জয় বাংলাদেশ: নিউইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ আবু জাফর মাহমুদ। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন তিনি মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস গঠন করে নতুন উদ্যোমে রাজনীতিতে অগ্রসর হয়েছেন।
চলতি বছরের ২৫ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেট প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন তিনি । ২৯ জুন নিউইয়র্কের উডসাইডের গুলশান টেরেসে আবু জাফর মাহমুদের নেতৃত্বধীন রাজনৈতিক সংগঠন পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস আয়োজিত সাংগঠনিক আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন নিউইয়র্ক স্টেট এর অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা ।
পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেসের প্রেসিডেন্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ জানিয়েছেন তার এ অর্জন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সীমানা অতিক্রমের একটি আনুষ্ঠানিক অধ্যায় । বলেন, যারা এতদিন বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অবদান রেখেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এখন দৃপ্তস্বরে , স্বগৌরবে বলতে পারবেন ডেমোক্রেটিক নিবার্চনে আমরাও মূলধারার নেতৃত্বে অংশীদার।
তিনি জানান, কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তার জয়লাভের বিষয়টি একটা ইতিহাস ও একই সঙ্গে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এর কৃতিত্বের দাবিদার কমিউনিটির সকল মানুষ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর যোদ্ধা এবং বাংলাদেশি আমেরিকান সম্প্রদায়ের অন্যতম স্তম্ভ আবু জাফর মাহমুদ, এমনই একজন ব্যক্তি, যার জীবনের কর্ম শুধুমাত্র তার নিজস্ব জনগণের জন্য নয়, বরং বৃহত্তর আমেরিকান সমাজের জন্যও অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলেছে।
১৯৪৮ সালের এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরের তীরে জন্ম নেওয়া আবু জাফর মাহমুদের জীবনটি তাঁর ঐতিহ্য এবং তাঁর গ্রহণকৃত দেশ উভয়ের প্রতি এক অবিচল প্রতিশ্রুতির উদাহরণ। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কে বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস এবং অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার ইনকর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আবু জাফর মাহমুদ দীর্ঘমেয়াদী হোম কেয়ার শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, অসংখ্য প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধীদের উচ্চমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নত করেছেন। কিন্তু তাঁর পেশাগত সাফল্যের বাইরেও, মাহমুদ প্রবাসী বাংলাদেশি এবং অন্যান্য অভিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় এক অবিচল সংগ্রামী। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে তাদের কণ্ঠ আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে গুরুত্ব সহকারে শোনা হয়।
মাহমুদের যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে, যেখানে তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি একটি পর্বত ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেছিলেন এবং জাতির শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করেছিলেন। সামরিক সেবা শেষ করার পর, তিনি বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবিক কাজ চালিয়ে যান। তাঁর সাহায্যের হাত পৌঁছে গেছে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক এবং ভূমিকম্প বিধ্বস্ত হাইতির মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক শহরে কোভিড-১৯ মহামারির সময়, মাহমুদের প্রচেষ্টা ছিল অসাধারণ। মহামারি চলাকালীন, মাহমুদ এবং তাঁর সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য, ওষুধ এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে, যা তাঁর অবিচল মানবিকতার প্রতিচ্ছবি।
প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর অবদান শুধু মানবিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মাহমুদ ‘পিপল ইউনাইটেড ফর প্রগ্রেস’ এর নেতৃত্বে থেকে সংখ্যালঘু অভিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে, এই সংস্থা বাংলাদেশি আমেরিকানদের শুধু আমেরিকার সমাজে একীভূত করা নয়, বরং তাদেরকে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী করে তুলেছে। ভোটার নিবন্ধন ক্যাম্পেইন, নীতি পরিবর্তনের জন্য প্রচারণা, এবং বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা—এসবের মাধ্যমে মাহমুদ প্রমাণ করেছেন যে প্রবাসীদের অধিকারের জন্য তিনি কতটা নিবেদিত।
এই অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে, মাহমুদ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রেসিডেন্টস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং প্রেসিডেন্টস ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড। তাঁর বাংলাদেশি ও আমেরিকান সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনের ক্ষমতা তাঁকে প্রবাসীদের জন্য এক আশা ও প্রেরণার প্রতীক করে তুলেছে।
রাজনীতি ছাড়াও, আবু জাফর মাহমুদের প্রভাব সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী। জয় বাংলাদেশ মিডিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসেবে তিনি টেলিভিশন এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁর প্রকাশনা “দ্য বেই ওয়েভ” বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে অর্থনীতি, রাজনীতি এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া তাঁর বই জয় বাংলাদেশ বাংলাদেশের গর্ব এবং একতার এক নতুন বর্ণনা উপস্থাপন করে, যা দেশের ধ্রুবক রাজনৈতিক বিভাজনের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে।
মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি এমন একটি ক্ষেত্র তৈরি করেছেন যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকানদের অবদান উদযাপিত হয় এবং যেখানে বৃহত্তর আমেরিকান জনসাধারণ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে। তাঁর এই কাজ প্রবাসীদের পরিচয়কে সংরক্ষণ করেছে এবং তাদের গল্পগুলোকে আমেরিকান জীবনের অংশে পরিণত করেছে।
আবু জাফর মাহমুদের অসাধারণ জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার এক অবিচল প্রতিজ্ঞা। হোক সেটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে মানবিক সাহায্য, নিউ ইয়র্কের দীর্ঘমেয়াদী সেবা প্রদান, কিংবা অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় নেতৃত্ব—মাহমুদ সবসময়ই তাঁর কমিউনিটি এবং মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন।