জয় বাংলাদেশ: চলতি বছরের জুলাই মাসে অনুমোদিত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার নিয়ম রাখে।
অন্তর্বর্তী সরকার কালো টাকা সাদা করার বিতর্কিত পদ্ধতিটি বাদ দেওয়ার উপায় খুঁজছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে যে কেউ অঘোষিত আয় বৈধ করতে পারেন
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদরদপ্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর কর্মকর্তারা কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি এ বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করবেন। পরে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কারণ স্কিমটি বাতিল করতে হলে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।’
জুলাই মাসে অনুমোদিত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার নিয়ম রাখে।
তৎকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত তখন তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। কারণ বৈধ করদাতাদেরকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আয়করের পাশাপাশি অতিরিক্ত সারচার্জ দিতে হয়। সমালোচকেরা বলেছিলেন, ১৫ শতাংশ করের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার অনুমতি আর্থিক খাতের অনিয়মকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও (এফবিসিসিআই) কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিল।
২০২০–২১ অর্থবছরের জন্যও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছিল। এনবিআরসূত্রে জানা গেছে, ২০২০–২১ অর্থবছরে মোট ১১ হাজার ৮৩৯ জন প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেছিলেন, যা এক বছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এনবিআর ওইসব বিনিয়োগ থেকে দুই হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছিল।
এনবিআরের সভাশেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আর্থিক খাত একটি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা পুরো অর্থনীতিকে সচল রাখতে পেরেছি।’
গত ১৫ বছরের মধ্যে এ খাত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, তাই এটির পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
২০ আগস্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসও জানান, অন্তর্বর্তী সরকার একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির ভার নিয়েছে। কিন্তু তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, উল্লেখযোগ্য সংস্কার হলে অর্থনীতি শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়াবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার এনবিআর কর্মকর্তাদের বন্দরে পণ্য ছাড়পত্র ত্বরান্বিত করতে এবং আমদানি-রপ্তানি চালানের দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, সরকার করদাতাদের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। যারা নিয়মিত কর প্রদান করেন তারা যেন হয়রানির শিকার না হন, আর যারা কর ফাঁকি দেন তাদের যেন ছাড় দেওয়া না হয়।’
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ব্যবসায়ীদের পূর্ণ আস্থা অর্জনের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ করা, যা আমাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়তা করবে।’ আবদুর রহমান খান সময়মতো রাজস্ব আদায়েও তার অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন।