চাকরি ছেড়ে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে
সরে এসে তিনি তাঁর পুরনো দল কৃষক-প্রজা পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তবে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও বাঙালি
জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে আওয়ামী মুসলিম লীগের সঙ্গে তাঁর চিন্তাগত ঐক্য ছিল। পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের
নির্বাচনকে সামনে রেখে মওলানা ভাসানী ও হক সাহেব নির্বাচনী জোট যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। যুক্তফ্রন্টের সভাপতি হলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি করাচি ছেড়ে ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সারা বাংলায় যুক্তফ্রন্টের বিভিন্ন সভায় বক্তৃতা করেছিলেন। তখন থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা সোহরাওয়ার্দীকে ভারতের দালাল বলে আক্রমণ করতে থাকেন। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার দাবির মধ্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্ত¡শাসন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল। মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী এবং ফজলুল ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় বাংলার কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষও ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্টকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছিল। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৮টি আসনে জয়ী হয়েছিল। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পেয়েছিল মাত্র নয়টি আসন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে এ কে ফজলুল হক মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিরা শাসন ক্ষমতায় থাকবে এটা মেনে নিতে পারছিলেন না। যার ফলে যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্থায়িত্বকাল ছিল ৩রা এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত মাত্র ৫৭ দিন। যুক্তফ্রন্ট সরকারকে অপসারণ করে গভর্নর জেনারেল গুলাম মুহাম্মদ তাঁর প্রত্যক্ষ শাসন শুরু করেন। তাঁর সময়ে ১৯৫৫ সালের ১৪ই অক্টোবর পূর্ব বাংলার নামকরণ হয় পূর্বপাকিস্তান।

যুক্তফ্রন্ট সরকারকে টিকতে দিলেন না গভর্নর জেনারেল, নেতাদের করলেন বন্দী: পূর্বপাকিস্তান
প্রাদেশিক পরিষদেও প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ভয়ংকর মানসিকতার মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থিত বাঙালিদের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানিদের মানসিক দূরত্বও ছিল বিশাল। ভারত ভাগের সময়ে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিরাজমান মানসিক দূরত্ব ও বিভেদের চেয়েও এই দূরত্ব আরো বেশি ভয়ংকর। রাজনৈতিক ইতিহাস প্রণেতা মহিউদ্দিন আহমদের ভাষ্য অনুযায়ী, মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর হক সাহেব করাচি গিয়েছিলেন। ফেরার সময় কয়েকটা দিন কলকাতায় অবস্থান করেছিলেন। সেখানে তিনি একটি জনসভায় বক্তৃতা করেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ’পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গে আমাদের একই সংস্কৃতি একই ইতিহাস একই ঐতিহ্য। আমাদের আলাদা করে রাখা যাবে না’। তখন তাঁর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। পূর্ববঙ্গের মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় শাসন জারী করা হয়। মূখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক গৃহবন্দি হন। শেখ মুজিবুর রহমানের স্থান হয় জেলখানায়। মওলানা ভাসানী ছিলেন ইউরোপে। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। সোহরাওয়ার্দীকে আগে থেকেই অভিযুক্ত করা হয়েছিল ভারতের দালাল বলে। এই হলো পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর চেহারা।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী অগণতান্ত্রিক। মুখে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের কথা বললেও অন্তরে ছিল বাঙালি মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ। ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে দলের কাউন্সিলে মওলানা ভাসানী দলকে অসাম্প্রদায়িক করার লক্ষ্যে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করলে তা পাশ হয়। দলের নতুন নাম হলো পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগ। কাউন্সিলে মওলানা ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রদেশের নাম থেকে ‘বাংলা’ শব্দটি বাদ দিয়ে পাকিস্তান করলেও, পূর্ববাংলার মানুষের হৃদয় থেকে তারা কখনো বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে মুছতে পারেনি, বরং বাংলার মানুষ নিজেদের বাঙালি জাতিসত্তা সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হয়ে উঠেছিল। একই বছর সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কিছুটা কৌশলী হওয়ার চেষ্টা করে। উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার এক যুগের সামরিক শাসন: এটি অনস্বীকার্য যে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় থেকে যারা রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তাঁদের অধিকাংশ ব্যক্তির পক্ষে গণমানুষের আশা আকাঙ্খা বুঝা সম্ভব ছিল না। তাঁদের অনেকেই বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। পাশ্চাত্যের কেমব্রিজ কিংবা অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। জন্ম থেকে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এলিট বা অভিজাত শ্রেণির ব্যক্তিরাই পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তাঁরা কখনোই আভিজাত্য ছাড়তে চাননি। তাঁদের পক্ষে মওলানা ভাসানী কিংবা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো গণমানুষের সুখ-দুঃখ হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করা সহজ ছিল না। যার ফলে পাকিস্তানের রাজনীতি ছিল গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন। উচ্চাভিলাষী প্রাক্তন সেনা প্রধান আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক হিসেবে পাকিস্তানের শাসনভার নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ঠেকাতে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে,পরিণতির কথা না ভেবে বাঙালি সেনা কর্মকর্তা, উচ্চপদস্থ বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ সবাইকে একসঙ্গে আক্রমণ করেছিলেন। এতে তাঁর কাল হয়েছিল। তাঁর হাতেই অখণ্ড পাকিস্তানের যবনিকাপাত শুরু হয়।

পূর্বপাকিস্তানের রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬১ সালের শেষ দিকে তা আন্দোলনের রূপ নেয়। সোহরাওয়ার্দীসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ১৯৬২ সালের ২৪ জানুয়ারি আতাউর রহমান খানের বাসভবনে মিলিত হন। তাঁরা গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে ঐক্য গড়ার পক্ষে মত দেন। এর কিছুদিন পর সোহরাওয়ার্দীকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে পূর্বপাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এই আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাকে বন্দী করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। আবুল মনসুর আহমদের মতে, ১৯৬৮
সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল আইয়ুব খানের একটি আত্মঘাতী ভুল। তিনজন চৌকস বাঙালি সিএসপি
অফিসারসহ মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলা স্বাধীন করবার অভিযোগে এই চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক মামলা
দায়ের করা হয়েছিল। আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের পর, তথাকথিত ঘটনার সময়ের আগাগোড়া
জেলখানায় বন্দী, তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নতুন করিয়া মামলার আসামী করা হয়েছিল। মামলায়
শুধু জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাদেরকে নয়, বাঙালি মিলিটারি অফিসার এবং সিএসপি অফিসারকেও আসামী করা হয়েছিল। তিনজন সিএসপি-র মধ্যে একজন তাঁর মণীষা, পাণ্ডিত্য ও শিষ্টাচারের জন্য অফিসারদের মধ্যে এবং সাধারণ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের কনিষ্ঠ সহোদর (মনসুর আহমদ ২০২১: ৪৯৪)।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের উভয় অংশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। সেই বছর ২০ জানুয়ারি ঢাকায় স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী এক মিছিলে গুলি করা হলে আসাদুজ্জামান শহীদ হয়েছিলেন। তিনি ইতিহাসে শহীদ আসাদ নামেই অমর হয়ে আছেন। শামসুর রাহমান লিখলেন বিখ্যাত কবিতা ‘আসাদের শার্ট। মোহাম্মদপুরে আইয়ুব গেটের নাম পাল্টে রাখা হলো আসাদ গেইট। অপর দুইজন শহীদ হচ্ছেন- শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি ১৯৬৯ সালে ২৪শে মার্চ ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। (চলবে)

লেখক: লিয়াকত খান, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। বিশিষ্ট লেখক, অনুবাদক ও টেড হিউজ গবেষক। অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সরকার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments