জয় বাংলাদেশ : দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিলেন আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আজ মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় সময় সাড়ে চারটায় উপরাজ্যপাল বিনয় কুমার সাকসেনার বাসভবনে গিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র তুলে দেন। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সরকার গঠনের দাবি জানান আপ নেত্রী আতিশি। তিনিই হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। আজই তিনি সর্বসম্মতভাবে পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন।
আবগারি (মদ) মামলায় জামিন পেয়ে রোববার কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, দুই দিনের মধ্যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেবেন। তিনি ‘ইমানদার’ (সৎ) না ‘গুনাহগার’ (অপরাধী) সে বিষয়ে জনতার রায় না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আজ বিকেলে কেজরিওয়াল ইস্তফা দেন। তার আগে আতিশি আপ পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন। আতিশিকে সঙ্গে নিয়েই কেজরিওয়াল যান উপরাজ্যপালের কাছে। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর নতুন সরকার গড়ার চিঠি পেশ করেন আতিশি।
আতিশি ছাড়াও কেজরিওয়ালের সঙ্গে উপরাজ্যপালের বাসভবনে যান আপ নেতা ও বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য গোপাল রাই ও সৌরভ শুক্লা। তাঁদের আশা, আতিশিকে শিগগিরই নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করানো হবে।
নতুন সরকার গঠনের দাবি জানানোর পর উপরাজ্যপালের বাসভবনেই সংবাদমাধ্যমকে আতিশি বলেন, জামিন পেয়ে কেজরিওয়াল বলেছিলেন, জনতার রায় নিয়েই তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সেই রায় দ্রুত পাওয়ার দাবি তিনি উপরাজ্যপালের কাছে জানিয়েছেন। মহারাষ্ট্র বিধানসভার সঙ্গে নভেম্বর মাসেই দিল্লি বিধানসভার ভোট করানোর আরজি জানিয়েছেন তিনি।
আতিশি বলেন, তত দিন পর্যন্ত দিল্লির দুই কোটি জনতার সেবা করার দায়িত্ব তাঁর ওপর বর্তেছে। সেই দায়িত্ব মাথা পেতে নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁদের লক্ষ্য দিল্লির সন্তান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আরও একবার মুখ্যমন্ত্রী করা, যাতে রাজধানীর গরিব মানুষ বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ পান, মহল্লার ক্লিনিকগুলো গরিবের চিকিৎসা করতে পারে, সরকারি স্কুল বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উচ্চমানের শিক্ষা দিতে পারে, নারীরা বিনা ভাড়ায় চলাচল করতে পারেন।
তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে দিল্লি সরকার নতুন আবগারি নীতি চালু করেছিল। অভিযোগ, সেই নীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে আপ সরকার ১০০ কোটি রুপি ঘুষ নিয়েছিল। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ও সিবিআইয়ের অভিযোগ, সেই ঘুষের অর্থ আপ নেতৃত্ব খরচ করেছিল গোয়া বিধানসভার ভোটের প্রচারে। এ নিয়ে হইচই হলে আপ সরকার সেই নীতি বাতিল করে দেয়।
আবগারি মামলায় একে একে গ্রেপ্তার করা হয় দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া, রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং ও তেলেঙ্গানার বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে। ছয় মাস আগে গ্রেপ্তার করা হয় কেজরিওয়ালকে; কিন্তু কারও কাছ থেকে ঘুষের একটি রুপিও তদন্তকারী সংস্থা উদ্ধার করতে পারেনি। কোনো তথ্য–প্রমাণও দাখিল করতে পারেনি। ফলে একে একে জামিন পান সিসোদিয়া, সঞ্জয় সিং ও কবিতা। জামিন পান কেজরিওয়ালও।
আতিশি হবেন দিল্লির তৃতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী
আতিশি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে কবে শপথ নেবেন তা এখনো জানা যায়নি। তিনি হবেন দিল্লির তৃতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৯৮ সালে মাত্র ৫২ দিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। এরপর টানা তিনটি নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত। তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী হবেন আতিশি। বর্তমানে দেশের একমাত্র নারী মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিল্লি বিধানসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে আগামী বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি। দিল্লি বিধানসভার মোট আসন ৭০টি। ২০১৫ সালে আপ জিতেছিল ৬৭টি আসন, ২০২০ সালে ৬২টি। কেজরিওয়ালের মতো সিসোদিয়াও জানিয়েছেন, জনতার রায়ে নির্দোষ প্রতিপন্ন না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করবেন না তিনি। সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক দাবি জানিয়ে আতিশিও বলেছেন, কেজরিওয়ালকে আরও একবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী করাই তাঁদের লক্ষ্য।