Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeনিউইয়র্ক নিউজভাষার প্রশ্নে আমরা বিশ্বনেতা, এর মর্যাদা ও শক্তি সুরক্ষায় গভীর মনোযোগের বিকল্প...

ভাষার প্রশ্নে আমরা বিশ্বনেতা, এর মর্যাদা ও শক্তি সুরক্ষায় গভীর মনোযোগের বিকল্প নাই

নিউইয়র্কে জয় বাংলাদেশ ইনক্ এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে আবু জাফর মাহমুদ

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাষাভাষী মানুষের শহর নিউইয়র্কে সমন্বিত আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে সামাজিক সংগঠন জয় বাংলাদেশ ইনক্। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার আবু জাফর মাহমুদের আহ্বানে স্থানীয় গুলশান টেরেস-এ বর্ণাঢ্য ওই অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করে নিউইয়র্কের হোম কেয়ার সেবার পৃথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার।

“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলাদেশের অর্জনের দিন” শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার রাজনীতিক আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বায়ান্নর চেতনা থেকে আমরা সরে এসেছি। সেই সময়ে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে পড়তে যাওয়া ছাত্ররাই সেদিন মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের সামনে এসে যখন প্রতিবাদ করেছে, মাথা উঁচু করে, এই মাথা উঁচু করে থাকার যে প্রতিজ্ঞা ও সংকল্প, এটি কারোর ব্যক্তিগত ছিল না। এটি ছিল জাতির মর্যাদার জন্য। সেই মর্যাদা আমরা এখন ধারন করি না। আমাদের করতে হবে। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

আবু জাফর মাহমুদ কৃতজ্ঞচিত্তে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামসসহ সকল সিটি কাউন্সিলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। একইভাবে তারা বাংলাদেশিদের প্রাণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে জ্যাকসন হাইটস এর ৭৩ স্ট্রিটকে বাংলাদেশ স্ট্রিট নাম দিয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান এবার আমরা মেয়র এরিক এডামস এর বাসভবনে আয়োজন করতে যাচ্ছি। মাননীয় মেয়র এব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছেন এবং তার আন্তরিক একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরাই এই আয়োজনটি করতে যাচ্ছি।

২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি একুশের প্রথম প্রহর পেরিয়ে রাত দেড়টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অনুষ্ঠান মঞ্চে শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এর মধ্যে ছিল জয় বাংলাদেশ ইনক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার, শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ এসোসিয়েশন ইউএসএ ইনক্, জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখা, ফ্রেন্ডস সোসাইটি পার্ক চেষ্টার, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার ইনক্। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক আদিত্য শাহীন।

অনুষ্ঠানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদের প্রবন্ধ সংকলন ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জয় বাংলাদেশ প্রকাশন’ থেকে।

অনুষ্ঠানে পানামার সাংস্কৃতিক কর্মী জোহানা গোনজালেসের নেতৃত্বে ল্যাটিন আমেরিকার শিল্পী ক্যারোল অমর একুশের সঙ্গীতের সুর স্যাকসোফোনে পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় কণ্ঠস্বর ধ্রুবতারা সঙ্গীত দলের প্রতিষ্ঠাতা এস আই টুটুল। তিনি একুশের প্রথম প্রহরের আগে ও পরে মিলিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা পঞ্চাশের দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা সঙ্গীতের ধারাবাহিক উৎকর্ষ তুলে ধরেন। তাকে যন্ত্রসঙ্গীতে সহযোগিতা করেন মাসুদ ও তার মিউজিক্যাল টিম। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন টনি ডায়েস। নৃত্য পরিবেশন করে প্রিয় ডায়েস সঙ্গীত একাডেমি। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করে কানিজ দীপ্তি, আলভান চৌধুরী, ঋতাজা।

আবু জাফর মাহমুদ তার মূল বক্তব্যে বলেন, যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্টিফিকেট থাকলেই আমরা মনে করি, অনেক বেশি শিক্ষিত হয়ে গেলাম। আসলে তা নয়। পাতা যখন সবুজ থাকে, সেই পাতা অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। সূর্য থেকে শক্তি নিতে পারে। পাতা যখন সবুজ রং ছাড়িয়ে অন্য রং ধারণ করে, শুকনো হয়ে যায়, তখন আর অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা থাকে না। আমাদের চেতনা-শিক্ষার অভাব এখন সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা আর মাথা উঁচু করে রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়াতে পারি না।

এই আমেরিকাতেও আমরা বাংলাদেশি আমেরিকান। আমরা আমাদের আত্মমর্যাদা মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ভাষা সবকিছু অক্ষুন্ন রেখেই আমেরিকান, এটি আমাদের চেতনায় রাখতে হবে। আমরা নিজেরা যেমন এখানে হারিয়ে যেতে পারি না, একইভাবে আমাদের সন্তানদেরকেও হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। যেমন করে আমরা আমাদের পরিবার রক্ষা করি, ঠিক তেমন করেই আমাদের ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা করার সংকল্প আমাদের থাকা দরকার। আমাদের যেন মনে থাকে, যে জাতি ভাষা আন্দোলন করে, রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা নয় শুধু সেই আন্দোলনের সোপান ধরে ধরে একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে, আর সেই রাষ্ট্র সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আজ আমাদের রাষ্ট্র অনন্য এক মর্যাদার আসনে, নেতৃত্বের আসনে। আমাদের চেয়ে অনেক বৃহদাকার রাষ্ট্র থাকতে পারে, হাজার কোটি গুণ সম্পদের মালিক হতে পারে, কিন্তু মানবতার প্রশ্নে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনের প্রশ্নে, মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে রক্ত দেয়ার প্রশ্নে, অঙ্গীকারের প্রশ্নে আমরা বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষাভাষীরাই নেতৃত্ব দান করছি। আমরাই নেতা। জাতিসংঘ তথা ইউনেস্কো আমাদের সেই মর্যাদা দিয়েছে।

এই স্বীকৃতির ভেতর দিয়েই নিজেকে চিনতে হবে। আমি যেন নিজেকে চিনতে পারি, আমরা যেন নিজেদেরকে চিনতে পারি, আমরা কারা। আমরা নেতা। নেতৃত্ব আমাদের রক্তে আছে, চেতনায় আছে। আমরা নেতৃত্ব অর্জন করি। এখন দায়িত্ব এই নেতৃত্বের শক্তিকে টিকিয়ে রাখ।

আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উযাপনের সকল আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তথা উদ্যোগী ব্যক্তিদেরকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি বিভিন্ন ভাষা ও জাতির মানুষদের অংশগ্রহণে এই আয়োজন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যদি অন্যের ভাষার মর্যাদা দিই, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সঙ্গে তাদেরকে একাত্ম করে নিই, তাহলে তারাও আমাদের ভাষার প্রতি মর্যাদা দেবে। আর আমাদের আয়োজনের ধারাবাহিকতায় আগামীতে অন্যান্য আয়োজকরাও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষকে যুক্ত রাখবে। এটি দেখে আমরা অবশ্যই উজ্জীবিত হব। আমাদের এই আয়োজন সার্থক হবে।

জনাব জাফর স্মরণ করিয়ে দেন, ‘জয় বাংলাদেশ ইনক্’ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিপক্ষে ব্যবহারের জন্য নয়। এটি বাংলাদেশের সব মানুষের প্লাটফরম।

তিনি বলেন, আমেরিকা সারাবিশ্বের নেতা। আমরা যখন আমেরিকান তখন আমরাও বিশ্ব নেতা। তাহলে বিশ্বনেতার অবশ্যই বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। আর এখানে এসে কোনো বিতর্ক না করে, আমাদের জন্মভূমির প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা দেখাতে হবে। জন্মভূমি রাষ্ট্রের যত্ন করতে হবে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কোনো রাষ্ট্র ভিন্ন কোনো রাষ্ট্রকে ভালোবাসে না। এখানে স্বার্থের সমন্বয় করতে হবে। স্বার্থের সম্পর্ক গড়তে হবে। প্যাসিফিক থেকে শুরু করে বে অফ বেঙ্গল, আমাদের স্বার্থগত সম্পর্কের বলয়। আমরা আমেরিকার স্বার্থ ও বাংলাদেশের স্বার্থ বুঝেই কাজ করবো। কাউকেই ছোটো করবো না। কাউকেই অবজ্ঞা করবো না।

আজ গোটা নিউইয়র্ক সিটি ও স্টেট জুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করছে, আমাদের জাতির প্রতি সম্মান জানাচ্ছে। এখন দায়িত্ব আমাদের। আমরা কীভাবে নিউইয়র্ক সিটিকে ভালোবাসবো, অন্য জাতিগোষ্ঠি থেকে এগিয়ে থাকবো এই দৃষ্টান্ত আমাদেরকে গড়তে হবে। একটু গভীরে গিয়ে খোঁজ নিলেই জানবেন, আমেরিকা কীভাবে বাংলাদেশের জন্য কাজ করেছে। কীভাবে ছোট্ট দেশটির পাশে থেকেছে। এখনও আছে। আন্তরিকভাবেই আছে। এই আন্তরিকতার মূল্যায়ণ করতে হবে। ভালোবাসার প্রশ্নে আমাদের ঐতিহ্য ও চেতনার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত গড়তে হবে।

নিউিইয়র্কে বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নারী পুরুষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments