ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ফাঁস হওয়া মন্তব্যে ক্ষুব্ধ কাতার। ফাঁস হওয়া মন্তব্যে নেতানিয়াহু ইসরায়েল-হামাসের মধ্যস্থতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন বলে বুধবার দেশটি জানিয়েছে।
সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে শত্রুতা বন্ধ করার যে চুক্তি কাতার করেছিল নেতানিয়াহুর মন্তব্যের পর তা আরও জটিল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, মধ্যস্থতায় কাতারের ভূমিকা ছিল ‘ত্রুটিযুক্ত’।
কাতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী। হামাসের সঙ্গে দেশটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গোষ্ঠীটির কিছু নির্বাসিত নেতাকেও আশ্রয় দিয়েছে কাতার। এই প্রসঙ্গে নেতানিয়াহুর মন্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ধ্বংসাত্মক’ বলে ক্ষোভ জানিয়েছে দোহা।
হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি সম্ভাব্য চুক্তির দিকে যাচ্ছিল উভয়পক্ষ। এরইমধ্যে জিম্মিদের পরিবাবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন নেতানিয়াহু। ধারণা করা হচ্ছিল সম্ভাব্য এই চুক্তির মাধ্যমে হয়তো তিন মাসব্যাপী চলা রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ কিছুটা হলেও কমে আসতো।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এই যুদ্ধে ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা ভূখণ্ডের বসবাসকারী ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়ের।
কূটনীতিক প্রচেষ্টা চালু থাকলেও গাজায় এখনও তীব্র লড়াই চলছে, বিশেষ করে দক্ষিণ গাজায়। এই অঞ্চলে জাতিসংঘের একটি স্থাপনাতেও ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত ও ডজন ডজন আহত হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। হামলার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী দায়ী নয় বলে অস্বীকার করেছে দেশটি। পাশাপাশি এর জন্য হামসকে দায়ী করেছে তারা।
নেতানিয়াহুর ফাঁস হওয়া মন্তব্য মঙ্গলবার ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল ১২-এ সম্প্রচারিত হয়েছিল। সেখানে তিনি পরিবারগুলোকেও বলেছিলেন, তিনি নিজ থেকে কাতারকে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ দেননি। এটি হামাস গোষ্ঠীর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মতে কাতার জাতিসংঘের থেকে আলাদা নয়। সংক্ষেপে বললে রেড ক্রস থেকে আলাদা নয়। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি ত্রুটিযুক্ত।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল জাতিসংঘের ওই সংস্থাগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখে। এমনকী তাদেরকে পক্ষপাতদুষ্ট বলেও মনে করে ইসরায়েল।
নেতানিয়াহু ফাঁস হওয়া অডিওতে আরও বলেছেন, তিনি উপসাগরীয় রাজ্যে একটি সামরিক ঘাঁটি পুনর্নবীকরণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য তিনি আমেরিকানদের কাতারের ওপর চাপ দিতে বলেছেন।
কাতার নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছিল যেখানে ১০০ জনের বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, মাজেদ আল-আনসারি এক্স-এ বলেছেন, নেতানিয়াহুর রিপোর্টে তার সরকার ‘শঙ্কিত’ কিন্তু তারা অবাক হয়নি।
আল-আনসারি বলেছেন, ‘যদি রিপোর্ট করা মন্তব্যটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী শুধু মধ্যস্থতা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন এবং অবমূল্যায়ন করবেন, যে কারণে ইসরায়েলি জিম্মিসহ নিরপরাধ জীবন বাঁচাতে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পরিবেশন করা বলে মনে হচ্ছে।’