ইসরায়েলি পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা, যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যেই পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় পবিত্র মাসের উৎসব মুখর পরিবেশ ছাপিয়ে ফিলিস্তিনিদের মুখে এখন আতঙ্কের ছাপ।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের ওল্ড সিটির সরু রাস্তার চারপাশে হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখানে অবস্থিত ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদ। মসজিদটিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার উপাসক জড়ো হন।
একই সঙ্গে এলাকাটি ইহুদিদের কাছেও পবিত্রতম। তারা এটিকে টেম্পল মাউন্ট বলে ডাকে। পবিত্র এই স্থানটি ঘিরেই দুই অঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘর্ষ। আল-আকসা ঘিরে ২০২১ সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাঁধে।
তখনকার ১০ দিনের সংঘাত বর্তমান যুদ্ধের ভয়াবহতার কাছে চাপা পড়েছে। চলমান যুদ্ধের এখন প্রায় ৬ মাস। গাজায় ইসরায়েলের নিরলস অভিযান সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান শঙ্কা তৈরি করেছে। কারণ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে নিহতের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
গত মাসে ইসরায়েলের কঠোর ডানপন্থী নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির বলেছিলেন, তিনি আল আকসায় মুসলিমদের ওপর বিধিনিষেধ চান। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, মুসল্লিদের সংখ্যা গত বছরের মতোই হবে।
আল আকসার তত্ত্বাবধানকারী ধর্মীয় ফাউন্ডেশন জেরুজালেম ওয়াকফের মহাপরিচালক আজাম আল-খতিব বলেছেন, ‘এটি আমাদের মসজিদ এবং আমাদের অবশ্যই এর যত্ন নিতে হবে। আমাদের অবশ্যই এই মসজিদে মুসলমানদের উপস্থিতি রক্ষা করতে হবে যেন সকলে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরাপদে প্রবেশ করতে পারে।’
কিন্তু আগের রমজানগুলোর তুলনায় ওল্ড সিটির চারপাশে স্বাভাবিক সাজসজ্জা করা হয়নি। অধিকৃত পশ্চিম তীরের শহরগুলোতেও একই রকম শোকাবহ পরিবেশ ছিল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী বা ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ওল্ড সিটির সম্প্রদায়ের নেতা আম্মার সাইডার বলেছেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ বছর জেরুজালেমের ওল্ড সিটি আমাদের শিশুদের, প্রবীণদের এবং শহীদদের রক্তের সম্মানের জন্য সজ্জিত করা হবে না।’
পুলিশ বলেছে, তারা শান্তিপূর্ণ রমজান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে এবং সামাজিক মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলোতে উস্কানিমূলক ও বিকৃত তথ্য বন্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেওয়ার সন্দেহে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করার কথাও তারা জানিয়েছে।
গত বছর রমজানে মসজিদ প্রাঙ্গণে পুলিশ প্রবেশ করার সময় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ঘটনায় আরব লীগের পাশাপাশি সৌদি আরবও নিন্দা জানিয়েছিল।