জয় বাংলাদেশ : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের জিরিবাম জেলায় সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। আজ মঙ্গলবার ওই এলাকা থেকে দুই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ছয় ব্যক্তি। এর আগে গতকাল সোমবার ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অন্তত ১১ জন সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
মৃতদেহ উদ্ধার করা ওই দুই ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন লাইসরাম সিং (৬৩) ও মাইবাম সিং (৭১)। দুজনই মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য।
ধারণা করা হচ্ছে, গতকাল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ কুকি আদিবাসী নিহত হওয়ার জেরে আজ মঙ্গলবার মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। তবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে কি না, তা নির্দিষ্টভাবে এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল বন্দুকযুদ্ধের পর আজ জিরিবামে কারফিউ জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এক নির্দেশে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি, পাথর, তলোয়ারসহ ধারালো কোনো জিনিস বা এমন কোনো দেশি অস্ত্র, যা দিয়ে কাউকে আঘাত করা যায়, তা নিয়ে রাস্তায় বেরোনোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। জেলার পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে আজ দোকান-বাজার, গাড়ি—সবকিছু বন্ধ ছিল। পার্বত্য অঞ্চল আদিবাসী–অধ্যুষিত হওয়ার কারণে সেখানে আজ ধর্মঘট পালিত হয়।
লাইসরাম ও মাইবাম জাকুরাদরের শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা ছিলেন। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে যে জাতিগত হিংসা শুরু হয়েছে, তার জেরে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। নিহত ২৫০ জনের বেশি। লাইসরাম ও মাইবাম ছিলেন তেমনই এক শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা। আজ সকালে শিবিরে বাড়ির ভেতরে তাঁদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বন্দুকযুদ্ধের পর ওই শিবিরের অন্তত ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাধারণভাবে দিনের বেলায় শিবিরের মানুষ শিবিরের বেষ্টনীর বাইরে থাকেন। তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের জমিতে চাষবাস করতে যান। গতকাল যখন বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়, তখন শিবিরের অনেক মানুষ বাইরে ছিলেন।
পুলিশ জানায়, তাঁদের মধ্যে ছয়জন এখনো নিখোঁজ। এই ছয়জনের মধ্যে তিনজন নারী ও তিনটি শিশু।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউরেমবাম সঞ্জয় সিং গণমাধ্যমকে বলেন, ওই শিবিরে এ মুহূর্তে ১১৮ জন আশ্রয়প্রার্থী রয়েছেন।
পশ্চিম মণিপুরের জিরিবাম, মধ্য ও দক্ষিণ মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রবল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। জিরিবাম জেলায় এক নারীকে বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণ করে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারার ঘটনায় এ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ওই নারী জো জাতিগোষ্ঠীর। হামর, জোমি ও কুকি—এই তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে ‘জো’ বলে চিহ্নিত করা হয়।
মণিপুরে দেড় বছর ধরে প্রধানত ‘জো’ সম্প্রদায়ের সঙ্গে লড়াই চলছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের। মেইতেই উপজাতিভুক্ত নয়।
ওই ঘটনার জেরে শনিবার মধ্য মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় এক মেইতেই নারীকে গুলি করে হত্যা করে সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিরা।
গতকাল পুলিশের গুলিতে ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, মণিপুরে সহিংসতা আবার প্রবল আকার ধারণ করছে। এ ঘটনাকে এক দিনে পুলিশের গুলিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মারা যাওয়ার ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে মণিপুরের গণমাধ্যম।
ইতিমধ্যে ‘বিশ্ব কুকি-জো বুদ্ধিজীবী কাউন্সিল’ নামে উত্তর-পূর্ব ভারতের জাতিগোষ্ঠীর একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গতকাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, জঙ্গি বলে যাঁদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা জঙ্গি ছিলেন না। ছিলেন আদিবাসী সমাজের স্বেচ্ছাসেবক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘১১ কুকি-জো গ্রাম স্বেচ্ছাসেবকের জঘন্য ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে কাউন্সিল। এদের কারও কখনো সিআরপিএফের (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স) প্রতি কোনো ক্ষোভ বা ঘৃণা ছিল না। কিন্তু তাঁদের নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অর্থহীন এই সহিংসতা আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমরা ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে বেদনাহত।’