জয় বাংলাদেশ : আমেরিকার ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নির্বাচনে এবার নিউইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ আবু জাফর মাহমুদ। আমেরিকায় দীর্ঘদিন তিনি মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক প্লাট্ফরম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস গঠন করে নতুন উদ্যোমে রাজনীতিতে অগ্রসর হয়েছেন।
গত ২৫ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেট প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। গত শনিবার, (২৯ জুন) নিউইয়র্কের উডসাইডের গুলশান টেরেসে আবু জাফর মাহমুদের নেতৃত্বধীন রাজনৈতিক সংগঠন পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস আয়োজিত সাংগঠনিক নৈশভোজে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন নিউইয়র্ক স্টেট এর অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা। এবার ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে স্টিভেন রাগাও নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায়। ২৯ জুনের ওই অনুষ্ঠানে পিপল আপ এর ওই সাংগঠনিক নৈশভোজে কুইন্স কাউন্টির ইন্টার গর্ভমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স ডেপুটি চিফ হারিস কে প্যারেখ, গণতান্ত্রিক সমাজবাদী ইউনিয়ন নেতা ক্লেয়ার ভ্যালডেজ উপিস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছিলেন বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ।
পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেসের প্রেসিডেন্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ সূচনা বক্তব্যে আয়োজনটিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সীমানা অতিক্রমের একটি আনুষ্ঠানিক অধ্যায় উল্লেখ করে বলেন, যারা এতদিন বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অবদান রেখেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এখন দৃপ্তস্বরে , স্বগৌরবে বলতে পারবেন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নিবার্চনে আমরাও মূলধারার নেতৃত্বে অংশীদার। তিনি জানান, কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তার জয়লাভের বিষয়টি একটা ইতিহাস ও একই সঙ্গে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা । এর কৃতিত্বের দাবিদার কমিউনিটির সকল মানুষ।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, যে কোনো যুদ্ধে আপনজন পাশে না থাকলে মনোবল থাকে না। মনোবল না থাকলে যোদ্ধার বিজয় হয় না। আর মনোবল হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার্, আমার সেই শক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী ও সংগঠনের সকল কর্মীরা।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নিবন্ধনভুক্ত ও নিবন্ধন বহির্ভূত সকল নাগরিকের পক্ষে পিপল আপ এর ১৪ দফা এজেণ্ডা তুলে ধরেন স্যার ডক্টর আবু জাফর মাহমুদ । বলেন, এই এজেণ্ডা আমেরিকায় নেতৃত্ব দেয় এমন শীর্ষ দল ও ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালানো হবে। এজেণ্ডার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল অভিবাসীর দ্রুত নাগরিকত্ব দেয়া এবং ট্যাক্স প্রদানের আওতায় আনা। সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির অভিবাসীদের সবার জন্য মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা ( হোম কেয়ার ও সিডিপ্যাপ সেবাসহ) সিডিপ্যাপ হমো নিশ্চিত করা, কমমূল্যে অল্প আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা , শিশুদের খাবার , প্রসাধনীর মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা , বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত ছাত্র-ছাত্রীদের শাস্তি মওকুফ করা ও শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনা, ছাত্র-ছাত্রীদের ফেডারেল ঋণ মওকুফ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া , আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকের ব্যবহার রোধ করা , ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সরকারী কোষাগার থেকে তহবিল সংস্থান করা , শিক্ষা ক্ষেত্রে – প্রশাসনে সবোর্চ্চ দেশপ্রেমের অগ্রাধিকার চর্চা নিশ্চিত করা , মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সর্ম্পক জোরদার করা, উবার চালক, ইয়োলো ক্যাবী-দোকান কর্মচারীদের ন্যুনতম মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করা, নারীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি সুসংহত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নিবার্চনে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা। তিনি স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদের ১৪ দফা প্রস্তাবনাকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে তা একসাথে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির নূন্যতম মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে একযোগে কাজ করা হবে। এজন্য আসছে নভেম্বরে নিবার্চনে তাদের জয়ী হওয়া জরুরী। আর এর জন্য বাংলাদেশী কমিউনিটির সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। স্টিভেন রাগা বলেন, নিউইয়র্কে পিছিয়ে পড়া , স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবন-জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করতে ডেমোক্রেটিক পার্টি সোচ্চার। প্রথম বছরে জয়ী হয়ে তিনি এরই মধ্যে ৩০ মিলিয়ন ডলার দক্ষিন এশীয় নাগরিকদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রেখেছিলেন জানিয়ে বলেন , এ বরাদ্দ সামনে আরো বাড়ানো হবে, নতুন বিনিয়োগ যুক্ত হবে।
স্টিভ রাগা বলেন, এদেশে অভিবাসনের অবস্থা যা-ই হোক না কেন, সবার স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন। নাগরিকরা যা-ই উপার্জন করুন না কেন, আবাসন প্রয়োজন। অভিবাসীরা যতো ধনী হোক না কেন, সঠিক শিক্ষার প্রয়োজন। যার জন্য ডেমোক্র্যাটরা অ্যালবনিতে লড়াই কররেছে। আগামী নভেম্বরে এর প্রতিফলন ভোটে থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আসন্ন নির্বাচনের জন্য এমন অনেক পদ রয়েছে যেখানে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আবু জাফর মাহমুদের সাংগঠনিক দক্ষতা অনন্য। নিবার্চনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সকল কমিউনিটির সক্রিয় অংশগ্রহণ, অবদান থাকা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মূলধারার ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মিলন রহমান।
উল্লেখ্য, আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পিপল আপ গঠনের পর প্রথম আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে গত ৩ মে নিউইয়র্ক স্টেট এর জনপ্রিয় অ্যাসেম্বলি ওম্যান জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস ও অ্যসেম্বলি ম্যান স্টিভেন রাগাসহ কয়েকজন ডেমোক্রেট প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক এনডোর্সমেন্ট প্রদান করেন। ওই অনুষ্ঠানে অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা আবু জাফর মাহমুদের কাউন্টি কমিটি মেম্বার প্রার্থীতার কথা ঘোষণা করেন। নিউইয়র্কের সকল বাংলাদেশি গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ তার প্রতি উচ্ছ্বসিত সমর্থন জানান।
গত ১৪ জুন পিপল আপ এর উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটস এ ডেমোক্রেট প্রাইমারি নির্বাচনী প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নিউইয়র্ক স্টেট এর অ্যাসেম্বলি মেম্বারসহ ডেমোক্রেটিক প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে পিপল আপ এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হন মার্কিন কংগ্রেসের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ এর নির্বাচনী টিমের কর্মকর্তারা। তারা পিপল আপের রাজনৈতিক এজেণ্ডার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
২৫ জুন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নির্বাচনের দিন আবু জাফর মাহমুদের নেতৃত্বে পিপল আপ এর কর্মী সদস্যরা জ্যাকসন হাইটস এ ভোটারদের মাঝে নির্বাচনী সচেতনতা সৃষ্টির পক্ষে কাজ করেন। সেখানে পিপল আপ এর পথসভায় বক্তব্য রাখেন কংগ্রেস ওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ, অ্যাসেম্বলি ওম্যান জেসকিা গঞ্জালেস রোহাস, কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান, কুইন্স সিভিল কোর্ট জাজ শরিফা এন নাসের, কেসান্দ্রা এ জনসনসহ অন্যান্যরা। পরে কংগ্রেস ওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ এর অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিপল আপ এর পথসভার চিত্র প্রকাশিত হয়।