Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদদুদকের জালে বাংলাদেশের ৩ শতাধিক প্রভাবশালী

দুদকের জালে বাংলাদেশের ৩ শতাধিক প্রভাবশালী

জয় বাংলাদেশ: ছাত্র-জনতার এক অভ্যুত্থানে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের। ৫ আগস্টের পর রাতারাতি আত্মগোপনে চলে যান অনেক বাঘা-বাঘা মন্ত্রী,এমপি। অনেক নেতা সুযোগ বুঝে দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সালমান এফ রহমান, দিপুমনি আনিসুল হকের মতো জাদরেল মন্ত্রী-এমপিরাও। শুধু আটক করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না প্রশাসন। চলছে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানও। অদনেকে প্রভাবশালী আমলা-মন্ত্রী, ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

জানা যায়, আগস্ট থেকেই একের পর এক প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এরই মধ্যে তিন শ’ জনের তালিকা ধরে আগানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে ৭০ জনের বেশি সংখ্যক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও পুলিশের কর্মকর্তাসহ সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে ২৬ জন সাবেক এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। টানা তিন মেয়াদে বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, তৎকালীন সরকারের মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, দুর্নীতি ও পাচারের ঘটনা ঘটে। যদিও এসব অভিযোগ বিভিন্ন সময় দুদকের কাছে এলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যান/কমিশনাররা তাদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেননি।

দুদক বলছে, এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকায় তাদের ওপর কোনো চাপ নেই। যেকোনো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারছেন তারা। শুধু অভিযানই নয়, ঋণ খেলাপিদের ধরতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুদকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের দ্বারা আলাদা টিম করে অনুসন্ধান করা হবে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়- হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ ৭০ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এর মধ্যে গত ১৭ই আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ চার এমপি ও ১৮ই আগস্ট সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। এর বাইরে ১৯শে আগস্ট সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীসহ ৪১ জন মন্ত্রী-এমপি’র বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়। ২০শে আগস্ট সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ পাঁচ এমপি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম, ২৫শে আগস্ট সাবেক পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ চার এমপি ও একজন সাবেক আমলা, ২৭শে আগস্ট সাবেক দুই এমপি, ২৮শে আগস্ট সাবেক মৎস্যমন্ত্রীসহ চার এমপি ও ২৯ষে আগস্ট সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমসহ দুই এমপি’র দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, মুস্তফা কামালসহ চারজন এমপি’র নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা অপর সদস্যরা হলেন- সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও বেনজীর আহমেদ। মাত্র দেড় বছরে তাদের মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার লাখ শ্রমিক পাঠিয়ে ওই অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।

তালিকায় আরও যারা রয়েছেন তারা হলেন- সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অপু উকিল। তালিকায় আছেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন, সাবেক সহকারী (পিয়ন) ৪০০ কোটি টাকার মালিক মো. জাহাঙ্গীর, সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। এ ছাড়া সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, বরিশাল-২ আসনের সাবেক এমপি শাহ আলম তালুকদার, বরগুনা-১ আসনের সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু ও তার ছেলে সুনাম দেবনাথ, গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। দুদকের তালিকায় আছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার, দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ইকবালুর রহিম, মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শেখর, সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শফিক রয়েছেন।

এর বাইরে সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সাবেক মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খালিদ মাহমুদ, চৌধুরী ফরিদুল হক, ইমরান আহমদ, জাকির হোসেন, কামাল আহমেদ মজুমদার, জাহিদ আহসান রাসেল, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শাজাহান খান, হাছান মাহমুদ, কামরুল ইসলাম, হাসানুল হক ইনুর নামও রয়েছে দুদকের এই অনুসন্ধানের তালিকায়।

অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার প্রধান হারুন অর রশীদ, বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুনের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এ ছাড়া নতুন করে মঙ্গলবার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়সহ তিন জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

দুর্জয় ছাড়া বাকিরা হলেন- রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তমাল মুনসুর। দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম জানান, তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানেও নেমেছে দুদক।

গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, দুদকে অভিযোগ আনার পর দুর্নীতি দমন কমিশনে পদ্ধতিগত একটা সিস্টেম রয়েছে, যেভাবে কার্যক্রম চলছে। আমাদের একটা গোয়েন্দা উইং রয়েছে, সেখানে এগুলোর কার্যক্রম চলছিল। এটা চলমান ছিল, তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments