গতকাল মঙ্গলবার একটি বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইট বহনকারী চীনা রকেট দক্ষিণ তাইওয়ানের ৫০০ কিলোমিটার উচ্চতা দিয়ে উড়ে যায়। এ নিয়ে তাইওয়ান ভুলে একটি বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে। পরবর্তী সময়ে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইংরেজিতে অনুবাদের সময় ভুলে ‘মিসাইল’ শব্দটি ব্যবহার করার কারণে ক্ষমা চায়।
নির্বাচনের আগে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পেছনে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করে না তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা দল সামগ্রিক প্রাসঙ্গিক তথ্য বিশ্লেষণ করার পর এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিত্র রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের মূল্যায়ন বিবেচনা করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।
তাইওয়ানকে চীনের অংশ বলে মনে করে চীন। অন্যদিকে সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা অন্যান্য পদ্ধতিতে ১৩ জানুয়ারির ভোটে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা বেইজিং, এমন অভিযোগ করে আসছে তাইপেই সরকার। চীন এসব অভিযোগগুলোকে ‘নোংরা কৌশল’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
যখন সতর্কতা জারি হয়, তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ব্রিফিং রুমের ফোনে চীনা ভাষায় ‘চীনের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ’ বলা হলেও ইংরেজিতে বলা হচ্ছিলো ‘মিসাইল’।
তাইওয়ানের বৃহত্তম বিরোধী দল কুওমিনটাং (কেএমটি) এই ঘটনায় সরকারের নিন্দা জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে এটিকে ‘নির্বাচনের হাতিয়ারে’ পরিণত করতে চাচ্ছে সরকার।
কেএমটি চেয়ারম্যান এরিক চু বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, সতর্কতাটি ভুলে পাঠানো হয়েছিল কিনা নাকি যারা এটি পাঠাচ্ছে তাদের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল, সেটিই উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, ‘‘ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) সম্প্রতি সবকিছুকে নির্বাচনে চীনা হস্তক্ষেপ বলে বর্ণনা করছে।”
ক্ষমতাসীন ডিপিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে নির্বাচনে দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তার মুখপাত্র ভিনসেন্ট চাও নাগরিকদের সঠিক তথ্য জানানো এবং আশ্বস্ত করার জন্য এইসব সতর্কতাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে চাও বলেন, ‘‘একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজে একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থাকা উচিত। আমাদের জাতীয় সমস্যাগুলো, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা, রাজনৈতিক হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়।”
৯ জানুয়ারি তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, উৎক্ষেপিত রকেটের ধ্বংসাবশেষ শুধু চীনের উপরেই পড়েছে, কিন্তু রকেটটি একটি “অস্বাভাবিক” পথ দিয়ে উড়ে গেছে।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনার ওপর ভিত্তি করে এবং পেশাদার পদ্ধতিতে একটি প্রতিনিধিত্বশীল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সতর্কবার্তা তৈরি করা হয়। এই বার্তা কোনও দলীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত নয়।”
বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তাইওয়ানিজ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। তার বরাতে বলা হয়েছে, চীন নিয়মিতভাবেই তাইওয়ানের কাছাকাছি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে, কিন্তু ধ্বংসাবশেষ পড়ার বিষয়টি উদ্বেগের বিষয় না হওয়ায় সতর্কতারও প্রয়োজন পড়ে না।
কিন্তু নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি রয়টার্সকে জানিয়েছে, এক্ষেত্রে ‘পথটি মূলত যা প্রত্যাশিত ছিল তার থেকে ভিন্ন ছিল, এবং এর যাওয়ার পথটি আমাদের ওপর দিয়ে ছিল। ভয় ছিল কিছু পড়ে যাওয়ার, তাই সতর্কতা জারি করা হয়েছিল’।
তাইওয়ান পিপলস পার্টি- টিপিপি এর রাষ্ট্রপতি প্রার্থী তাইপেই এর প্রাক্তন মেয়র কো ওয়েন-জে। নিজের ফেসবুক পেইজে তিনি লিখেছেন, “আজকের ভুল বোঝাবুঝি নিশ্চিত করে যে দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক সংলাপ প্রক্রিয়ার অভাব রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে ভুল বিবেচনা সংকটকে বিস্ফোরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
টিপিপি এবং কেএমটি দুই দলই রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হলে চীনের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।