জয় বাংলাদেশ : ‘পাহাড়ি-বাঙালি’ সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে তিন দিনের টানা অবরোধ ও পরিবহন ধর্মঘটে রাঙামাটির সাজেকে আটকা প্রায় দেড় হাজার পর্যটক জ্বালানি তেলের অভাবে পানি-বিদ্যুৎ ও খাবারের সংকটের মুখে পড়েছেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ডাকে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ সোমবার শেষ হয়েছে। রোববার রাতে পরিবহন ধর্মঘটও তুলে নেওয়া হয়।
ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে পর্যটকরা সাজেক ছাড়তে পারবেন বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
তিনি বলেন, “অবরোধের কারণে বাঘাইহাট-দীঘিনালা সড়কে একাধিক স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচল করতে না পারায় পর্যটকদের তিন দিন সেখানে অবস্থান করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল সকাল তারা সাজেক ত্যাগ করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, “খাদ্য সংকটের বিষয়ে আমরা তেমন কোনো সংবাদ পাইনি। তবে বিদ্যুতের সমস্যা আছে।”
কটেজ মালিক, স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দীঘিনালা-সাজেক সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। চার দিন জ্বালানি তেল দিয়ে জেনারেটর ব্যবহার করে পর্যটকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখেছিল কটেজ কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু অবরোধে জ্বালানি তেলের গাড়ি সাজেকে যেতে না পারায় তেল সংকট দেখা দেয়। এতে পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে পর্যটকরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।
সাজেকে তিন শতাধিক কটেজ ও রেস্টুরেন্টে মালিক-কর্মচারী রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। সঙ্গে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক; সবমিলিয়ে তিন হাজার মানুষের ব্যাপার।
সেলিম উদ্দিন নামে এক পর্যটক বলেন, “এখানে আসার পর বিদ্যুৎ ছিল না। জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা সার্বক্ষণিক পাচ্ছি না। এখন নাকি জ্বালানি তেলও শেষ হয়েছে; তাই জেনারেটরও চালাতে পারছে না।
“আজকে (সোমবার) রাত কীভাবে কাটাবো বুঝতে পারছি না। আবার পানিও পর্যাপ্ত নেই। সবমিলে দুর্বিষহ জীবন।”
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সাজেকে খুব বেশি খাবার মজুত করে রাখা হয় না। ফলে এই সংকট তৈরি হয়েছে।
সাজেক অবকাশ কটেজের সত্ত্বাধিকারী বিজয় ঘোষ বলেন, “অবরোধের কারণে আমাদের কটেজেই ৬৫ জনসহ সাজেকে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক আটকা পড়ে আছে শনিবার থেকে। সেখানে বিদ্যুৎ নেই বৃহস্পতিবার থেকে। জেনারেটর দিয়ে পর্যটকদের সেবা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি তেলের সঙ্কটে সে সেবাও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে গরমে শিশুরা কষ্ট পাচ্ছে। অনেক অসুস্থ রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, “খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, সেখানে অগ্রিম তেমন খাবার মজুদ রাখা হয় না। খাবার নিয়ে যেতে হয় ৪০ কিলোমিটার দূরে বাঘাইহাট থেকে। কিন্তু অবরোধের কারণে তা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
এ কারণে রোববার থেকে মনটানা রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে জানিয়ে বিজয় ঘোষ বলেন, “আমাদের কটেজের লোকজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছি। একটি রেস্টুরেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি তারা দুপুরে শুধু ডাল-ভাত খাওয়াতে পারবে বলেছে।”
জ্বালানি তেলের ব্যবস্থা করতে পারলে সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হত বলে মনে করেন বিজয়।
সাজেকের নিরিবিলি কটেজের মালিক মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, “সাজেকে প্রচুর পর্যটক আটকা আছে। সেখানে অবরোধের কারণে তেল নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় পানিসহ বেশ কিছু সংকট দেখা দিয়েছে।”
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সহসভাপতি চাই থোয়াই চৌধুরী জয় বলেন, “আটকেপড়া পর্যটকদের জন্য প্রথমদিন ৫০ ভাগ ডিসকাউন্ট এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন ৭৫ ভাগ ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে। রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতি পর্যটকদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “খাদ্য অপ্রতুলতার কারণে আজ (সোমবার) রাতে কটেজ মালিক সমিতি ও ট্রাভেল এজেন্সি ইলেকট্রনিক ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পর্যটক, গাড়ির চালক, স্টাফ সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা আমাদের অতিথি, তাদের যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি।”
এদিকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার হওয়ার ফলে সোমবার সকাল থেকে রাঙামাটি শহরে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
পাশাপাশি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম পথে যানচলাচল শুরু হয়েছে। তবে বন্ধ ছিল রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি-বান্দরবান পথে।
অবরোধের কারণে ছেড়ে যায়নি যাত্রীবাহী কোনো লঞ্চ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।