জওহরলাল নেহরুর আগে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৯৪০-৪৬)। এর আগে তিনি ১৯২৩ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি তার সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক জীবনের পুরো সময়ে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের ভিত্তিতে অখÐ ভারতের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতারাই শেষপর্যন্ত তার অখÐ ভারতের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভারতকে অখÐ না রাখার পক্ষে তাঁর কংগ্রেস সহকর্মীদের ভ‚মিকা তাঁকে মর্মাহত করে, যা তিনি ব্যক্ত করতে পারেননি তাঁর সহকর্মীরা কষ্ট পাবেন বলে।
কিন্তু মাওলানা আজাদ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, কৃষ্ণ মেনন কমিউনিজমের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু পদ লাভ করার লোভে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের হৃদয় জয় করার জন্য তিনি রাতারাতি প্রচÐ ব্রিটিশ অনুরাগীতে পরিণত হন। যিনি মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে তার সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তাকে প্রভাবিত করেছিলেন ভারত-বিভাগ পরিকল্পনা মেনে নিতে।
পাকিস্তানের খ্যাতিমান সাংবিধানিক আইনবিদ এবং ‘জিন্নাহ: অ্যা লাইফ’ নামে গ্রন্থ প্রণেতা ইয়াসির লতিফ হামদানি গত জানুয়ারি (২০২৪) মাসে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘ভারতের সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং স্বাধীনতা লাভের সময় মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ে একমাত্র মুসলিম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মুসলিম লীগ ভারতে মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী দল বলে যে দাবি করে আসছিল, তা মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই কংগ্রেস ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মাওলানা আজাদকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করেছিল। তাঁর রাজনৈতিক জীবন কায়দে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র সঙ্গে সমান্তরাল ছিল, কিন্তু উভয়ের গন্তব্য ছিল বিপরীত।’
জিন্নাহ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগদান করার মধ্য দিয়ে একজন কট্টর ভারতীয় জাতীয়তাবাদী হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেও এবং তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনাচরণে ইসলামী রীতিনীতির নিষ্ঠাবান অনুসরণকারী না হওয়া সত্তে¡ও পরবর্তীতে তিনি উপমহাদেশে মুসলিম স্বার্থের একচ্ছত্র নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অপরদিকে মাওলানা আজাদ খিলাফত কমিটিতে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়ে তুর্কি খিলাফত ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ভারতীয় মুসলমানদের স্বার্থের প্রতিভূ হিসেবে রাজনৈতিক ময়দানে পদচারণা শুরু করেন। খিলাফত আন্দোলনকে কংগ্রেসের সাথে সমন্বিত করার ক্ষেত্রে তাঁকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম মুখ্য নেতা হিসেবেও বিবেচনা করা শুরু হয়েছিল তখন থেকেই।
কংগ্রেসের সঙ্গে মাওলানা আজাদের মাখামাখিকে সুদৃষ্টিতে দেখেনি মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগাররা মাওলানা আজাদকে ‘কংগ্রেসের শো-বয়’ এবং ‘নামেমাত্র’ মুসলিম বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রæপ করতেন। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ যখন লাহোরে ঐতিহাসিক পাকিস্তান প্রস্তাব গ্রহণ করছিল, তখন লাহোর প্রস্তাবে বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্যারেডে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের ভ‚মিকা তাকে ১৯৪০ সালে কংগ্রেসের সভাপতি পদে আসীন হওয়ার পথ সুগম করেছিল।
তবে লক্ষ্যণীয় দিক হলো যে মাওলানা আজাদ যদিও অত্যন্ত অটলতার সঙ্গে জিন্নাহ ও তার দল মুসলিম লীগের প্রতিপক্ষ ছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁর ঘনিষ্ট মুসলিম সহকর্মীদেরও জিন্নাহ এবং লীগের বিরুদ্ধে উসকে দেননি বা প্রবল ভ‚মিকা রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেননি। তিনি সাধারণভাবে কংগ্রেসের নেতা হিসেবে এবং জাতীয়তাবাদী মুসলিম হিসেবে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন এবং ভারতের মুসলমানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ভারতকে অখণ্ড রাখা ও ব্রিটিশের হাত থেকে অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে। জিন্নাহ’র নেতৃত্বে মুসলিম লীগ মুসলমানদের পৃথক আবাসভ‚মি প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন করছিল, মাওলানা আজাদ সে আন্দোলনকে নিরুৎসাহিত করতে চেষ্টা করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এর পক্ষে অনেক প্রমাণ রয়েছে। এজন্য ভারত বিভাগ সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন এবং তিনি কাকে দায়ী করেছিলেন, তা বিবেচনা করা আবশ্যক।
ভারত বিভাগের জন্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ যে তিন ব্যক্তিকে দায়ী করেন, তারা ছিলেন জওহরলাল নেহরু, সরদার বল্লভভাই প্যাটেল এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ এর কিছু অংশ ১৯৫৮ সালে গ্রন্থটি যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন যোগ করা হয়নি। তিনি তার বিশ্বস্তদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার মৃত্যুর আগে সেই অংশ যাতে তার গ্রন্থে সংযোজন না করা হয়। অবশেষে তার রেখে যাওয়া অপ্রকাশিত অংশ তাঁর মৃত্যুর ৩০ বছর পর ১৯৮৮ সালে তার গ্রন্থে সংযোজন করা হয়। সংযোজিত অংশ থেকে সুষ্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব হয় যে, কেন তিনি ভারত বিভাগের জন্য মুখ্যত নেহরু, প্যাটেল ও মাউন্টব্যাটেনকে দায়ী করেছিলেন।
ভারত বিভাগ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘এখন এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে আমরা জিন্নাহ’র চেয়ে বেশি ভারত বিভাগের সমর্থকে পরিণত হতে যাচ্ছিলাম। আমি জওহরলালকে সতর্ক করেছিলাম যে, আমরা যদি দেশ-বিভাগে সম্মত হই তাহলে ইতিহাস আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না। চূড়ান্ত রায় দাঁড়াবে যে, মুসলিম লীগ ভারত বিভক্ত করেনি, বরং কংগ্রেসই ভারত বিভক্ত করেছে।’
মাওলানা আজাদের বক্তব্য সঠিক ছিল। ভারত বিভাগ করেছিল কংগ্রেস, মুসলিম লীগ নয়। মুসলিম লীগ কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, কিন্তু কংগ্রেস এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছিল। মাওলানা লিখেছেন, ‘এখন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল, যা ইতিহাসের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছিল। ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই জওহরলাল বোম্বেতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এক বিস্ময়কর বিবৃতি প্রদান করেন। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকে তাঁকে প্রশ্ন করেন যে, অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি (এআইসিসি) যে প্রস্তাব পাস করেছে, তাতে কংগ্রেস কি অন্তবর্তী সরকার গঠনসহ পরিকল্পনা পুরোপুরি গ্রহণ করেছে কিনা? উত্তরে জওহরলাল বলেন যে, ‘সমঝোতা অনুযায়ী কংগ্রেস সম্পূর্ণ নিরবিচ্ছিন্নভাবে গণপরিষদে যোগ দেবে এবং সেখানে উত্থাপিত সকল পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে কংগ্রেস সম্পূর্ণ স্বাধীন।’
‘সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান যে, এর অর্থ কি এটা যে কংগ্রেস কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা পরিবর্তিত হতে পারে? জওহরলাল সুনির্দিষ্টভাবে উত্তর দেন যে, কংগ্রেস শুধু গণপরিষদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে এবং গণপরিষদ যেভাবে ভালো বিবেচনা করে সেভাবে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে স্বাধীন সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করবে।
‘মুসলিম লীগ কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল চাপের মুখে। স্বাভাবিকভাবেই জিন্নাহ এ ব্যাপারে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি মুসলিম লীগ কাউন্সিলে সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, তিনি কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন, কারণ, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগণ এই বলে তার সুপারিশের সমালোচনা শুরু করেন যে, তিনি ভালো কিছু আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ ‘জওহরলালের ঘোষণা জিন্নাহ’র কাছে বোমা বিস্ফোরণের মতো মনে হয়। তিনি বিলম্ব না করে একটি বিবৃতি দান করেন যে, কংগ্রেস সভাপতির এই ঘোষণার ফলে সমগ্র পরিস্থিতি পুনরায় যাচাই করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অতএব লিয়াকত আলী খানকে বলেন মুসলিম লীগ কাউন্সিলের একটি সভা আহবান করতে এবং এই মর্মে একটি বিবৃতি দেন।
‘দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ কাউন্সিল কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, কারণ এই পরিকল্পনায় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, কংগ্রেসও এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং এই পরিকল্পনাই হবে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানের ভিত্তি। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি যেহেতু ঘোষণা করে বসেছেন যে, গণপরিষদে সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কংগ্রেস কেবিনেট মিশন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে পারে, অতএব এর অর্থ দাঁড়ায় যে, সংখ্যালঘুদের সংখ্যাগরিষ্ঠের কৃপার পাত্রে পরিণত করা হবে।’
অখণ্ড ভারতের ব্যাপারে মাওলানা আজাদ যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন তাতে তিনি প্রায় পুরোপুরি সঠিক ছিলেন। উপমহাদেশে সাংবিধানিক ক্রমবিবর্তনের ধারা সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন তাদের পক্ষে এটা উপলব্ধি করা সহজ যে যে, জিন্নাহ’র চূড়ান্ত দাবি, যা ছিল একটি সার্বভৌম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, কংগ্রেস সভাপতির ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সেই দাবিকেও কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এর অর্থ ছিল ভারত হবে একটি কনফেডারেশন, যার একটি অংশ হবে পাকিস্তান অথবা ভিন্নভাবে বলা যায়, পাকিস্তান ও অবশিষ্ট ভারতের মধ্যে একটি চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক। কোনোভাবেই পৃথক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নয়।
জিন্নাহ’র কাছে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা ছিল একটি আদর্শ সমাধান। তাঁর এ পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর সর্বোচ্চ দাবি ছেড়ে দেওয়ার জন্যও প্রায় প্রস্তুত ছিলেন। আসলে পুরো ব্যাপারটি শুরু হয়েছিল অনেক আগে, ১৯৩৭ সালে।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন, ‘জওহরলাল আমার প্রিয় বন্ধুদের অন্যতম এবং ভারতের জাতীয় জীবনে তাঁর অবদান অন্য কারো সঙ্গে তুলনীয় নয়। তা সত্তে¡ও আমি দুঃখের সাথে বলতে চাই যে, তাঁর দ্বারা জাতীয় স্বার্থের চরম ক্ষতি সাধনের ঘটনা এটাই প্রথম ছিল না। ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের অধীনে ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনের সময়েও তিনি প্রায় একই ধরনের ভুল করেছিলেন। সেই নির্বাচনে বোম্বে এবং ইউপি ছাড়া সারা দেশে মুসলিম লীগের বড় ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছিল…।
‘ওই সময়ে ইউপি’তে মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন চৌধুরী খালিকুজ্জামান এবং নওয়াব ইসমাইল খান। আমি সরকার গঠন করার জন্য লখনউ গিয়ে তাদের দু’জনের সঙ্গেই আলোচনা করি। তারা আমাকে আশ্বাস দেন যে, তারা শুধু কংগ্রেসকে সহযোগিতাই করবেন না, বরং তারা কংগ্রেসের কর্মসূচিও পুরোপুরি সমর্থন করবেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা আশা করেছিলেন যে, নতুন সরকারে মুসলিম লীগের কিছু অংশীদারিত্ব থাকবে। স্থানীয় পরিস্থিতি এমন ছিল যে, তাদের দু’জনের মধ্যে কেউই একা সরকারে যোগ দিতে পারবেন না। হয় তাদের দু’জনকেই সরকারে নিতে হবে, অথবা একজনকেও নয়। অতএব, আমি আশা করেছিলাম যে, তাদের দু’জনকেই সরকারে নেওয়া হবে… এবং আমি সেখান থেকে পাটনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই, কারণ বিহারে মন্ত্রীসভা গঠনের ব্যাপারে আমার উপস্থিতির আবশ্যকতা ছিল। কিছুদিন পর আমি এলাহাবাদে ফিরে আসি এবং একথা জেনে অত্যন্ত দুঃখবোধ করি যে, জওহরলাল চৌধুরী খালিকুজ্জামান এবং নওয়াব ইসমাইল খানকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, তাদের মধ্য থেকে কেবল একজনকে মন্ত্রীসভায় নেওয়া যেতে পারে। তিনি আরো বলেছেন যে, মুসলিম লীগকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যে, কে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। কিন্তু আমি ওপরে যা উল্লেখ করেছি, সেই প্রেক্ষাপটে তাদের দু’জনের মধ্যে কেউ একা মন্ত্রীসভায় যোগদান করার অবস্থায় ছিলেন না। অতএব তারা দুঃখপ্রকাশ করে জানান যে, তাদের পক্ষে জওহরলালের প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটি ঘটনা ছিল। কংগ্রেস যদি মুসলিম লীগের সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ করতো, তাহলে মুসলিম লীগ বাস্তব কারণের কংগ্রেসের সঙ্গে এক হয়ে থাকতো। জওহরলালের পদক্ষেপ ইউপি’তে মুসলিম লীগকে নতুন জীবন দান করে। যারা ভারতীয় রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন, তারা সকলে অবহিত যে, মুসলিম লীগ ইউপি থেকে মুসলিম লীগ নিজেদের সুসংগঠিত করার সুযোগ পায়।’
নেহরু সম্পর্কে মাওলানা আজাদ তাঁর গ্রন্থে একটি চাঞ্চল্যকর বক্তব্য দিয়েছেন, ‘যারা আমাদের প্রশংসা করেন, আমরা সকলেই তাদের পছন্দ করি। কিন্তু জওহরলাল সম্ভবত তাঁর প্রশংসাকারীদের অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই পছন্দ করতেন।’
মাওলানা আজাদ বিশ্বাস করতেন যে, কৃষ্ণ মেনন তার ব্রিটিশপন্থী প্রবণতার সাহায্য নিয়ে মাউন্টব্যাটেনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং মাউন্টব্যাটেন নেহরুর ওপর তাঁর প্রভাব খাটান ভারত-বিভাগ মেনে নিতে।
আজাদ এ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘যখন অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হয়, তখন জওহরলাল কৃষ্ণ মেননকে লন্ডনে ভারতের হাইকমিশনার নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লর্ড ওয়াভেল এতে রাজি হননি। ব্রিটিশ সরকারও কৃষ্ণ মেননের নিয়োগ যথাযথ হবে না বলে পরামর্শ দেয়। এর কিছুদিন পরই লর্ড ওয়াভেল ভারত ত্যাগ করেন এবং কৃষ্ণ মেনন লন্ডন থেকে ভারতে আসেন। তিনি জওহরলালের সঙ্গে অবস্থান করেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, কৃষ্ণ মেননের প্রতি জওহরলালের দুর্বলতা রয়েছে এবং তার মাধ্যমে তিনি জওহরলালকে প্রভাবিত করতে পারবেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেন মেননের পৃষ্ঠপোষকতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে বেশ ক’বার ভাইসরয়ের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান। কমিউনিজমের প্রতি ঝোঁক ছিল কৃষ্ণ মেননের। কিন্তু তিনি যখন দেখতে পান যে লর্ড মাউন্টব্যাটেন তার প্রতি বন্ধুভাবপন্ন এবং তাকে একটি পদে আসীন করার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারবেন, তখন তিনি রাতারাতি ব্রিটিশপন্থী হয়ে যান। তিনি ব্রিটিশের প্রতি তার বন্ধুসুলভ অনুভ‚তির প্রকাশ ঘটিয়ে মাউন্টব্যাটেনের মন জয় করতে সক্ষম হন।
‘অন্যদিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন মনে করেন যে, তাঁর ভারত-বিভাগ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে জওহরলালকে সম্মত করানোর ব্যাপারে কৃষ্ণ মেননকে সফলতার সঙ্গে কাজে লাগানো যেতে পারে। এটা আমার বিশ্বাস যে, এই প্রশ্নে জওহরলালের মনে মেনন প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। এর অল্প কিছুদিন পরই যখন আমি জানতে পারি যে, জওহরলাল যদি মেননকে লন্ডনে ভারতের হাই কমিশনার নিয়োগ করতে চান, তাহলে লর্ড মাউন্টব্যাটেন তাকে সমর্থন করবেন, তখন আমি অবাক হইনি।’
মাউন্টব্যাটেন তার পরবর্তী জীবনে ভারত-বিভাগ ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভয়াবহতার জন্য সরাসরি জিন্নাহ ও মুসলিম লীগকে দোষারূপ করলেও মাওলানা আজাদের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্টভাবে মাউন্টব্যাটেনের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত ছিল। তিনি লিখেছেন, ‘লর্ড মাউন্টব্যাটেন পরিস্থিতি পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেন। সদস্যদের মতানৈক্যের কারণে তিনি ধীরে ধীরে ও ক্রমান্বয়ে পূর্ণ ক্ষমতা হাতে নেন। তখনো তিনি সাংবিধানিক গভর্নর জেনারেল ধরনের সরকার ব্যবস্থা ধরে রেখেছিলেন, কিন্তু কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ শুরু করেও বাস্তবে তিনি নিজের পথেই ছিলেন। এছাড়া তিনি রাজনৈতিক সমস্যার একটি নতুন দিক নির্দেশনা দিতে শুরু করেন এবং কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়কে পাকিস্তানের অনিবার্যতা সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করেন। তিনি পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন এবং তাঁর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের কংগ্রেস সদস্যদের মনে এই ধারণার বীজ বপন করেন…।
‘তিনি ইতিহাসে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে স্মরণীয় হতে চেয়েছিলেন, যিনি ভারতের সমস্যার সমাধান করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, যদি সমাধানটি তাঁর উদ্ভাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়, তাহলে তিনি আরো কৃতিত্বের অধিকারী হতে পারবেন। আমার মনে হয়, এই পরিবর্তনের জন্য দেশ-বিভাগ সম্পর্কে নেহরুর দৃষ্টিভঙ্গি একটি বিষয় দায়ী ছিল, তা হচ্ছে লেডি মাউন্টব্যাটেনের ব্যক্তিত্ব।
‘লর্ড মাউন্টব্যাটেন আমাকে ধারণা দিয়েছিলেন যে, ভারত-বিভাগ সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো চিত্র নিয়ে তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন না, এবং তিনি কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা পুরোপুরি বাতিলও করছেন না। পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাকে আমার ধারণা পরিবর্তনে বাধ্য করে। এরপর তিনি যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন, তা আমাকে নিশ্চিত করে যে, তিনি ইতোমধ্যে মনস্থির করে ফেলেছিলেন এবং দেশ বিভাগ সম্পর্কে তার পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য ব্রিটিশ কেবিনেট রাজি করানোর জন্য তিনি লন্ডন যাচ্ছেন।’
ভারত-বিভাগের জন্য শেষ যে ব্যক্তিটিকে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ অভিযুক্ত করেন, তিনি সরদার বল্লভভাই প্যাটেল। তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিস্মিত হই যে, এখন প্যাটেল এমনকি জিন্নাহ’র চেয়েও দ্বি-জাতি তত্তে¡র বড় সমর্থক। জিন্নাহ দেশ-বিভাগের পতাকা তুলে ধরতে পারেন, কিন্তু এখন আসল পতাকা বহনকারী হচ্ছেন বল্লভভাই প্যাটেল। এমনকি দৃশ্যপটে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের আবির্ভাবের আগেই সরদার প্যাটেল দেশ-বিভাগের পঞ্চাশ শতাংশ অনুক‚লে ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার পক্ষে মুসলিম লীগের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। তিনি যদি কেবল মুসলিম লীগ থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারেন, তাহলে তিনি ভারতের একটি অংশগ্রহণ করার জন্যও প্রস্তুত ছিলেন। একথা বলা হয়তো ভুল হবে না যে, বল্লভভাই প্যাটেলই ছিলেন ভারত-বিভাগের মূল উদ্যোক্তা…। এখন এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যেখানে আমরা দেশ-ভাগের ব্যাপারে আমরা জিন্নাহ’র চেয়েও বড় সমর্থক হয়ে উঠছি।’
জিন্নাহর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির মাঝেও এর প্রমাণ যায়। ভারত-বিভাগের পর জিন্নাহ করাচিতে ওই সময়ের তরুণ সিন্ধি নেতা হাশু কেওয়াল রামানিকে বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই এই জঘন্য দেশ-ভাগ চাইনি! এটা সরদার প্যাটেল আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখন তারা চায় যে, আমি সামান্য পিঠা খেয়ে পরাজয় স্বীকার করার ভঙ্গিতে আমার হাত ওপরে তুলে ধরি।’
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, যিনি অখণ্ড ভারত এবং সেই ভারতে হিন্দু ও মুসলমানদের এক মায়ের দুই সন্তানের মতো বসবাস করার পক্ষে মুসলমানদের সারাজীবন নসিহত করেছেন, যাকে জিন্নাহ ও তার দল মুসলিম লীগের সকল পর্যায় থেকে ‘কংগ্রেসের শো-বয়’ কটাক্ষ করা হয়েছে, যিনি জওহরলাল নেহরুর আগে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি ভারত-বিভাগের জন্য জিন্নাহকে দায়ী করেননি, দায়ী করেছেন জওহরলাল নেহরু, সরদার বল্লভভাই প্যাটেল ও লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে।
এই দোষারূপ তিনি লিখিত আকারেই করে গেছেন তার জীবদ্দশায়। কিন্তু কংগ্রেসে তাঁর বন্ধুরা যাতে তাঁর সত্য প্রকাশের কারণে মনোকষ্ট ভোগ না করেন, সেজন্য তাঁর আত্মজীবনীর ৩০টি বিস্ফোরক পৃষ্ঠা আত্মজীবনীতে সংযোজন না করে তার মৃত্যুর ৩০ বছর পর রেখে যাওয়া অংশটুকু আত্মজীবনীতে সংযোজন করার অসিয়ত করে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় তাঁর জুনিয়র হুমায়ুন কবীরকে, যিনি মাওলানা আজাদের উর্দু বক্তব্যের নোট নিতেন এবং তা ইংরেজিতে অনুবাদ করে মাওলানাকে দেখাতেন। তিনি তাকে বলেন অপ্রকাশিত ৩০ পৃষ্ঠা ভারতের জাতীয় মহাফেজখানা (ন্যাশনাল আর্কাইভ) এবং ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বাক্সবন্দি করে রাখার জন্য। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুর ৩০ বছর পর ১৯৮৮ সালে পৃষ্ঠাগুলো ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ গ্রন্থে সংযোজিত হয়ে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে তাঁর ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহকর্মীরা মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আত্মজীবনীতে অপ্রকাশিত ৩০ পৃষ্ঠা সংযোজিত হওয়ার আগে এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল এবং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। (এর ওপর পরবর্তীতে কখনো আলোকপাত করবো বলে আশা করি।)
কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা মাওলানা আজাদের আত্মজীবনীর সংযোজিত অংশ নিয়ে খুশি হতে পারেননি। কারণ পাকিস্তানের ¯্রষ্টা ও পাকিস্তানি জাতির পিতা জিন্নাহ পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার একবছর পরই মারা যান এবং তিনি কোনো আত্মজীবনীও লিখে যাননি। অতএব, পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরা তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে গেছেন যে কবি আল্লামা ইকবাল পাকিস্তানের ধারণা দিয়েছিলেন, যে কারণে তাঁকে পাকিস্তানের ‘স্বপ্নদ্রষ্টা কবি’ বলা হয় এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এককভাবে কবি ইকবালের ধারণাকেই বাস্তবায়ন করেছেন, করেছিলেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে, কবি ইকবাল অথবা জিন্নাহ কেউই ভারতের বাইরে তাদের পাকিস্তান কল্পনা করেননি। ইকবাল সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি পাকিস্তানের যে পরিকল্পনা দিয়েছেন তার অর্থ ভারতের মধ্যে একটি বৃহৎ রাষ্ট্র।
জিন্নাহ কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়টিকে কেবল ওইসব বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, যারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তি প্রদর্শন করে আসছেন যে, জিন্নাহ ভারত-বিভাগের বলিষ্ঠ ও আপসহীন প্রবক্তা ছিলেন। জিন্নাহ’র কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন এবং তাঁর অগ্রাধিকারগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি শেষ পর্যন্ত একটি সা¤প্রদায়িক সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক নিস্পত্তির ব্যাপারেই প্রতিশ্রæতিবদ্ধ ছিলেন। তাছাড়া জিন্নাহকে উপমহাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রাজনীতিবিদ যাকে ‘হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সেরা দূত’ অভিহিত করা হয়েছে।
ইয়াসির হামদানি তার ‘জিন্নাহ: অ্যা লাইফ’ গ্রন্থে আরো উল্লেখ করেছেন যে, একটি পর্যায়ে জিন্নাহ এমনকি একথাও বলেছেন, ‘আমি প্রথমত ভারতীয়, দ্বিতীয়ত একজন ভারতীয় এবং শেষপর্যন্ত আমি একজন ভারতীয়।’ পাকিস্তানি ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী রূপকথাতূল্য কাহিনিতে যিনি ‘হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দূত’ ছিলেন, তাকে সহসা একজন একগুঁয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীতে পরিণত করা হয়েছিল, যা তিনি ছিলেন না। মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিবরণ এই সত্যের একটি স্পষ্ট স্বীকারোক্তি যে, ‘মুসলিম লীগ নয়, ভারত ভেঙেছে কংগ্রেস।’
মাওলানা আবুল কালাম আজাদের আত্মজীবনী ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ পরিপূর্ণ সংস্করণে ভারত বিভাগের ওপর কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের, বিশেষ করে নেহরু ও প্যাটেলের মনোভাবের মূল সুর ও চেতনা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি ভারত ও পাকিস্তানের বেছে নেওয়া কঠিন পথ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ৭৬ বছর আগে উপমহাদেশকে দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত করে বিদায় নেওয়ার পরো উভয় দেশের পারস্পরিক অবিশ্বাস, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো, একে অপরকে হুমকি প্রদান এবং দুই দেশের মধ্যে সার্বক্ষণিক যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করার পরিস্থিতি থেকে উপলব্ধি করা যেতে পারে যে, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অমূলক ছিল না। ভারত-বিভাগ নিয়ে ইতিহাসে পক্ষপাতহীন ও বিভ্রান্তিমুক্ত কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তা সত্তে¡ও আমাদের দেশের রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা কিছুটা বিভ্রান্তমুক্ত হতে চাইলে ভারতের অন্যতম শীর্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আজাদের আত্মজীবনী ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ পাঠ করতে পারেন।
লেখক: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু