ফোন ট্র্যাকিং অনেক অপ্রত্যাশিত উপায়ে করা হয়। আপনার ডিভাইসে কারও প্রবেশের অধিকার থাকলে কেউ ফোনে লোকেশন-ট্র্যাকিং ফিচারটি চালু করতে পারবে। অন্য কোনো ব্যক্তি ট্র্যাকিং চালু করেছেন কি না সেটা ডিভাইসের মালিক বুঝতেও পারবেন না। এতে করে অনেক অ্যাপ এবং ফোন অপারেটিং সিস্টেমের লোকেশন-ট্র্যাকিং ফিচার মানুষের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শুধু তাই নয়, কর্মক্ষেত্র বা নিয়োগকর্তা দ্বারাও আপনার ফোনের ব্যবহার ট্র্যাকড হতে পারে। বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে আপনার ডিভাইসটি কোম্পানি থেকে ইস্যু করা থাকে। এমনকি আপনার স্মার্টফোনটি যদি একটি করপোরেট নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেক্ষেত্রেও আপনাকে ট্র্যাকিং সম্ভব।
এ তো গেল একটি অংশ। অনেক অ্যাপে বিল্ট-ইন ট্র্যাকিং ফিচার থাকে। এই ফিচারগুলো প্রয়োজনের স্বার্থেই ব্যবহৃত হয়। যেমন আপনি কোনো ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করলে সেটি আপনার লোকেশন জানতেই চাইবে। ২০১৯ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি তদন্তে ২৫০টি আইফোন অ্যাপ পরীক্ষা করা হয়। যেখানে দেখা হয় যে পণ্য বা পরিষেবাগুলো ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করেছে কি না। ফলাফলে দেখা যায়, তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
যোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারী বা সিম কোম্পানিও ফোন ট্র্যাকিং করে। প্রতিটি ফোনই কোম্পানির মালিকানাধীন সেল টাওয়ারে ব্যক্তিগতভাবে শনাক্তযোগ্য তথ্য পাঠায়। এটা এই নেটওয়ার্কের জন্য অনেক জরুরি। ফোন কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই আপনার অবস্থান যাচাই করতে হবে।
কিভাবে বুঝবেন আপনাকে ট্র্যাক করা হচ্ছে?
লক্ষ্য করবেন, আপনার ফোন আচমকা স্লো হয়ে গেছে। চালানোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তখন সন্দেহ করতে পারেন। অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন কোনোভাবেই ভালো নয়। এভাবে অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায় না। তাই আপনি বিভিন্ন কোড ডায়াল করতে পারেন। যেমন: *#61# লিখে ডায়াল করলে ইনকামিং কলগুলো অন্য কোনো নম্বরে ফরওয়ার্ড করা হয় কি না তা জানাবে। একইভাবে *#62# ডায়াল করে আপনি দেখতে পারবেন যে, কোনো ডাইভারশন সফটওয়্যার বিভিন্ন কল এবং টেক্সটকে আপনার কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয় কিনা। এভাবে কিছুটা হলেও আপনি ট্র্যাকিং সম্পর্কে সচেতন হতে পারছেন।
উপায় কি তাহলে?
খুব সহজ পন্থাগুলো। শুধু আপনাকে বুঝতে হবে কিছু বিষয়। যেমন:
ফ্লাইট মোড চালু এবং জিপিএস লোকেশন সেটিংস বন্ধ করা
ফোনের অ্যারোপ্লেন মোড ফিচারটি চালু করলে তা সেলুলার এবং ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কগুলোর সেই সংযোগগুলোকে বাধা দেয়,। এভাবে ট্র্যাকিং করা কঠিন হয়ে যায়। শুরুতে ফ্লাইট মোড অন করুন। তারপর আপনার ফোনের জিপিএস বা লোকেশন ফিচারটির অবস্থা পরীক্ষা করুন ফ্লাইট মোড চালু করার পর প্রায়শই লোকেশন সেটিংস স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে এটি বন্ধ হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো।
কিন্তু এই ফিচারগুলো বন্ধ করলে আপনি কল বা মোবাইল ডেটার জন্য আপনার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ট্র্যাকিং বন্ধ করার জন্য এটি একটি দ্রুত উপায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য এটি আদর্শ নয়।
অপারেটিং সিস্টেম সেটিংসের দিকে মনোযোগ দিন
যারা অ্যাপভিত্তিক ট্র্যাকিং সম্পর্কে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। তারা অপারেটিং সিস্টেম বা ওএস-ভিত্তিক সেটিংস থেকে এটিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। অ্যাপলের আইওএস-এর সাম্প্রতিক সংস্করণগুলো সব ধরনের অ্যাপ কিংবা পৃথক অ্যাপের ক্ষেত্রে ট্র্যাকিং বন্ধ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। গুগলও সম্প্রতি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য প্রাইভেসি স্যান্ডবক্স নামে অনুরূপ একটি ফিচারের ঘোষণা করেছে। এটি থার্ড পার্টির কাছে ব্যক্তিগত ডেটা স্থানান্তর সীমিত করে আনে। এ ছাড়া এটি সব অ্যাপে ট্র্যাকিং কার্যক্রম চলার অনুমতি দেয় না।
ব্রাউজারে গোপনীয়তা বজায় রাখা
ওয়েব ব্রাউজার হিসেবে বেশিরভাগ মানুষ গুগল ক্রোমকে তাদের পছন্দের শীর্ষে রাখে। তবে অনেকে বুঝতে পারে না যে এটি ব্যবহারকারীদের অনলাইন কার্যকলাপ ট্র্যাক করে থাকে। কিন্তু আপনি চাইলে বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে গুগলের ট্র্যাকিং ফিচারগুলো বন্ধ করতে পারবেন।