সরকার ইসিকে নিয়ন্ত্রণ করছে- এ অভিযোগে ভোটবর্জন করেছেন বরিশাল-৫ (সদর) ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ভোটবর্জনের ঘোষণা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তাপস বলেন, ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। কিন্তু সরকারের যে ভোট চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস থেকে কতটুকু বেরিয়ে আসতে পারবে? ‘১৪’র নির্বাচন, ‘১৮’র নির্বাচন সবাই দেখেছে। সেগুলো কীভাবে হয়েছে? আমরা এ বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি সেখান থেকে বলতে চাই, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু ইসি ও সরকার মিলে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করেছে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগরের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন তাপস আরও বলেন, ‘তারপরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার দল গঠনতন্ত্রের ওপর আস্থা রেখে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে কিছু যাচাই-বাছাইয়ে বাদ দেওয়ার পরে ২৮৭ জন টিকে আছেন। তারা নির্বাচনের মাঠে আছেন। এর মধ্যে আমিও প্রার্থী হিসেবে পর্যবেক্ষণে ছিলাম। নির্বাচনী মাঠে আমরা যা দেখেছি তার শেষ পরিণতি বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় একজন নিহত হয়েছেন। যে মাঠে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।’
ইসিকে নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনার বলে যাচ্ছে, মোটা দাগে কোন সহিংসতা হয়নি। নির্বাচন কমিশনার এমন আচরণ ও বক্তব্য দেখে আমাদের মনে দিন দিন শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ইসি মুখে বলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাদের কর্ম এবং অন্যান্য আচরণে মনে হচ্ছে তারা একটি দল ও সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’
মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের একেক জনের ৫০ হাজার গুণ, ৬০ হাজার গুণ, ১০ হাজার গুণ সম্পদ বেড়েছে গত ৫ বছরে। নির্বাচনী হলফনামায় সেটি প্রকাশও করেছে। সেখানে এক ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছে ৫ হাজার টাকা, ১ একর জমির দাম দেখিয়েছে ১ হাজার টাকা, ২ হাজার টাকা। কিন্তু এ বিষয়ে ইসির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। একজন মন্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ দেশের বাইরে আছে। তা হলফনামায় প্রকাশ করা হয়নি। তারপরেও আমাদের ইসির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।’
সব শেষে ভোটবর্জন করা এই প্রার্থী বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে আবারও আগামী ৭ জানুয়ারি প্রহসনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যে নির্বাচনের সাধারণ মানুষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখানে আছে একটি দল ও সেই দলের লেজুড়ভিত্তিক কিছু মানুষ। তারাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে।’
রে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে একই স্থানে মতবিনিময় করেন ইকবাল হোসেন তাপস। সেখানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল ও সঞ্চালনা করেন মহানগর যুব সংহতির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম।
ভোটবর্জন করলেন জাপার আরেক প্রার্থীও
একই কারণ দেখিয়ে বরগুনা-১ (তালতলী-আমতলী) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী খলিলুর রহমানও ভোটবর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা দেখুন আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু হয় কি না।’