জয় বাংলাদেশ: বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ আবার ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জুন মাস (অর্থবছর) শেষে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলার। এই অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মার্চ মাসে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯৩১ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত তিন মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৪৪৮ কোটি ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি হয়েছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। এর পরের তিন মাসে বিদেশি ঋণের স্থিতি কিছুটা কমে আসে। গত মার্চ শেষে তা দাঁড়ায় ৯ হাজার ৯৩১ কোটি ডলারে। তবে পরের তিন মাসে বিদেশি ঋণ আবার বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১১৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত ৯ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। সেই হিসাবে গত জুন শেষে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬১১ ডলার (প্রায় ৭৩ হাজার টাকা)। ৯ বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ২৫৭ ডলারের কিছু বেশি।
মোট বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি খাতে ৮০ শতাংশ আর বেসরকারি খাতে প্রায় ২০ শতাংশ ঋণ রয়েছে। গত জুন শেষে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৮ হাজার ৩২১ কোটি ডলার। তার আগের তিন মাসে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৭ হাজার ৯০১ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে গত জুন শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার, যা গত মার্চে ছিল ২ হাজার ২৯ কোটি ডলার।
সরকার বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো সংস্থা এবং জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো দেশের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ নেয়। এসব ঋণ নেওয়া হয় মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থায়ন ও বাজেট–সহায়তা হিসেবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) গত ডিসেম্বরের হিসাবে, ঋণদানে শীর্ষ দেশ ও সংস্থার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, জাপান, এডিবি ও চীন। বিদেশি অর্থায়নে বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, মেট্রোরেল (লাইন-৬), হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি।