Tuesday, November 19, 2024
Google search engine
Homeস্বদেশ সংবাদভারত কি হাসিনাকে রাখবে নাকি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে?

ভারত কি হাসিনাকে রাখবে নাকি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে?

সব ডিক্টেটরই কম-বেশি মানুষ খুন করেছে, ভবিষ্যতের ডিক্টেটরেরাও তা করবে কিন্তু হিটলারের পরে সম্ভবত সবচেয়ে ঘৃণিত কয়েকজন খুনি ডিক্টেটরের একজন শেখ হাসিনা।  তার শাসনামলে, তার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নির্দেশে, কত মানুষ খুন হয়েছে এর একটি হিসেব আমরা হয়ত একদিন জানতে পারবো, আমি অনুমান করছি এই সংখ্যাটি এতো বেশি যা শুনলে আমরা হয়ত শিউরে উঠবো।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ডিক্টেটরেরা ক্ষমতাচ্যুত হবার পর রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং অনেকেই পেয়েছেন কিন্তু আজ দুদিন হয়ে গেল শেখ হাসিনাকে এখনও পর্যন্ত কোনো দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে রাজী হয়নি বলে বাংলাদেশ এবং ভারতের মিডিয়াগুলো জানিয়েছে।  কেন কোনো সভ্য দেশ তাকে আশ্রয় দিতে চায় না? কারণ এতো বড়ো একজন খুনিকে আশ্রয় দিয়ে দেশগুলো তাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত ইমেজের ক্ষতি করতে চাইছে না। যে দেশ তাকে আশ্রয় দেবে সেই দেশের দিকে পৃথিবীর মানুষ আঙুল তুলে প্রশ্ন করবে, তোমরাও কি এই খুনের অংশীদার? আজকের পৃথিবীতে কেউ মানুষ হত্যা করার মত ভয়ঙ্কর অপরাধের দায় নিতে চায় না।

একজন মানুষ যখন চুরি করে সে তার চুরি করা ধন-সম্পদ কোথায় রাখে? যারা তার চুরির সহযোগী বা সুবিধাভোগী তাদের কাছে, যেমন তার পরিবার, আত্মীয় বা বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছে। একজন মানুষ যখন ভয়ঙ্কর অপরাধ করে পালায়, তখন সে কোথায়, কার কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়? তার খুনের সহযোগী বা সুবিধাভোগীর কাছে। যখন পৃথিবীর কোনো দেশ হাসিনার খুন, লুটপাট, চুরির সহযোগী হতে চাইছে না তখন হাসিনা এবং তার পরিবার আশা করছে ভারত নিশ্চয়ই তাকে আশ্রয় দেবে। তাদের এই প্রত্যাশার দুটি কারণ আছে। প্রথমত, ১৯৭৫ সালে তার পিতা ও পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার পরে তাকে ৬ বছর আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয়ত, গত পনের বছরে বাংলাদেশের স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি ভারতকে অকাতরে দান করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমি ভারতকে যা দিয়েছি ভারত আজীবন তা মনে রাখবে? হয়ত এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ভারত তাকে আশ্রয় দিতে পারে তবে হাসিনার খুন ও লুটপাটের সহযোগী হিসেবে ভারত বিশ্ববাসীর কাছে নিজের এই নগ্ন মুখ উন্মোচন করবে কী-না সেটিও তারা ভেবে দেখবে বলে আমার মনে হয়।

এই মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার পারদ তলানীর দিকে নেমে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়টাতে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এতো বড়ো ক্ষতি তিনি করবেন কী-না তা নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন। একথা তো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ভালো করেই জানে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেবার মানেই হচ্ছে ১৮ কোটি মানুষের ঘৃণার গনগনে আগুন ভারতের দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। শেখ হাসিনা ভারতের ফেভারে যত চুক্তি করেছেন সেই চুক্তির নৌকাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের মানুষের ঘৃণার নদীতে পাল তুলে ভারতের বন্দরে এসে ভিড়বে না। এইসব চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য দরকার বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন।

যে ন্যায্য ছাত্র আন্দোলনের দাবীর মুখে ডিক্টেটর হাসিনার পতন ঘটলো তার ঢেউ ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসে আছড়ে পড়েছে, তা আমরা মিডিয়াগুলোতে দেখতে পেয়েছি। এই ঢেউ যে ভারতের ভেতরেই সুনামী হয়ে উঠবে না তা হলফ করে বলা যায় না। শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৬, ভালো লাইফ স্টাইল এবং চিকিৎসা পেলে তিনি আরো বছর দশেক কমপক্ষে বাঁচতে পারেন। এই সময়টা যদি তিনি ভারতে থাকেন তাহলে তার অবস্থানের কারণেই ভারতের ভূখণ্ডে আন্দোলনের সুনামী না হলেও ছোটোখাটো টর্নেডো যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে। সুতরাং এতো বড়ো একটা বোঝা কেন ভারত তার ঘাড়ে নেবে, যখন সারা পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে?

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১, এই ছয় বছর ভারত তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল কারণ তখন তিনি ছিলেন সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত সরকার প্রধানের নিরীহ কন্যা। তখন তিনি ছিলেন ভারতের জন্য দুই কারণে সম্পদ। প্রথমত, নিহত সরকার প্রধানের আশ্রয়হীন কন্যাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ববাসীর সুনাম অর্জন করেছিল। দ্বিতীয়ত, তরুণ বয়সী হাসিনাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে পারলে এবং একদিন তাকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসাতে পারলে বাংলাদেশ থেকে কাঙ্খিত সুবিধা আদায় করতে পারবে। আজ ৭৬ বছরের ক্ষমতাচ্যুত খুনি ডিক্টেটর শেখ হাসিনা সকল দিক থেকেই ভারতের জন্য এক বিরাট বোঝা ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং ভারত যদি তাকে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সমর্থিত সরকারের হাতে তুলে দেয় এবং বাংলাদেশের মানুষকে সহযোগিতা করে তাকে বিচারের আওতায় আনার জন্য, তাহলে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ভারত অনেক বেশি লাভবান হবে। স্বৈরাচারের বিচারকার্যে সহযোগিতার জন্য পৃথিবীর কাছেও ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় এই মুহুর্তে নরেন্দ্র মোদির ভারত বড়ো একা। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভূটান, মালদ্বীপ কেউ তার পাশে নেই। পাকিস্তান তো চিরকালের শ্ত্রুই। একমাত্র বাংলাদেশই বন্ধু রাষ্ট্র ছিল, যে দেশ থেকে অফিশিয়ালি তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে, কেউ কেউ বলেন আন-অফিশিয়ালি বাংলাদেশ তাদের রেমিটেন্স সংগ্রহের প্রধান বাজার, সেই বন্ধু দেশটিকেও নিশ্চয় একজন খুনিকে আশ্রয় দিয়ে হারাবেন না।

লেখক: কাজী জহিরুল ইসলাম

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

নতুন সংবাদ

Recent Comments